Wednesday, February 27, 2019

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

শেষরাতে হানা দেয় বোমারু বিমান
প্রতিশোধস্পৃহা আছে মনে
ভাইয়ের রক্ত সফল করতেই হবে
প্রতিশোধের আগুনে


মায়ের কান্না বা প্রিয়ার যন্ত্রনা
অবুঝ শিশুকেও বোঝানো যায়না
কেন তার আপনার জন
আর কখনোই ফিরে আসবেনা


ক্রোধের আগুন শুধু ধিকধিক জ্বলে
একসাথে চৌদ্দটি সাঁঝবাতির আগুন
নিমেষে ধ্বংস করে গুপ্ত ঘাটি
চূড়ান্ত সফল হয় গুপ্ত অভিযান


দেশ হাসে দশ হাসে উপযুক্ত জবাব
বীর সেনাদের নির্ভীক দক্ষতা
দেশজুড়ে চলেছিল দিওয়ালি উৎসব
পেয়েছে অবশেষে প্রতিশোধের বার্তা ।

Monday, February 25, 2019

শুধু তুমি

শুধু তুমি

নিষ্পাপ শিশুর মুখে
যখন চেয়ে দেখি ,
কোন এক পবিত্রতা
আমায় আকুল করে ।

তোমার মুখের দিকে 
যখন চেয়ে দেখি ,
শরতের আকাশের কথা 
মনে পড়ে ।

শরতের শিশিরভেজা ঘাসে
পা ডুবিয়ে যখন
দূরের ঐ নদীটার দিকে তাকাই ,
কোন এক দূরদেশের স্মৃতি
মনে ব্যথা জাগায় ।

কলকল ছলছল টলমল জল
আকাশের রঙ চুরি করে
হাসছে খলখল ,
খুব ইচ্ছে করে ---

একবার স্পর্শ করি তোমায় ।
সদ্য ফোটা গোলাপ কুঁড়ির
মিষ্টি আঘ্রাণে
তোমার গায়ের গন্ধ
বয়ে আনে শান্তির নিঃস্তব্ধতা ।

Sunday, February 24, 2019

সংশয়

সংশয়

ছুটে বেড়াচ্ছি নাতো
কোনো মরীচিকার পিছনে
আকন্ঠ মরুতৃষ্ণা বুকে নিয়ে
তৃষ্ণার্ত প্রাণ আমার---
ভালবাসার বৃষ্টি চাই
একটুকু ছায়া
একটু সস্নেহ স্পর্শ
মরুদ্যান হবে কি আমার জীবনে
না কি -----
মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়াব
আজন্মকাল ধরে
তৃষ্ণার্ত পথিক আমি ...

Friday, February 22, 2019

এ কেমন বসন্ত

বসন্ত নাকি এসে গেছে কচি পাতায় ফুলে !
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে রূপসাগরের কূলে !
মউল ফুলের নেশায় মেতেছে ভ্রমর-ভ্রমরী !
বাতাসে নাকি বইছে প্রেম মানবরূপ ধরে !

আমার বসন্তে আসে না এসব কুঞ্জফুলের শোভা
আমার বসন্তে অরূপরতন পায়না মনোলোভা
আমার বসন্ত গুমরে কাঁদে বরফ- কঠিন রাত
আমার বসন্ত পায়না কোথাও প্রেম জাগানিয়া রাত
আমার বসন্তে পলাশ ফোটেনা , ফোটেনা অশোক-শিমূল
আমার বসন্তে শুধুই বসন্ত গুটি বাঁধে শতমূল
আমার বসন্তে বাতাস রুক্ষ , আকাশে দাবদাহ
আমার বসন্তে সংসার নয় শান্তিসুখের গৃহ
আমার বসন্তে কোকিল ডাকেনা , কোথায় পালিয়ে যায়
আমার বসন্ত পথশিশুদের ক্ষুধার্ত কান্নায়
আমার বসন্ত অনাহারে আর নীরব অসহায়তায়
আমার বসন্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে গোলাগুলিতে কেটে যায়
আমার বসন্ত একমুঠো চালে , একটা পোড়া রুটি
পেটের আগুন লাফিয়ে চলে , বর্ষা গুটি গুটি
আমার বসন্তে রাত পেড়োলেই একরাশ চিন্তা
আমার বসন্তে নুন আনতে ফুরোয় যে পান্তা

আমার বসন্ত টাট্টু হোকনা , হোক দুর্বার গতি
আমিও হব বড়ো বাড়িটার রঙীন প্রজাপতি ।

Monday, February 18, 2019

বসন্তে তাজমহল

জানালায় হেলানো মাথা
শুনছি কোকিলের ব্যাকুল স্বর
রসের উৎস্রোতে আকাঙ্ক্ষার তীব্র ফোটাটি
কখন গড়িয়ে পড়ে , কাঁদে মন
শুষ্কতার উচাটনে রুক্ষতর হৃদয়
নবপল্লব উন্মুখ , দৃঢ় প্রত্যয়
কূজনে শুনছি বসে কবেকার ডাক
বেদনার ইতিবৃত্তে তাজ চিরন্তন

Thursday, February 14, 2019

এখানে এখন

এখানে বৃষ্টি পড়ে সকাল থেকে ভোর
এখানে চোখের কোনেও জল চিকচিক করে
এখানে বাতাস তবু স্তব্ধ হয়ে রয়
অজানা সেই শ্রাবণ গগন ঘিরে ।

এখানে শূণ্য হাতে পড়ে থাকে বেলা
সবুজ ঘাস মুহূর্তে বিবর্ণ হয়
এখানে বৃষ্টি পড়ে তবু শ্রাবণ মাস
জলের ধারায় অ্যাসিড ছড়িয়ে যায় ।

এখানে শরীরগুলি শুধুই ছোপময়
সরু সরু লিকলিকে হাত পা
এখানে ক্লান্ত পায়ে সূর্য নামে পাটে
শুষ্ক কঠিন জীর্ণ আদুল গা ।

এখানে একমুঠো ভাত একটু রুটি
স্বপ্ন অনেক টাকা
এখানে কাপড় কোথায় পাবে
লজ্জাটুকু কোনোরকমে ঢাকা ।

Tuesday, February 12, 2019

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

সেদিন ছিল আমার ঠাকুরমার আদ্যশ্রাদ্ধ । দু'দিন ধরেই অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে ।

সেদিনটা রোদ না উঠলেও আকাশ মেঘলা করে ছিল ।আদ্যশ্রাদ্ধ সমাপন শেষে বাবা পুকুরপারের নিয়মকানুন শেষ করে স্নান সেরে যেইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন , অমনি শুরু হল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি । তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া । একে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ , তার ওপর বাড়িতে সদ্য একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । স্বভাবতই পরিবেশটা একটু ছমছমে হয়ে আছে । আত্মীয়-স্বজন যারা এসেছিল , তাদের মধ্যে দু'চারজন থেকে বাকি সকলেই বাড়ি ফিরে গেছেন । তাই বাড়িটাও মোটামুটি ফাঁকা । কয়েকদিনের ধকলে বাবা-মায়ের শরীরটা এমনিতেই অবসন্ন । আর আজ আমরাও ক্লান্ত । @ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই শুয়ে পড়তে চাইল । আমার এক পিসি ছিল অন্তঃসত্বা । তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কাছকাছি হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিতও ছিল । সেরাতে পিসিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে আমরা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনেরা শুয়েছিলাম একটাই ঘরে । সত্যি কথা বলতে কি এই পরিবেশে একা ঘরে থাকার সাহস কারো ছিল না ।


আলো নিভানের পর কিছুক্ষণ আমরা টুকটাক গল্পগাছা করে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল আমার হাতের কব্জিতে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে । আমার পিসতুতো দিদি খুব জোরে আমার হাতটা চেপে ধরে আছে । আমি ওর দিকে তাকালাম । দেখি ও চোখগুলোও চেপে বন্ধ করে আছে । দিদিকে ঠেলা দিতেই সে সভয়ে ' রাম রাম ' জপতে শুরু করেছে । @ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।উঠে লাইট জ্বালালাম । দিদি তাকিয়ে একবার চারদিক দেখল । বিশেষ করে জানালার দিকটা । দেখলাম জানালা বন্ধ আছে । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ' কিসের যেন শব্দ হচ্ছিল । ' ' কই আমি তো কিছু শুনিনি । তুই ভুল শুনেছিস । ' বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে লাইট অফ করে আমি শুয়ে পড়লাম ।

ঘন্টাখানেক বোধহয় হয়নি আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম । সঙ্গে মায়েরও । তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম । পিসির প্রসববেদনা উঠেছে । @ এত রাতে । ভাগ্যিস হাসপাতালটা কাছেই আছে । বাবা আমাদের বাড়িতে থাকা দু'জন কর্মচারিকে ডেকে পিসি আর মাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে । কখন ফিরবে ঠিক নেই । তাই আমি দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে তখন 2-30 ।

বিছানায় শুয়ে ঘুম আর আসেনা । একে পিসির জন্য চিন্তা হচ্ছে , তার ওপর বাড়িতে বড়ো মানুষ বলতে আমার পিসতুতো দিদি , যে কিনা কিছুক্ষণ আগে রামনাম জপতে শুরু করেছিল । এপাশ - ওপাশ করছি । ঘুম আসছে না । দিদিরও দেখি একই অবস্থা । হঠাৎ জানালার দিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হল । কিছু বুঝতে পারলাম না । দিদির দিকে তাকালাম । দিদিও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু বোঝার আগেই শব্দটা বাড়তে লাগল । মনে হল কেউ জানালার ওপাশ থেকে কিছু দিয়ে জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে । শব্দটা ক্রমে বেড়ে চলেছে । @ উঠে যে লাইটটা জ্বালাব সে সাহস হচ্ছে না । দুই বোনে দুজন দুজনকে জাপটে ধরে যেন সাহস সঞ্চয় করছি । বারবার মনে হচ্ছে মৃত ঠাকুমার কথা । দিদির মত আমিও ' রাম রাম ' করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ।

ঘুম ভাঙল প্রবল ধাক্কায় । তাকিয়ে দেখি দিদি হাসি হাসি মুখ করে হাতদুটো পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । জিজ্ঞাসা করলাম , ' কি হয়েছে ' । হাসতে হাসতে বলল , ' পিসির ছেলে হয়েছে । ' তারপর মিটিমিটি হেসে বলল , ' আরো একটা খবর আছে । ' আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই পিছনের হাতদুটো সামনে এনে বলল , ' এই যে নারকেল । ' অবাক হয়ে দেখলাম নাড়কেলের মালাগুলো । কেউ এমনভাবে এগুলো খেয়েছে যে সেগুলো আর আমাদের খাবার পরিস্থিতি নেই । মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা । দিদি বলল , ' মামী কাল রাতে জানালার কাছে আধঢাকা করে এগুলো রেখেছিল । আর রাতভোর ইঁদুরবাবাজি দলবেঁধে মোচ্ছব করেছে । আর আমরা সারারাত রামনাম জপ করেছি । ' @  

কিছুটা ওর বলার ধরনে আর কিছুটা আমাদের নির্বুদ্ধিতায় দুজনেই হেসে ফেললাম ।

Friday, February 8, 2019

সায়াহ্নে

সায়াহ্নে

মুঠো মুঠো ধান ছড়িয়ে দু'হাতে
এখন , সন্ধ্যাকালে
বসে ভাবি ----
জীবনের শেষ সম্বল
দিয়েছি বিলিয়ে , এখন
আমি কি নিয়ে থাকি ।

যা দিয়েছি তা
ফেরৎ না পাই
এখন , অকাল বসন্ত সময়
প্রতিদান কিছু চাইনি যে তাই
কাটে না অবসর ।

শুধু যা দিয়েছি
আছে জানি জমে
কোথাও , কোনো রত্নভান্ডারে ---
সুদাসলে একদিন
পাবই ফেরৎ
এই আশা থাক মনে ।

Wednesday, February 6, 2019

উদ্বোধন

উদ্বোধন

বৃষ্টির প্রথম ফোটা

যেদিন প্রথম পড়েছিল কপালে আমার
ভেবেছিলাম জন্মান্তর হল ---


নবজন্ম লাভ !

এ কেমন জন্ম যদি মরণই প্রিয়

গোলাপের কাঁটায় বেঁধা শালিকের প্রাণ
নেই চেঁচামেচি হাকডাক , শান্ত নির্জন



অখন্ড শান্তি আমার হৃদয় খুঁড়ে খায়


এ বেদনা তারাখসার ম্লান আলোয়
সেই বোঝে , যাকে মূল ছিঁড়তে হয়


চশমার নীচে দুটো বাষ্পময় চোখ

শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসে নিকোটিনের ধোয়ায়
আরো পোড়ে ক্ষয় হয় খাঁচার ফুসফুস
তবু সচল অনর্গল সংবহন হয় ।

Sunday, February 3, 2019

নীলিমা

নীলিমা

মনে পড়ে ম্লান মুখ তার
দু'চোখে বৃষ্টি অঝোর ধারায়
কান পেতে শুনি তার ভাষা
বুক নিঙারিয়া সুর

অজানা ভয়ে গুমরে ওঠে মন
কোন দেশে আছে প্রিয়জন
মনচোরা সেই অপার রহস্য ঘিরে

আবার জেগে উঠি সৃষ্টির কিনারায়
সুর হাসে , সুর ভাসে , সুর কেঁদে যায়

আকাশের নীল এসে কখন
মিশে যায় আমার কবিতায় ।

Saturday, February 2, 2019

দিশাহারা

দিশাহারা

দূরে বহুদূরে ---
ধোঁয়াশায় মিশে আছে
একফালি আকাশ
আমার মনের মতো


সৃষ্টির প্রয়াস
ঝাপসা আজ


টুকরো টুকরো মেঘ
উড়ে চলে নিরুদ্দেশে

অজানা পথ

খরনদী ভেসে যায়
সময় অকুলান


আমার আকাশজুড়ে
সৃষ্টির হাহাকার শোনা যায় ।

Sunday, January 27, 2019

মুখোশ মানুষ

মুখোশ মানুষ

তোমাকে চিনেছি , বন্ধু ---
মুখোশে মুখোশ - মানুষ
হাড়-মজ্জায় রয়েছ যদিও
রক্তে কনিকা-বিষ
চোরাস্রোত বয়ে যায়
কানায় কানায়
কুশাগ্র শরীরে বিঁধে
যেন তোমার তীক্ষ্ম দংশণ
অথচ কতনা স্থবির
পরিপার্শ্ব ---
অহেতুক আশা---
কুয়াশায় মোড়া
জীর্ণ চারধার


আমারও তো বয়স হল
আর কেন ভড়ংতোমার ?

Wednesday, January 23, 2019

মোহ

মোহ

কালের পথে যতবার
ধরতে চাই খড়কুটো
ভেসে যায় , শুধু ভেসে যায়
পলকা সব ---
অর্জুনের লক্ষ্যভেদ আমার হৃদয়
শুধু খেলা , শুধু ছলনা
বসে আছি সানুদেশে , বিশাল পর্বত
আরোহন অসম্ভব , কুয়াশা মোহময়
ব্যস্ততার রুক্ষতাপ অন্তর জুড়ে
তবু আশা , ভালোবাসা
কাছে যেতে হয়

Saturday, January 19, 2019

বিষ্ফোরণের বারুদ জাগে

বিষ্ফোরণের বারুদ জাগে

এক বুক বারুদ এনেছি আমি
একটু একটু করে সাইত্রিশ বছর ধরে

জমে থাকা যত জিঘাংসা এবং প্রতিহিংসার
পাহার জমেছে আজ
তাই ---
সময় এসেছে বিষ্ফোরণের

জ্বালিয়ে দিতে চাই সেইসব

ধর্ষকাম মানুষের বিকৃত কাম
সেইসব অমানুষদের বিকৃত লালসা
বারুদ বিষ্ফোরণে

আমার অধরে বারুদ , অপাঙ্গে বারুদ

বারুদ শিরায় শিরায়
একরাশ ঘৃণায় পুঞ্জিভূত এ বারুদ
ছড়িয়ে দিতে চাই
হাজার সত্বায়
নারী থেকে নারীতে ---
মাতৃগর্ভে থাকা কন্যাভ্রূণে
তোমাদের মোহোময়ী নারী বিলাসিতায় ।

Sunday, January 13, 2019

Jiboner hisab

জীবনের হিসাব

শূন্য থেকে শুরু করে
শূন্যে মিলায় সব
মাঝখানের এই সংখ্যাগুলো
বিচিত্র অনুভব
সংখ্যার পিঠে সংখ্যা বসে
অভিজ্ঞতা বাড়ে
এর মাঝে জীবন-মরণ
সুতোয় বাঁধা পড়ে
সরু সুতো মোটা সুতো
শক্ত এবং নরম
জীবন কিন্তু বয়ে চলে
ঠান্ডা হোক বা গরম
জীবন ভাঙ্গে জীবন গড়ে
ভানুমতীর খেলা
সইতে সইতে পেড়িয়ে যাবে
নিরানব্বই বেলা ।

Wednesday, January 9, 2019

ঘরে ফেরার গান

ঘরে ফেরার গান

এবার ঘরে ফেরার পালা
সমতলে ---
অনেক হল পাহাড় পাহাড় খেলা
ম্লান রোদ , হিমেল হিওয়া , আঁকাবাঁকা রেশমি পথ
পাহাড়ের বুকচেরা নদী 
পাইন গাছের বন পিছনে ফেলে
চলো ঘরে ফেরা যাক
আরেক স্নহের নদী 
অপেক্ষমান

কতবার মনে হয়
এর চেয়ে বেশি সুখ
আর কিছু নয়
এই বেশ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে চলা
বরফের রাজ্য হোক তুষার শীতল
ম্লান রোদ ছায়া ছায়া কুয়াশা কেবল

তবুও মন প্রজাপতি হয় ।

Tuesday, January 8, 2019

অন্বেষণ

অন্বেষণ

রাত্রির ঘন অন্ধকার
একফালি চাঁদ আকাশে
করুণ এক ছবি
কি যেন বলতে চায়
নীরবে তবু
গোঙায় শুধু ...
দূরের ঐ ঝরনার
করুণ মিনতী---
'ওগো , চাঁদ---
তুমি একটিবার হাসো ---'
ম্লান মুখে তার
জাগেনা হাসির কল্লোল
মনে জাগে
সুদূরের বিষাদ স্মৃতি
প্রকৃতির বিষ্মিত খেয়াল
মানব মনের অনুভূতি
চলে শুকতারার অন্বেষণ ।

Monday, January 7, 2019

Jagoron

জাগরণ

যুগ যুগান্তর ধরে রয়েছ দাঁড়িয়ে
মূর্তিমান তুমি
নির্বাক , নিঃষ্কম্প
জন্মভূমি থেকে বিচ্যূত , তবু
করনি প্রতিবাদ কোনো
কুঠারের আঘাতে হয়েছ ক্ষতবিক্ষত
তবু বিদ্রোহের আগুন
জ্বলতে দাওনি কখনো
বৈশাখের তীব্র দহনে
ক্লান্ত শ্রান্ত পথিককে
দিয়েছ শান্তির আয়েশ ,
ফুলের সৌরভ , পাখির কূজন
বসন্তের কোকিলের কনসার্ট শুনেছ কত
তবু মৌণ ঋষি , নির্বিকারে
কেমনে দিলে কাটিয়ে এত যুগ !
ভরা ভাদরে , নুপূর পরা পায়ে
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ
পারেনি এতটুকু আকুল করতে
রাতের নক্ষত্রপুঞ্জ , বর্ষভোগ্য যাকিছু আছে
সকলের সাথে হেসেছ , গেয়েছ ,
দুলিয়েছ মাথা
গোপনে রেখেছ তবু নিজের গোপন ব্যথা
বিদ্যুতের মত তুমিও তো পার
একবার তোমার বুকের বিষ
উদ্গিরন করতে
দাবানলে দহন করতে বিশ্ব
একবার মাথা তুলে 
দেখাও তোমার রূপ
ঐসব অহঙ্কারি মানুষগুলোর গুমর
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দাও
তোমার শক্তি দিয়ে
বুঝিয়ে দাও
কালে কালে যুগে যুগে
তোমরা কখনো হেয় নও
তোমাদের অসীম ধ্যৈর্য
শিক্ষনীয় সবার ।

Saturday, January 5, 2019

Bortoman

বর্তমান

সূর্য অনেকক্ষণ অস্ত গেছে

দ্বিতীয়ার চাঁদ তখনো অদৃশ্য
মাঠের ঐ বুড়ো নাড়কেলগাছটা
এই ঘনায়মান অন্ধকারে
কী কথা বলছিল ফিসফিসিয়ে ---
এক গভীর ষড়যন্ত্র
আকাশের সাথে তার ।
মাঝে মাঝে 
মাথা দুলিয়ে 
ও কিসের সম্মতি ?
সে এক অদ্ভুদ উপস্থিতি ।
আকাশের গাম্ভীর্যে
উথাল-পাথাল হৃদয়
ওদের ক্রুদ্ধ নিঃশ্বাস
হাড়ের ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেয় ।

চারিদিকে শবভুক নরপিশাচের

উল্লসিত চিৎকার
ফুলের সৌরভ নয়
মানুষের তাজা রক্তের
আঁশটে গন্ধ
বাতাসের ডানায় ভর করে
বিষিয়ে তুলেছে পরিবেশ

মনে হয় ---

এই চন্দ্রসূর্যের গ্রহণ
কাটবে না কোনোদিন
রাহুর দল লালায়িত
আজন্মকালের ক্ষিদে তাদের উদরে ।

Friday, January 4, 2019

ঘরটা

ঘরটা

ঘরটায় ঢুকলে মনে হয়
একঝাঁক বনটিয়া কলরব করে ওঠে
আকাশের ভিতর থেকে
উন্মুখর প্রেম
আহ্বান করে --- আয় --- আয়
তোষকের নরম স্পর্শ
উত্তপ্ত দেহে প্রতপ্ত প্রেমের পরশমনি ছোঁয়ায়
বালিশটা সজোরে আঁকড়ে ধরি
বুকের মাঝখানটায়
শরীরের হাহাকার
ঘনীভূত হয়
ভোররাতে ধোঁয়াশার মত ।

Thursday, January 3, 2019

Kheyal

খেয়াল

মন চায় একজোড়া সোনালী ডানা
খোলা মাঠ নীল আকাশ আর ঘাসফুল
পাহাড়ের বুকচেড়া শীতল নদী
অবিরাম বয়ে চলা কুল কুল কুল ।


হলুদ পাখির দেশ জানিনা কোথায়
নীল তিমি সমুদ্রের কতটা গভীরে
উটের গ্রীবার মত আঁকাবাঁকা মন
মরুর আকাশ রাঙে সোনালী আবিরে ।


ক্যাকটাসে ফোটে ফুল আঙিনার কোন
ঝিরিঝিরি ধারাজল মোহোময় আলো
তাই নিয়ে খুশি আমার অপার অসীম
বয়ে চলে এ জীবন বড় জমকালো !

Wednesday, January 2, 2019

Prithibi

পৃথিবী

পৃথিবী তুমি শুধু
সুকান্তের পৃথিবী নও
তবু সুকান্তের অবাক পৃথিবী
আজো হতবাক করে
তোমার কুশাগ্র এত সূক্ষ্ম
ভূ-পৃষ্ঠে নিয়ত আহত পদচিহ্ন
ফুলের দলে দলে কীটের দংশণ
অহরহ জ্বলছে চিতা এখানে ওখানে

আর কতদিন
অশুদ্ধ গ্যাসচেম্বারে আটকে থাকতে হবে
কোষে কোষে অসহ্য যন্ত্রনা

প্রশান্তি আসুক ফিরে ।

Monday, December 31, 2018

রাত তখন সারে ন'টা

রাত তখন সারে ন'টা

একি অপ্রত্যাশিত আগমন !
মন আমার নিবিষ্ট যখন কবিতাপাঠে 
কেন এলে বিদায় চাইতে 
অকস্মাৎ ---
হৃদয় উঠল কেঁপে
তোমার কন্ঠস্বরে
ধুক --- ধুক --- ধুক ----
বিদায় ---
বোলো না
আমার হৃদয়মাঝে
আছো জানি ---
চিরকাল --- চিরদিন ---
কোথায় যাবে বিদায় নিয়ে
তবু ----
পারিনি কিছু বলতে
অবাক বিষ্ময়ে
চেয়েছিলাম শুধু
আশা তো করিনি কখনো
তবু এসেছিলে ---
ক্ষনিক স্মৃতির আবেশের মতো ।

Sunday, December 30, 2018

গৌরচন্দ্রিকা - অন্তিম পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা - অন্তিম পর্ব

অনিমেষ কোনো জবাব দিল না । মুখ নীচু করে একটা আমপাতা নখ দিয়ে চিরতে লাগল । 
          - এভাবে যদি বিচার কর তবে বলত অনিমেষদা আমাদের কার চরিত্র ভালো ?
     অনিমেষ জিজ্ঞাসু চোখে শাশ্বতীর দিকে তাকিয়ে আছে । কি বলতে চায় মেয়েটা । শাশ্বতী বলে চলেছে ।
          - এই যে আমি এই দুপুর বেলা তোমার সাথে এই বাগানে বসে নির্জনে কথা বলছি । এখন তোমার মত কেউ যদি দেখে তবে তো আমার চরিত্র নিয়েও টানাটানি পড়ে যাবে । 
          - আহা তা কেন ।
অনিমেষের কথা হয়ত শাশ্বতীর কানেই পৌছয়নি ।
          - আমিও তো আমাদের অর্গানাইজেশনের কাজে কত ছেলেদের সাথে রাত নেই , দিন নেই ঘুরে বেড়াই । নানা কথা নিয়ে ওদের সাথে হাসি - তামাসা করি । আমার ব্যপারেও তোমরা এমনি ভাবো নিশ্চয় ।

শাশ্বতীর মনে পড়ে তার পিসতুতো দাদার কথা । গতকাল রাতে সিনেমাটা শেষ হলে সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল তখন এরকম একটা কথা উঠেছিল নায়িকার চরিত্র নিয়ে । দাদা বলেছিল , দেখ সতী , আমাদের চরিত্রটা আসলে আপেক্ষিক । একপেষে দৃষ্টি নিয়ে আমরা চরিত্রের বিচার করি । একটা মানুষের সবটুকু আমরা দেখতে পাই না বা দেখি না । বলতে গেলে দেখার চেষ্টাও করি না । আর এজন্যই যত রাজ্যের কুৎসা , বদনামের সৃষ্টি করি । তুই নিজেকে দিয়ে বিচার কর দেখবি সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে । সবকিছুর পিছনেই কারণ থাকে । মনে কর তোকে আদালতের সামনে দাঁড় করানো হয়েছে । তোর চরিত্রের বিচার হচ্ছে । তুই তোর সপক্ষে  নিশ্চয় কারণ দেখাবি । এবং এটাই স্বাভাবিক । আর কার্য-কারন সম্পর্কের ভিত্তিতে তর্ক শেষপর্যন্ত যুক্তিতে উত্তীর্ণ হয় । আসলে আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছে অন্যের খুঁত বের করাই এদের কাজ । নিজেদের খুঁত ধরে দাও , দেখবে নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করার কত কারণ দেখাবে । অথচ অন্যের ব্যপার ' বুঝব না ' বলে চুপ করে থাকে ।
শাশ্বতীর ধ্যানভঙ্গ হল অনিমেষের কথার আওয়াজে --- আসলে শুধু তাই নয় । আশেপাশের বাড়ির লোকেরাও তাই বলল ।
        - পাশের বাড়ি ! অনিমেষদা , তুমি এতদিন ধরে যাকে দেখছ , ভালোবেসেছ তার সম্পর্কে শেষপর্যন্ত তোমার এই ধারনা । এত ঠুনকো তোমার প্রেম । আচ্ছা , কেউ যদি এসে বলে ভাই চিল তোমার কানটা নিয়ে গেল । তুমি কি চিলের পেছনে ছুটবে নাকি নিজের কানে হাত দিয়ে দেখবে কানটা স্বস্থানে আছে কিনা ।
            - কিন্তু সতী , অনেকের কথা যেখানে আছে , মানে অনেকে যেখানে বলছে ---
           - দেখ দাদা , সবার কথা আমি জানি না । সবাই তার কোন আচরণ দেখে তাকে চরিত্রহীনা বলছে আমি জানি না । তাদের কথা বাদ দাও । আমি তোমায় জিজ্ঞাসা করছি তুমি নিজে কতখানি সৎ বুকে হাত দিয়ে বলত । যদি একটি ছেলের সাথে কথা বললেই একটা মেয়ে খারাপ হয়ে যায় তবে তুমি বলতো তুমি কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলনি ? রাস্তাঘাটে কোনো মেয়েকে টোয়েন্টিং করনি ?

অনিমেষ কখন উঠে বসেছে । অনিমেষ অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শাশ্বতীর দিকে । শাশ্বতী আজ ক্ষেপে উঠেছে । প্রতিবাদের প্রখর ঝড় তার চোখেমুখে। একোন শাশ্বতীকে দেখছে অনিমেষ । ছোট্ট মিষ্টি শান্ত যে মেয়েটির হাতে সে ছ-মাস আগে ভাইফোঁটা পড়ে গেছে  এ কি সে ! শাশ্বতীর মুখের সেই লাজুক ভাব যা সবসময় অনিমেষকে ছোট্ট বোন বলে মনে করিয়ে দিত এতো তা নয় ।
শাশ্বতীর কথা শুনে আজ অনিমেষের ক্লাশ সেভেনের ইতিহাসের দিদিমনির কথা মনে হচ্ছিল । তনিমা মিত্র ক্লাশে ভারতীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে গিয়ে এরকমভাবেই কথা বলতেন । এরকমভাবেই তিনি ভাবে তন্ময় হয়ে যেতেন । মুখে ফুটে উঠত করুণ বেদনা ।
শাশ্বতী কিন্তু নিজের কথাতেই মগ্ন - দেখ অনিমেষদা , তুমি যদি সত্যি ওকে ভালোবাস তবে ওর সাথে কথা বলো । ওকে বোঝার চেষ্টা করো । আশা করি তাহলে ওকে বুঝতে পারবে । তারপর যদি ওকে তেমন মনে হয় তুমি ব্যবস্থা নাও ।
আজ অনিমেষের আবার নতুন করে ভাবতে ইচ্ছে করছে । সত্যি , মেয়েটা আজ অনিমেষকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করছে । 
          - কিরে দুজনে চুপচাপ করে বসে আছিস কেন । সরি , আমার একটু দেরি হয়ে গেল । 

প্রিয়তোষের কথায় প্রকৃতিস্থ হল দু'জনে । প্রিয়তোষ পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে ছুড়ে দিল মাদুরের ওপর  --- নে খা ।

কোকিলটা এখন আর ডাকছে না । হয়ত ওর সঙ্গীকে খুঁজে পেয়েছে । কিংবা এখানে ওর সঙ্গী নেই বিবেচনা করে অন্য কোথাও চলে গেছে । বাগানের সামনের পুকুরটার দিকে চোখ গেল অনিমেষের । সূর্যাস্তের লাল আভা ছড়িয়ে আছে জলে । একটু পড়েই সূর্য ডুবে যাবে । অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে । তারপর আগামীকালের প্রতীক্ষা । তারপর আবার চারদিক আলো করে সূর্য উঠবে । শুরু হবে একটি নতুন দিনের ।

Friday, December 28, 2018

গৌরচন্দ্রিকা -- দ্বিতীয় পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা -- দ্বিতীয় পর্ব

গতকাল দাদা এসেছিল । সারাদিন বেশ মজায় কেটেছে শাশ্বতীর । একটুকুও পড়া করা হয়নি । কিন্তু আজ যে অনিমেষদা আসছে । আর অনিমেষদা মানেই উৎসব । সকাল সকাল বাবা আজ বাজারে গেছেন । ভালো দেখে বড় দেখে মাছের মাথা আনতে হবে । পাগলটা এতদিন পর আসছে সবাই যেন বেশ খুশি । আজ যেন কারো কথা বলারও সময় নেই । নিঃশ্বাশ বন্ধ করে সব কাজ করে চলেছে । কানগুলো শুধু গেটের দিকে । গেটে শব্দ হলেই সব উৎকর্ণ হয়ে ওঠে ।
অনিমেষ যখন এল তখন শাশ্বতী বাথরুমে । চিৎকার হৈচৈ শুনে শাশ্বতীর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল । সাওয়ারটা বন্ধ করে ভালো করে কান পেতে রইল । সকলের সমবেত চিৎকারে সবার কথাই হারিয়ে যাচ্ছে । কারো কথাই পরিস্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে না । এই জনসমুদ্রের কূল ছাপিয়ে হঠাৎ শাশ্বতীর বাবার কথা স্পষ্ট হয়ে উঠল । 
            - দাঁড়াও , দাঁড়াও । ছেলেটা মাত্র এল । ওকে একটু বসতে দাও আগে । শাশ্বতীর বুঝতে আর বাকি নেই ।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর অনিমেষ আর প্রিয়তোষ শাশ্বতীর ঘরে গেল । 
               - চল সতী ঘুরে আসি ।
               - এখন ।
               - চল না বাগানে গিয়ে বসব ।
               - বেশ চলো । দাঁড়াও মাদুরটা নিয়ে আসি ।

শাশ্বতী একছুটে সিড়ির কোন থেকে মাদুরটা টেনে নিয়ে এল ।
একটা বড় আম গাছের নিচে মাদুরের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিল ওরা তিনজন । প্রিয়তোষ আর অনিমেষ নিজেদের ব্যবসার কথা আলোচনা করছিল । হঠাৎ কি একটা কথা মনে পড়ায় ' ওহো আসছি দাঁড়া ' বলে বাড়ির ভেতর ছুটে গেল অনিমেষ ।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ থাকার পর অনিমেষ প্রথম কথা বলল 
             - কিরে তোর এবার কোন ইয়ার হল যেন ?
             - থার্ড ইয়ার ।
             - চাকদা কলেজ না ?
শাশ্বতী ছোট্ট করে একটু ঘাড় ঝাকালো ।
             - তা শুধু পড়াশোনাই করছিস নাকি প্রেমটেমও করছিস ?
শাশ্বতী যে এর কি জবাব দেবে ! 
অনিমেষদাটা যেন কি । একটা ঠান্ডা স্রোত হাওয়ার ঝলক এসে লাগল শাশ্বতীর চোখে মুখে ।একটু চুপ করে থেকে শাশ্বতী বলতে শুরু করল 
                -অনিমেষদা তুমি এবার একটা বিয়ে কর । ঘরে বউ এলে তোমার এই বাউন্ডুলে স্বভাব ঘুচে যাবে।  মাঝে মাঝে আর উধাও হয়ে যেতে পারবে না । 
               - বিয়ে করব , বেশ মেয়ে দেখ । 
               - মেয়ে দেখব কিগো । রমাই তো আছে । ওকে তো আমার বেশ লাগে । 
               - নারে , তা হবার নয় ।
               - হবার নয় , কেন ? ওর বাড়ি থেকে রাজি নয় ?
               - না , তা নয় ।
              - তবে ?
বাগানের কোথায় যেন একটা উদাসী কোকিল অনেকক্ষণ থেকে ডেকে যাচ্ছে । হয়ত ওর সঙ্গীকে খুঁজে পাচ্ছে না । থেকে থেকে হাওয়ায় ভর করে কোকিলের ডাক ওদেরও উদাস করে তুলছিল ।

অনিমেষদার চোখে মুখে একটা ব্যথার ছবি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল শাশ্বতী । মুখ নীচু করে অনিমেষ বলল - ওর চরিত্র ভালো না ।
             - চরিত্র ভালো না !
        
কথাটা গমগম করে শাশ্বতীর কানের মধ্যে বেজে উঠল । যেন সেতারের সাতটা তার একসাথে ছিঁড়ে গেল । শাশ্বতী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনিমেষের মুখের দিকে ।
               - মানে ?
               - সেদিন রাত প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ আমি যখন ফিরছি তখন দেখি ওদের বাড়ির সামনের স্কুলের কোনাটায় দাঁড়িয়ে ও একটা ছেলের সাথে গল্প করছে । 
              

Thursday, December 27, 2018

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

গৌরচন্দ্রিকা -- প্রথম পর্ব

ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি । ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা লাগে । আর ঘুমটাও এই সময়ই একটু জাঁকিয়ে আসে । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ঘুমোতে পারেনা শাশ্বতী । আজ তার পিসতুতো দাদা আসবে । এই দাদা শাশ্বতীর খুব প্রিয় । এই দাদা মানেই মজার মজার কথা , অনেক অনেক জায়গায় ঘোরা আর দারুন দারুন খাওয়া । তাই দাদার কথা শুনেই তার চোখ জ্বালা কমে যায় । ঘুম পালিয়ে যায় নির্ঘুম দেশে ।
আর কয়েকদিন পরেই দোল । পৃথিবীর বুকে ইতিমধ্যেই কিন্তু রঙের খেলা শুরু হয়ে গেছে । পলাশ শিমূলের বুকে যৌবনের আগুন জ্বলে উঠেছে । আম গাছের ডালে ডালে ফুটেছে মঞ্জরী ।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল - ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....। ফোনের আওয়াজে শাশ্বতী আজ বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল । কেন ? রোজ তো কত ফোন আসে । কেউ তার বাবাকে চায় । কেউ পাশের বাড়ির সন্টুদা , রাজুকাকা বা তিতলিকে ডেকে দিতে অনুরোধ করে । আবার কখনো শাশ্বতীর বন্ধুরাও দরকারে ফোন করে । কিন্তু কখনো তো এমন হয়না । তবে কী শাশ্বতী আজ মনে মনে কারো প্রতীক্ষা করছে ?
বেশ কয়েকবার বাজার পর ফোনটা কেটে গেল । শাশ্বতী অপেক্ষা করে থাকে । নিশ্চয় আবায় বাজবে এখনি । ঠিক তাই । শাশ্বতী রিসিভার তুলে নিল - হ্যালো 
        - হ্যালো । আমি অনিমেষ বলছি । 
        - অনিমেষদা !

অনিমেষ শাশ্বতীর কাকাতো দাদা প্রিয়তোষের বন্ধু ।
এক জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রিয়দা ওকে নিয়ে এসেছিল । তখন ওরা বীরনগর না কোথায় থাকত । প্রথম আলাপেই অনিমেষের সাথে শাশ্বতীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল । অনিমেষের কোনো বোন নেই । একবার ভাইফোটার দিন হঠাৎ এসে হাজির । শাশ্বতী তখন তার ভায়েদের ফোটা দেবার ব্যবস্থা করছে । অনিমেষ এসে বসে পড়ল ভাইদের সাথে ।
          - জানি তো আমার জন্য কোনো ব্যবস্থা করিসনি । তাই আমি নিজেই নিয়ে এলাম । এই নে পান মিষ্টি । মা সব দিয়ে দিয়েছে ।
সেদিন সকলে এই সৃষ্টিছাড়া ছেলেটার কান্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিল । আনন্দের দৌরাত্মে প্রিয়তোষ মানিব্যাগে যত টাকা ছিল সবটাই তুলে দিয়েছিল শাশ্বতীর ডালায় ।
তারপর সেই যে অনিমেষদা গেল প্রায় ছ-মাস পর আবার এই যোগোযোগ ।
      - কিরে কেমন আছিস ? কথা বলছিস না যে । খুব রাগ করেছিস বল । আচ্ছা আচ্ছা আর রাগ করতে হবে না । আমি কালই যাব বুঝলি ।  কাল সব কথা হবে । মাসীমাকে বলিস মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট রাঁধতে । মুড়িঘন্ট না পেলে কিন্তু তোকে পিটাবো । আচ্ছা রাখছি রে । ভালো থাকিস ।
শাশ্বতী কোনো কথা বলার আগেই ফোনটা খটাস করে রেখে দিল অনিমেষ । খুব রাগ হল শাশ্বতীর ।
অনেকদিন পর যদি ফোন করলে তো আমাকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই নিজের কথাটুকু  বলেই রেখে দিলে । অনিমেষদাটা এইরকমই ।
অভিমানের মধ্যেও শাশ্বতীর আনন্দ হচ্ছিল । কাল অনিমেষদা আসবে । ভারী মজা হবে ।

Wednesday, December 26, 2018

Aaj rate

আজ রাতে

নিঝুম রাত্রির গোঙানি শোনা যায়
নিঃসঙ্গ এ জীবন
বোধহয় অসহ্য লাগে তার
নিথর রাত্রির কান্নায়
কার অনুপস্থিতি ইঙ্গিত পায়
হিমপরশও দংশন করে
নিঃসঙ্গ রাত্রির বুকে
চাঁদের মহিমা অবলুপ্ত হয় বুঝি
তার কান্নার স্রোতে

কে আসবে পাশে তার
একটু সোহাগের ছোঁয়ায়
শুকিয়ে যাবে অশ্রুজল
জ্বলবে আশার প্রদীপ

এসো , তুমি এসো ।

Tuesday, December 25, 2018

Akal boishakhi

অকাল বৈশাখী

তোমার বিশীর্ণ চোখদুটোতে
দেখেছিলাম
কি অপরিমেয় ক্ষুধা
চোয়ালের কাঠিন্য ভেঙে
উঠে আসছিল কী একটা কথা
ঠিক তখনি ----
একঝাঁক সাদা বক
কালোমেঘের বুক চিরে
ঠিক মাথার ওপর দিয়ে
কি কথা বলতে বলতে
উড়ে চলে গেল
মুহূর্তে ----
চকচকে হয়ে উঠল তোমার চোখ
রূদ্ধ আবেগে গলা ফাটিয়ে
চিৎকার করে উঠলে তুমি

তোমাকে বেষ্টন করে আছে
এক দল মানুষ
নিমেষে ----
হারিয়ে গেল তোমার আশা
ছিন্ন হল মুকুল
হল অকাল বৈশাখীর অবসান 

Monday, December 24, 2018

Avipsa

অভীপ্সা

ভেবেছিলাম ----
উত্তরণ খুব একটা কঠিন হবেনা ।
রোগের কারন জেনে গেলে
আর তো রোগমুক্তির ভয় থাকেনা
চিকিৎসা শুরু করেছিলাম
যথানিয়মেই

তবু ----
কোনো কোনো রোগ তো থাকেই
যার চিকিৎসা নেই । ধীরে ধীরে
ক্ষয় হয় জীবন -- মন -- এই রোগে 
হাহাকার করে ওঠে মন
ফিরে পেতে চায় একবার সে জীবন
যে জীবন শুধু ফরিঙের , প্রজাপতির
পাতলা ডানায় ভর করে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো --- ঊষা আর গোধুলীর
রক্তিম আবেশ মাখানো গায়ে ।
কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ভরা সর্ব্বোচ্চ ডালটাতে বসে
হাওয়ার তালে তালে নেচে নেচে বেড়ানো
কি উন্মাদ সে জীবন --- চোখে
কত স্বপ্ন ।

Sunday, December 23, 2018

সর্বত্র নিবিড়তা

সর্বত্র নিবিড়তা

তোমার
বাহুর নিবিড় আবেষ্টনে
আবদ্ধ থেকে
যখন তোমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলাম
মনে হচ্ছিল
আজন্মকাল ধরে বয়ে চলা
এই যে গঙ্গা , 
ঐ যে যমুনা
এমনিভাবেই
মাটির সাথে নিবিড় থেকে
বয়ে চলেছে সুদূরে
সভ্যতার উত্থান পতন
জীবের জন্ম মৃত্যু
পৃথিবীর ঘুর্ণন
সমস্তই 
যেন রূপকথা
সত্য শুধু
এই প্রেমের নিবিড়তা ।

Saturday, December 22, 2018

প্রকৃতির পরিহাস

প্রকৃতির পরিহাস

বেআব্রু রাত্রির নগ্নতা
একি সৌন্দর্য না বিভীষিকা
তবে --
নগ্ন আকাশে দীপ্যমান নক্ষত্রপুঞ্জকে
শ্মশানের জ্বলন্ত চিতা বলে মনে হয় কেন ?
এও কি প্রকৃতির পরিহাস !

পৃথিবীর প্রান্ত থেকে
কোনো এক বুড়ো প্যাঁচার উল্লসিত চীৎকারে
তারই কি প্রতিধ্বনি শোনা যায় ?

নদীর ঐ খিলখিল হাসি
এও কি --
শিশুকন্ঠের কাকলি , নাকি
বৃদ্ধা ধরনীর প্রতি নির্মম উপহাস ?

স্তম্ভিত পৃথিবী !

Friday, December 21, 2018

নির্বাক

নির্বাক

কুয়াশার  চাদর গায়ে
ঐ যে আকাশ
একদিন
জুজু হয়ে বসে থাকা
বোবা কালা মানুষটাকে
কি কথা শুনিয়েছিল
নির্বাক নিঃস্পন্দ চিত্তে
বুড়ো চাঁদটার দিকে তাকিয়ে
আর এক বুড়ো মানুষ
মনে মনে চলেছিল
সংযোগ বোধহয়
তাই
হীমশীতল রাতে
নিবিড় কুয়াশায়
চাঁদের মত
নির্বাক হয়ে
কেটে গেল রাতের পর রাত
প্রহরের পর প্রহর ....

তবু
বোবা মুখে
ফোটেনা ভাষা
মেরুদন্ডে
জাগেনা বিদ্রোহের জোয়ার
ভাটার বালিতে শুয়ে শুয়ে
রাতের তারা গোনা
আর
কালকের প্রতীক্ষা
এক তপ্ত , উজ্জ্বল দিনের প্রতীক্ষা ।

Thursday, December 20, 2018

জীবন

জীবন

রাত্রির বীভৎস নীরবতা
আকাশের কোনে
ম্লান চাঁদ
কিংবা
রাহুগ্রস্ত
শ্মশানে জ্বলছে
অহরহ
শবদাহ
অগ্নির বীভৎস লেলিহান শিখা
অন্ধকার আরো বাড়িয়ে দেয় ।

কুকুরগুলো 
স্তব্ধ হয়ে বসে আছে
কিসের প্রতীক্ষায়
শুধু বয়ে যায় নদী --
কখনো দুকুল ছাপিয়ে
কিংবা শীর্ণকায় -----

Wednesday, December 19, 2018

ভীতি

ভীতি

দূষিত মনের পাশে
অশরীরী আত্মার ক্রন্দন

বৃন্ত থেকে খসে পড়া
একমুঠো বকুল ফুল

দুঃস্বপ্নে কেঁদে ওঠা
একটি ঘুমন্ত শিশু

নীরব আকাশের দিকে
তাকিয়ে থাকা
একটি নীরব মনের হাহাকার
আরো বেশি বাড়িয়ে তোলে
আকাশ থেকে খসে পড়া
অমঙ্গলস্বরূপ
দু-একটা তারাখসার আবির্ভাবে ।

Tuesday, December 18, 2018

গোপন ব্যর্থতা

গোপন ব্যর্থতা

মেঘের আঁধার কেটে
বেড়িয়ে আসা একটুকরো চাঁদ
নক্ষত্রের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা সত্বেও
যেন ক্রোশ খানেক দূরত্ব

সবুজ নরম ঘাসে
প্রথম শিশির বিন্দুর
ব্যর্থ প্রনয়

রাতের তারার নিঃসঙ্গ অবকাশ যাপন
অভিমানে আহত
ভোরের শিউলির অবাধ পতন

পূর্বদিকে উদিত সূর্যের
ওকি লজ্জারাঙা মুখ ?
তেজ-বীর্য আহত কি ব্যর্থ দর্শনে ?

Monday, December 17, 2018

অন্তড়ালে

অন্তড়ালে

পাতলা কুয়াশায় ঘেরা ক্লান্ত ব্যস্ততা
মাঝে মাঝে ডিপ্রেশনের উঁকিঝুকি
কারুন্য কঠিন স্বর
যেন ----
আর একটু ফুঁ দিলে
সশব্দে ফেটে যাবে
ছোট্ট বেলুন , 
উথলে উঠবে সমুদ্রের ঢেউ ,
হাজার তারায় ভরা আকাশ
ঝিকিমিকি করে হাসতে হাসতে
কখন ---
চাঁদের সাথে লেপ্টে গিয়ে
মাটিতে গড়াগড়ি খাবে

বুঝতেও পারবেনা ।

Sunday, December 16, 2018

মৃত্যু

মৃত্যু

নিষ্ঠুর মৃত্যুর নির্মমতায়
কেঁপে কেঁপে ওঠে অঘ্রাণের রাত
রাতচরা পাখিগুলি সভয়ে
গাছের কোটরে আশ্রয় নেয়
জ্যোৎস্নামাখা দিঘীর জল
অস্বাভাবিকভাবে স্থির
কোন সুদূর থেকে
কুকুরের একটানা কান্না ভেসে আসে
বুকের ভেতরে একমণ ওজনের পাথরটা
আরো চেপে বসে
শিরায় শিরায় প্রবাহ স্তব্ধ হয়ে যায়


দোহাই তোমার , একফোটা অশ্রু দাও
পাথরটা একটু ক্ষয় হোক ।

Wednesday, December 12, 2018

বৈপরীত্য

বৈপরীত্য

তোমার বাড়ির সানাইয়ের সুর
আনন্দে নেচে নেচে ওঠে বেহাগে
সুখের সন্ধ্যাতারা উজ্জ্বল হয় ক্রমে
আকাশে গোল থালার মত চাঁদটা বুঝি
চাঁদ নয় --- সৌভাগ্য সূর্য
ফাগুনবেলার ফিসফিস শব্দে
সৃষ্টির সুর শোনা যায় ।


আমাকে ঘিরে আছে নিশ্ছিদ্র অমাবস্যা
এর নিপুন স্তর ভেদ করে প্রবেশের
ছাড়পত্র পায়না সানাইয়ের সুর
চাঁদটাও ফ্যাকাশে মনে হয়
উদিত সূর্যও আতঙ্কিত করে হৃদয়
তুষার-ঝড় বইতে থাকে মনে
চারিদিকে শুধু একটানা ক্রন্দন শোনা যায় ।

একাকীত্ব ভুলতে গিয়ে

একাকীত্ব ভুলতে গিয়ে

কখনো কি পার অস্বীকার করতে
ঠোঁটের কোনে ঐ যে আবেশটুকু
তা আমার দেওয়া নয়.......

সঙ্গী খুঁজেছিলাম আমি
একটা সঙ্গীর জন্য
বুকের মধ্যে সমস্ত রক্ত জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল
উষ্ণতা চেয়েছিলাম তার কাছে
তার বুকের ওমে তপ্ত হয়েছিল পৃথিবী
তাই বুঝি
নিঃশেষে পুড়ে গেল সে
আজ বুঝি আবার বলব --
' সঙ্গী চাই , একটা সঙ্গী চাই '

হয়ত রাস্তায় রাস্তায় চীৎকার করে বলব --
' একজন কেউ এসো আমার সঙ্গী হতে ,
এই নিঃসঙ্গ জীবন আর বইতে পারি না .....'

প্রতিধ্বনি ফিরে আসে কানে --
' সঙ্গী চাই , সঙ্গী চাই '
ঐ আকাশটাও বুঝি তবে একলা
ঐ যে নদী --
যার কালো জলে
দিনের ছায়া নিয়ে আসে রাত্রীর অন্ধকার
তার গভীরেও কত নিঃসঙ্গতা

আকাশের ঐ চিলটা বুঝি
নিঃসঙ্গতা ভোলার জন্যই উড়ে বেড়াচ্ছে
পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে

তবে এত বড় পৃথিবীটাতে কি
সবাই নিজের মত একা ?