Thursday, April 29, 2021

আমার রবীন্দ্রনাথ

ঠাকুর রবি 
তন্ময় আঢ্য 
----------------

তুমি বিরাজমান মনের অন্তরে কবিগুরু স্মরণে,
হৃদয়ের গভীরে তোমাকে রেখেছি আমরা যতনে।

মন খারাপে তোমার গানে মুগ্ধ করো হে প্রাণে, 
তোমার কথায় তোমার সুরের জাদুতে মুগ্ধতা আনে।

তোমাকে নিয়ে গর্বিত মোরা নেই কোনো বিদ্বেষ,
তুমি ছিলে বলেই কথা-সুরে এগিয়ে রয়েছে দেশ।

তুমি শিশুদের গুরুদেব- বড়দের তুমি বিশ্বকবি,
তোমার ছড়া পাঠ করে শিশুরা বলে ঠাকুর রবি।

গানে-ছড়ায় এভাবেই মাতি- নিয়ে তোমাকে কবি,
তুমি আমাদের হৃদয়ের কবি প্রিয় ঠাকুর রবি।

তুমি ছিলে বলে এই দুঃসময় আনন্দে করেছি পার,
গানে-কবিতায় মগ্ন থেকেছি ভুলিনি একটিবার।

তুমি আমার প্রিয় কবি তুমি আমার রবীন্দ্রনাথ, 
প্রেরণা তুমি জোগাও- প্রনাম তোমায় প্রাণনাথ।

*****************************************

আজ আমায় রবীন্দ্রনাথে পেয়েছে
----------------------------------------------
শ্যামল মিশ্র
-----------------

সকাল থেকেই আজ আমায়
রবীন্দ্রনাথে পেয়ে বসেছে
সঞ্চয়িতার পাতা থেকে কখন যেন 
আমার কলমে, আমার অস্তিত্বে মিশে
তুমি আমায় নিয়ে চলেছ 
এ কোন জগতে?
হঠাৎ আবিষ্কার করলুম,
পৌঁছে গেছি এক ইস্টিশনে
ধরা যাক, নাম তার শ্রয়ণ
কত পথহারাদের আশ্রয় সে,
কিন্তু কী ভীষণ স্তব্ধ আজ!!
নামহীন লেফাফার মতো গন্তব্যে হারিয়ে গেছে।
তোমার কথায় মনে হল
"চিত্রকরের বিশ্বভুবন খানি
এই কথাটাই নিলেম মনে মানি।"
আসলে কবীন্দ্র,
তোমায় আমি কি করে ভুলি বলতো!
তোমার এই ইস্টিশনে  একদিন রেলগাড়ির কামরায় তো দেখেছিলেম 
সেই মেয়েকে
"চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে",
যৌবনের প্রথম প্রভাতে।

চোখ বুজলেই
হে কবীন্দ্র!
তোমার পরশ খুঁজে মরি
আঁধারে যে তোমায় পেল
আলোতে যেন তা হারিয়ে যায়।
তুমি আমার সমস্ত সত্তার মধ্যে
আমার প্রেম,ভালোবাসা যন্ত্রণার মধ্যে----
তুমি কী ভীষণ সত্য
হে কবি।
সময়ের সাথে সাথে তুমি যেন
ভিন্ন রূপে, ভিন্ন স্বাদে দেখা দাও,
চিনতে শেখাও সত্যের রূপ
রূপাতীত সুন্দরকে
"সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম---
সে কখনো করে না বঞ্চনা"।

***************************


 অন্তরে গুরুদেব 
------------------------
 ব্যোমকেশ গঙ্গোপাধ্যায় 
 ---------------------------------------

আছো অন্তর , বিশ্ববহ্মান্ডে, চিরস্মরণে,
বারিধারা মাঝে,মৃত্তিকায় ও মননে, 
আছো তুমি গুরুদেব প্রতিটি কোণে ও ক্ষণে, 
নিবাস তব, মম হৃদাসনে, মনে ও প্রাণে, 

জলস্থলে অন্তরীক্ষে বৃষ্টির দৃষ্টি বদনে, 
পাই মোহ-মায়ার চির প্রেমবাঁধনে ,
পরশ পাই প্রতিক্ষণে, নবসৃষ্টি ও প্রজন্মে,
দক্ষিণা বায়ে তব মুরতি,বিকাশিত নয়নে।

দর্শনে পূর্ণ মন,আজি পূণ্য উচ্ছ্বাস প্রাণে,
স্পর্শ প্রতিটি কণায় পাই প্রতিটি লেখনে,
রবি,শশী,তারকারাজি আছে তব মননে,
তব লেখনী মাঝে আছো বেঁচে,মরণি মরণে।

বৃক্ষ শাখা ফুল-ফল ভরা প্রকৃতির প্রাণে,
চারুলতায় বায়ুর নাচন নবাত্মার স্পন্দনে,
তব লেখনী চির অক্ষয় মম বিশ্বহৃদাসনে,
হারাতে চাই না, রাখি তোমায় সদা স্মরণে। 

আশার প্রদীপ জ্বালি চেয়ে তব পানে, 
জীবন নদে আদি অন্ত কিছুই যে জানিনে,
তোমার কবিতা,গানে বাঁচি মননে, জীবনে,
 সদা স্মরি, প্রণাম সর্বান্তকরণে তব চরণে।

**************************************

আমার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ
----------------------------------  
 সুকুমার ঘোষ 
---------------------

আমার হয়ে সবার হলে তাই তো তুমি রবি । তোমার আলো দশ দিকেতে তুমি বিশ্বকবি ।।
গানে ভুবন ভরিয়ে দিলে , নৃত্যে বরণডালা । কবিতা আর ছোট গল্পে আনলে জয়ের মালা ।।
উপন্যাস আর নাটকেতে নতুন পথের বাঁক । নোবেল জয়ে পড়ে গেল চারদিকে হাঁকডাক ।।
আধুনিক আর প্রাচীন সাহিত্য দুইয়েতেই সেরা । প্রবন্ধেতে সবাই মাতে যেন উত্সবে দশেরা ।।
কাটাকাটি করতে গিয়ে আঁকলে হিজিবিজি । তা থেকেই হয়ে গেল অবাক করা ছবি ।।
শিশুর কথা ভেবে তুমি লিখলে ' সহজ পাঠ '। বিশ্বভারতী গড়লে যেথায় ভুবনডাঙার মাঠ ।।
বৈশাখ এলে তোমার জন্ম- জয়ন্তী উত্সব । শ্রাবণ এলে বিয়োগ ব্যথা  হয় গো অনুভব ।।
উপনিষদ- চেতনা জাগিয়ে দিলে প্রাণে ।               সীমা- অসীম দ্বন্দ্ব নিয়ে কেবল দড়ি টানে ।।
বাংলা ভাষায়  মধু পেয়ে  বিশ্ববাসী মাতে ।
তুমি  আছো দুই বাংলার জাতীয়  সংগীতে ।।

****************************************



কবিগুরু 
-------------- 
সমীর দাস 
---------------------------
 
রবি গুরু কবি গুরু কবীন্দ্র ঠাকুর 
তব করে ওঠে ভরে ভাষা সংস্কৃতি 
লেখা কত শত শত রচনা মধুর 
নমি তবে শ্রদ্ধা ভরে বাংলার কৃতি

অনুভবে কত ভাবে কবিতা লিখেছ 
রচনায় ভরা তায় সহস্র ভাবনা
কত সুরে কত তালে গান গেয়ে গেছ
শিল্প সাহিত্য কলায় নতুন চেতনা

শিক্ষা ধর্ম সামাজিক কত চিন্তাধারা  
দেশপ্রেমে এনে ছিলে নব জাগরণ 
নিরন্তর এ অন্তরে বহে তব ধারা 
তব ধ্যান অবদান রবে আমরণ 

প্রণমি রবীন্দ্রনাথ সচেষ্ট সাধনে 
গুরুদেব তুমি আছ সর্বক্ষণ মনে 
-------------------------------------

সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র
----------------------------------
উমা মুখার্জী
----------------------------

তোমার লেখা আছে ছুঁয়ে বিশ্ব ভুবন মাঝে,
তোমার গানে প্রাণে লাগে দোলা সকাল সাঁঝে।
আলোকের ঝর্ণা ধারায় তুমি ভাসাও প্রাণ,
তোমার লেখনীর মাঝে পাই নবীনের জয়গান।
হাসি, আনন্দ, বিরহ, প্রেম, সূক্ষ্ম অনুভূতিতে মিশে,
প্রকাশ করেছো মনের ভাষা যাতে প্রাণ পাই শেষে।
সাথী হারা একলা পথের দিশার সন্ধানী তুমি,
তোমার সৃষ্টির মহত্বে তোমারেই শুধু নমি।
সহজপাঠ, গীতাঞ্জলি, গীতবিতানের অবদানে,
বিশ্ব মাঝে পেয়েছো স্থান নোবেল সম্মানে।
সাহিত্যের চিদাকাশে তুমি রবির কিরণ,
তোমার লেখনীর ছোঁয়ায় হয়েছে দ্যুতি বিচ্ছরণ।
বছরে প্রথম পঁচিশে  বৈশাখ হয়েছিলে অবতীর্ণ,
ঐশ্বরিক ক্ষমতায় আসীন হয়ে হলে যুগাতীর্ণ।।

*****************************************
 
 গুরু প্রণাম
-----------------
ধীরেন গোস্বামী।
--------------------------

মানব জীবনের চলার পথে
মাথায় সবার মস্ত বোঝা,
তারই মাঝে কবিগুরুর গানে
গুরুর চরণ করছি পূজা।

সেই আলোকে আলোকিত হয়ে
লিখছে সকল লেখক-কবি,
সমুখে সাজিয়ে রেখে কবি গুরুর
ফ্রেমে বাঁধানো মস্ত ছবি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ভারত সূর্য 
বিশ্বকবি বিশ্বশ্রেষ্ঠ কবিগুরু,
সেই চরণে জানিয়ে ভক্তি প্রণাম 
আমরা করি প্রভাত শুরু।

অসম্ভব কে সম্ভব করেছেন বলে
আজও সারা বিশ্বের প্রিয়,
সকল হৃদয়ে চির অমর বিশ্বকবি 
কবিগুরু এক ও অদ্বিতীয়।



রবি
----------
অরিজিৎ ঘোষ 
-----------------------------

অবর্ণনীয়,অতুলনীয়,অপার্থিব সে,
তাই বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মেটাবার,
তৃষ্ণাটা থাক চিরকাল,
অমরত্বের মহাকাল।
প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্বেষণে বৃথাই কালক্ষেপ,
সে কবিতা লেখেই না কোনোদিন,
তার কথিত কথাই কবিতা,
সবই কবিতার আস্বাদ।
সে একাই,তাকে ঘিরেই সবের আবর্তন,
তারই প্রহরায় অনেক গ্রহ,উপগ্রহ,
তারই আশ্রিত জনেরা কবি,
সে তাই মহৎ মহাকবি।
তার তুলনা সে নিজেই,নিজেরই বিরোধিতা,
তাকে উপমায় টানা আমাদের দুর্মতি,
তুলনা বা উপমা সবই নিষ্ফলা,
সেই আকাশের ধ্রুবতারা।
সে কবিতায়,গানে,রসালাপে,সতত মহিমাময়,
সে তোমারি দুঃখে,যন্ত্রণায় বিরাজিত,
সে তোমারই আনন্দে,হর্ষে স্থিত,
তুমিও তাতেই নিমজ্জিত।
সে মৃত কারণ দেহত্যাগ এক মহাজাগতিক সত্য,
তার দেওয়া শেষ তাই ফেরা হবে না আর,
সে জড় ও জীবে সতত পরিব্যাপ্ত,
সে সত্যিই তাই অবিনশ্বর।

***************************
                                 

পলে জাগে কবি
-----------------------
দীপক কুমার সিংহ
----------------------------

একটা দিনের প্রতি পল
বিশ্লেষণে করি অবিকল |
বিশ্ব কবির লেখা প্রতিক্ষণে
কবিতায় জীবন বর্ণনে ||
পারো যদি করো আহরণ
সুখে শোকে হাসি ক্রন্দন |
প্রকৃতির কত সুন্দর মুহুর্ত
জীবন্ত হয় কলমে অনন্ত ||
কত গানে জাগে প্রাণ
কত মনে আসে উচাটন |
হৃদয়ের মাঝে উঠে স্পন্দন
মেঘে ভাসে প্রিয়ার বার্তামন ||
পাহাড়, নদী, সাগরের জলে
বর্ণনায় রবির কলম চলে |
আকাশ, বাতাস, ভূমি পরে
কলমে কত স্বপ্নকথা উড়ে ||
কত বিরহের কত যাতনা
জাগে কবি কলমে বন্দনা |
সে যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
প্রেরণা জোগায় আমার জাত ||

****************************

 প্রণাম তোমায়
----------------------
 তপন কুমার পাল
 ----------------------------

 রবি ঠাকুর আমার কাছে প্রাণের কবি ভাই,
 ইহার চেয়ে ভালো কিছু আমার জানা নাই।
 জোড়াসাঁকো জন্ম যে তার বাংলা মায়ের ধন,
 তার'ই লেখা গীতি গল্পে ভরে যায় যে মন।

 বিশ্বের গর্ব এমন কবি কোথায় গেলে পাই,
 বিশ্বকবি রবি ঠাকুর তুলনাহীন তাই।
 গদ্য-পদ্য গল্প গানে সাহিত্যে রাজ,
কবির মধ্যে সেরা তিনি পাখির মধ্যে বাজ।

 গীতাঞ্জলি লিখে তিনি বিশ্ব সেরা হয়,
 বিশ্বকবি উপাধিতে বাঙালির হয় জয়।
 বাঙ্গালীদের প্রাণের কবি আবেগ ভরা প্রাণ,
 সারা জীবন এমন ভাবে রেখো মোদের মান।

 প্রতিবছর পালন করি তোমার জন্মদিন,
 শত চেষ্টা করে তোমার শোধ হবে না ঋণ।
 অমর হয়ে থাকবে তুমি সারা জীবন ভর,
 সবার মনে থাকো তুমি বেঁধে সুখের ঘর।
*************************************

 
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ 
----------------------------
সুজন রাজবংশী
----------------------------------

হে কবি সম্রাট, তব চেতনায়  মম হৃদয় উদ্ভাসিত  পলে পলে।
বিমুগ্ধতা লয়ে পড়ি তব রচনাশৈলী, নিত্য আঁখি কমলে।

আয়ত নয়নে ভাসে গো তোমার প্রেম কাব্য-কলা।
শূন্য পরান খুলে দিয়ে, প্রকৃতি হতে লুটিয়ে নিয়েছ, অব্যক্ত বর্ণমালা।

বর্ষাময় গগনে শ্রাবণের ডাকে, তব কবিত্বের প্রথম প্রকাশ।
সেই থেকে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যমান আলোকদ্যুতির মতো,পঙক্তিময় হৃদয়ের আকাশ।

নির্জন  নিবৃত্তে একলা কখনো, হয়তো কোন ভ্রমন বিলাসে ?
নিরীক্ষণ করেছো প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, বিকশিত মনে, হর্ষময় অভিলাষে।

তব ভাবনার আকাশে প্রেমময় ছন্দ দোলে দোলে ভিড়ে!
পঙক্তিমালায় সাজিয়ে লও তব কাব্য মাধুর্যকে ঘিরে।

কাব্য রচনার শিখরে তব নিত্য বিচরণ।
উন্মুক্ত হৃদয়ে গহীন আবেশে, কলমের সিক্ত আলিঙ্গন।

সর্বস্তরে তব স্পর্শে, উন্নত আজ বঙ্গ সাহিত্য।
সমুন্নত চিত্তে, নিজ বৃত্তে, অম্লান হউক তব কবিত্ব।

হে কবিগুরু, তব চরণে বিনম্র চিত্তে জানাই প্রণতি।
কাব্য সিদ্ধতায়, বিশ্বসভা তোমায় দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।

******************************************
                      
   কবিগুরু
----------------------
 নীরদ দত্ত 
---------------------------

কবিগুরু রবিঠাকুর বিশ্বে তুমি বন্দিত
রত্নগর্ভা জননী ভারত তোমায় পেয়ে গর্বিত।
স্বাধীনতার কুরুক্ষেত্রে তুমি সৈনিক অবিচল
পরাধীন জাতির দুঃখবেদনায় ঝরেছে চোখের জল ৷
বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাঁধ ভাঙা সুনামির জলোচ্ছ্বাস
ঘরে ঘরে অরন্ধন , রাখীবন্ধনের উচ্ছ্বাস।
জালালাবাদের নির্মম গণহত্যায় মানবতার হাহাকার!
বর্বরতার প্রতিবাদে 'নাইট' উপাধি করেছো পরিহার।
মানবতার প্রদীপ্ত দীপশলাকা ওগো বিশ্বকবি
বিশ্বমানবতার মুক্তি সংগ্রামে মধ্যগগনের রবি ৷
আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ নিগ্রোদের প্রতি নির্মম অবিচার
প্রতিবাদে তুমি জানিয়েছিলে শাসকে ধিক্কার।
'রাশিয়ার চিঠি'তে নিরন্ন মানুষের অর্জিত অধিকার
লিখেছিলে 'তীর্থদর্শন',সাম্যবাদে করেছিলে নমস্কার।
বিশ্বভারতী মিলনমঞ্চ উদ্ভাসিত বিশ্বভাবধারায়
বিশ্বভুবন ফুলের মালঞ্চ শিক্ষায় সুরভি ছড়ায়।
তোমার কবিতা, নাটক, উপন্যাস, সুরের মধুরিমা
সাতসমুদ্র পেরিয়ে জ্ঞানের আলোয় শোভিত চন্দ্রিমা।
পরাধীন দেশে এনেছ নোবেল হিমালয় সম সম্মান
জগৎ সভায় দিয়েছ ফিরায়ে মানহারা জননীর মান।
ভারত-বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের তুমি রূপকার
লহ প্রণাম ওগো কবিগুরু - ভারতবাসীর কন্ঠহার।

********************************************



আমার রবীন্দ্রনাথ
-------------------------
স্বপন গায়েন
-----------------------------

রবি মানে রবীন্দ্রনাথ রবি জোড়াসাঁকো
রবি মানে ঠাকুরবাড়ি রবির ছবি আঁকো।


রবি মানে সূর্যকিরণ রবিই আকাশ গ্রহ তারা
রবি মানে নোবেল জয় রবিই সেরার সেরা।


রবি মানে গল্প নাটক রবির উপন্যাস
রবি মানে গানের ডালি রবিই বারমাস।


রবি মানে সাহিত্য সৃষ্টি রবি মানে আলো
রবি মানে বাঁচার আশা রবির সৃষ্টি ভালো।


রবি মানে বাংলা সাহিত্য রবি বিশ্ব কবি
রবি মানে অমর কবি রবিই বিশ্ব ছবি।


রবি মানে জাতীয় সংগীত রবিই বাংলা ভাষা
রবি মানে হৃদয় জুড়ে রবির গর্বে ভাসা।


রবি মানে পঁচিশে বৈশাখ রবিই বাইশে শ্রাবণ
রবি মানে তারিখ নয় রবিকে করবো স্মরণ।
  
  *************************************



প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ 
--------------------------------
নিরঞ্জন কুমার রায় 
----------------------------------------
হে রবি তুমি জ্ঞানের দীপ্ত ছবি,
তুমি প্রাণের কবি তুমি বিশ্ব কবি।
তুমি মানুষের কবি তুমি প্রকৃতির কবি,
তুমি সুরের কবি তুমি গানের কবি।
তুমি বিশ্বমানবতার কবি,ঈশ্বর প্রেমের কবি।
তুমি সুন্দরের কবি মানুষের হৃদয়ের  কবি।

তোমারই জন্যে বাংলা ভাষা পেয়েছে মান,
পেয়েছে গৌরব পেয়েছে বিশ্বে রাজার সম্মান।
সাহিত্যে সকল শাখায় তোমার দীপ্ত পদচারণা, 
তোমার সংগীত ছড়িয়ে দেয় সুধারস মূর্ছনা। 
তোমার গল্প,উপন্যাস,নাটক,কাব্যগ্রন্থ, 
বলে মানুষের প্রাণের কথা সুন্দর সুবিন্যস্ত। 

তোমার জ্ঞানের খনি গীতাঞ্জলি কাব্য খানি,
বাংলা সাহিত্যে প্রথম নোবেল দিয়েছে আনি।
বাংলা ভাষা পায় পরিচিতি বিশ্বের দরবারে,
তোমারি লেখনী মাহাত্ম্যের ক্ষুরধারে।
দুই বাংলার জাতীয় সংগীত তোমারই রচনা,
বাংলা মায়ের রূপমাধুর্য করেছো বর্ণনা।

নববর্ষ বরণে আজও তোমারি গান গাই,
তোমারি কবিতায় বাংলার ষড়ঋতুকে খুঁজে পাই।
বাংলা বাংলার মানুষের কথা বলেছো চিরকাল,
তোমার সে অবদান চিরদিন রবে অম্লান।
তোমার জ্ঞানের রাজ্য বড়ই সুবিশাল,
আছে বিস্তৃত আসমুদ্র হিমাচল।
তোমার সেই জ্ঞানের রাজ্যে সূর্য হয়না অস্তমিত,
দীপ্ত রবির কিরণ সম সেথা সদা উদ্ভাসিত। 

তোমার চিন্তা চেতনা মননশীলতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে,
সারা বিশ্বের সাহিত্য ভুবনে পড়েছে ছড়িয়ে।
তোমার সাহিত্যকর্ম বিশ্বের এক অমূল্য ধন,
তাইতো তুমি বিশ্বকবি মানব জাতির প্রাণ।
তব দর্শন জীবনবোধ মানুষকে সদা টানে,
তাইতো তোমার স্হান মানুষেরই হৃদয় কোণে।

 তুমি শুধু নহ কবি মহা মানব আলোর দিশারী, 
তাই তো শয়নে স্বপনে শুধু তোমারেই স্মরণ করি।
পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ পূণ্যদিনে,
তোমাকে করি স্মরণ গভীর ভক্তিশ্রদ্ধা মনে।
এই বিশ্ব আর মানব জাতি রবে যতদিন,
তোমার সাহিত্যকীর্তি বেঁচে রবে ততদিন।

************************************



বিশ্বকবি  আমার রবি 
-----------------------------
সুব্রত কুণ্ডু
--------------------
স্মরণ-মননে 
ক্ষণ-অনুক্ষণে 
হৃদয়ে রয়েছ তুমি, 
তোমার কিরণ 
সদা বিকিরণ 
ধন্য ভারত-ভূমি। 

গান-কবিতায় 
গল্প-গাথায় 
নাটক-নভেল সার, 
তুমি মহাজন 
করি প্রণয়ন 
দিলে কত উপহার। 

কচি-কাঁচাদের 
সহজপাঠের 
রঙ ও তুলির খেলা, 
দেখে শিশুগণ 
পাঠে দেয় মন 
কত না খুশির মেলা। 

গাঁথিলে হে বীর 
গীতাঞ্জলির 
কাব্যে মুকুতা-হার, 
বিশ্ব জিনিয়া 
আনিলে ছিনিয়া 
নোবেল- পুরস্কার।

এল বৈশাখ 
ওঠে বেজে শাঁখ 
পঁচিশ আগত দ্বারে, 
আমি অভাজন 
পূজিনু চরণ 
মল্লিকা ফুল-হারে। 
*****************

আছো সৃষ্টিতে
--------------------
সুবর্ণা চক্রবর্তী
------------------------
কবিগুরু রবি ঠাকুর আছে আমার মননে,
কাব্যসুধা পান করি যে সৃষ্টিকর্ম খননে।
কবে জন্ম নেবে আবার এমন মহা মানব?
যাঁর লেখাতে পালায় যেত হিংসা নামের দানব।

তোমার আলোয় আলোকিত করলে সারা ভুবন,
কাব্য,গল্পে বেঁচে আছো হলোই যদি মরণ।
নোবেল পেলে সাহিত্যতে গীতাঞ্জলি লিখে, 
তোমায় পড়ে আজো লোকে কত কিছু শেখে।

তোমার গানে মুগ্ধ হয়ে মুদে আসে নয়ন,
ভেবে তোমার অসীমতা করি আমি শয়ন।
তোমার সৃষ্টি হবে নাতো কোনোকালেই খর্ব,
যুগে যুগে মহান হয়ে থাকবে কালের গর্ব।

জগৎ মাঝে দেখি না আর তোমার সম তুল্য,
সকলে কি বোঝে বলো নক্ষত্রেরই মূল্য?
বারেবারে নমি গুরু তোমার চরণ তলে,
তোমার নিন্দা যারা করে মরুক সদল বলে।

বিশ্বকবি উপাধিটা পেলে সৃষ্টি কর্মে,
বিশ্বাস তোমার অটুট ছিল মানবতার ধর্মে।
গীতিনাট্য, উপন্যাসে গভীরতা খুঁজি,
কালের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ তোমার কর্মে বুঝি।

**************************************



Friday, April 23, 2021

এসো হে বৈশাখ

এসো হে বৈশাখ





----------------------
পহেলা বৈশাখ। 
ধীরেন গোস্বামী।
-------------------------------



পুরনো যা পুরনো সে,
ইতিহাসের পাতায় থাক,
আজ বাঙলার নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।

আজ আমাদের নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।
পুরানো কে বিদায় করে,
নতুন বছর এলো ঘরে,
নতুন খাতা নতুন পাতা,
নতুন দিনের দিলো ডাক।
আজ বাঙলার নতুন বছর, 
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।

নতুন দিনের এই প্রভাতে,
সবারে করি গো আহ্বান,
পুরানোদের কন্ঠে বেজে উঠুক,
শুভ নব বর্ষ বরণ গান।

পুরনোরাই সাজবো নতুন,
পোরবো নতুন সাজ পোশাক।
আজ বাঙালির নতুন বছর,
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।

আমরা যে সব এগিয়ে চলি,
গতিময় চলারই ছন্দে,
পুরানো কে যাই ভুলে যাই,
নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দে ।

নববর্ষে সবার এইটুকু প্রার্থনা 
দুর হটে যাক--
-- সবার মনের জ্বালা যন্ত্রণা, 
এই আনন্দ সারা বছর
সবার ঘরে থাক,
এসো এসো নতুন বছর--
-- পহেলা বৈশাখ।
আজ বাঙালির নতুন বছর, 
শুভ দিন পহেলা বৈশাখ।


---------------
নববর্ষ 
 তন্ময় আঢ্য 
----------------------------------------



একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় নববর্ষের মধ্যে দিয়ে, 
বিগত বছরের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা সব ভুলে গিয়ে ।

নতুন কে আমরা বরণ করি নানা মুহূর্ত কে সামনে রেখে, 
নতুন নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি  নববর্ষ কে দেখে ।

আমরা বাঙালিরা মনে করি নববর্ষ উদযাপন একটা উৎসব, 
প্রতিটি ঘরেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নববর্ষের আনন্দে মাতে সব।

বাংলা নববর্ষের সূচনা হয় পহেলা বৈশাখ দিয়ে, 
আনন্দ করি নতুন বছরে নানা নতুন স্বপ্ন নিয়ে ।

বাংলা ক্যালেন্ডারে মাস বৈশাখ দিয়ে যায় চেনা, 
বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের শুভ মুহূর্তের সূচনা।

প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ শুভ বলে আমরা জানি,
যত শুভ কাজ ঐ দিনের জন্য ভালো বলেই মানি।

বাঙালি মানেই পয়লা বৈশাখে উৎসবে মজে থাকা, 
নতুন পোশাকে ধুতি-পাঞ্জাবিতে বাঙালিয়ানা ধরে রাখা।

পহেলা বৈশাখে ছোটরা আনন্দ করে সারাদিন, 
নানান ধরনের খাবার আয়োজন হয় যে সেদিন।

দোকানিরা ব্যস্ত থাকে প্রতিষ্ঠানে পূজা অর্চনাতে, 
ক্রেতাদের আমন্ত্রণে বকেয়া ওঠে সাহিত নামেতে।


-------------
নববর্ষ
 স্বপন গায়েন 
---------------------------



বিদায়ের ক্ষণে গুনছে প্রহর
বছর হবে শেষ 
সুখ দুঃখের স্মৃতিতে ভরা
রইবে তারই রেশ।


সুখের ঘরে কান্না এসেছে
দুঃখ করেছি জয়
নতুন বছর খুশিতে ভরা
দুঃখ কান্না নয়।


তীব্র দহন হয়নি শুরু
তবুও বোশেখী ঝড়
ঘর ভেঙেছে কান্না কেড়েছে
উড়িয়ে চালের খড়।


তবুও বাঁচে আশায় মানুষ
আগামী স্বপ্ন নিয়ে
মরা নদীতে আসছে জোয়ার
বুঝেছি হৃদয় দিয়ে।


নতুন প্রভাত সোনালী স্বপ্ন
শুরু হোক নববর্ষ
বঞ্চনা নয় অভিযোগ নয়
আমরা করবো হর্ষ।


ধনী গরীব একসাথে বসে
খাবে কখন অন্ন
এমন শপথ করবো সবাই
এতেই জীবন ধন্য।
-------------



-----------------------
    এসো হে বৈশাখ'

           হিরণ্ময় দত্ত
----------------------------------



বসন্তে দখিনা হাওয়ার দোলায়
প্রাণ জুড়ায় ফাগুন।
পলাশ শিমুলের রঙের খেলায়
মনে প্রেমের আগুন।
বসন্তের বিদায়ে মানুষ অতিষ্ঠ
গ্রীষ্মের খরতাপ প্রবল।
গাছগাছালি রোদে যায় ঝলসে 
জল তেষ্টা পায় কেবল।
বসন্তের বিদায়ে বাংলা নববর্ষের
হয় শুভ পদার্পণ।
'এসো হে বৈশাখ'- বলে সকলে
করি মোরা বরণ।
নববর্ষে বণিকেরা নতুন খাতার
করেন উদ্বোধন।
পয়লা বৈশাখ 'হালখাতা' নামে 
বাংলায় প্রচলন।
বৈশাখে মাঠঘাট সব জলবিহীন
ফুটিফাটা চৌচির।
একফোঁটা বরিষণের লাগি মানুষ 
চাতকের মতো অধীর।
বজ্রনিনাদ সহ রুদ্র রূপে আসে 
প্রবল কালবৈশাখী ঝড়।
চারিদিক ধূলিধূসর লন্ডভন্ড করে
ওড়ায় মানুষের ঘর।
টেলিফোন, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে
তার যায় ছিঁড়ে।
কত মানুষ গৃহহীন, নিরাশ্রয় হয়
গাছপালা ভেঙে পড়ে।
আম,জাম, কাঁঠাল,তরমুজ, ফুটি
রসালো ফলের সমাহার।
জবা, বেলী, জুঁই, চামেলি,গন্ধরাজ
নানান ফুলের বাহার।
পুকুর,নদী,খাল, বিল সবেতেই
জল শুকায়ে যায়।
ঘর্মাক্ত কলেবর শীতল হাওয়ায়
একটু জুড়াতে চায়।
          ******


-------------------------
বৈশাখী অবগাহন
সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)
---------------------------------



শীতের জার লাগা সন্ধ‍্যায় ঝরা পাতা বলেছিল,
আসছে বসন্ত..সাজো নতুন করে,
অবিশ্বাসী মন নিয়ে বিবর্ণ কাঁকন সাজালাম,
ফুলের সাজই হল গ্রীবার কথামালা,
নব বাসন্তিকা ঢেলে দিল বাসন্তী রঙ,
আচ্ছন্ন বসন্তকেও ক্রমে বিদায় জানালাম,
সবাই বলল-"সৃষ্টিছাড়া, ছন্নছাড়া, বিদ্ঘুটে,"
তারুণ‍্য ছেড়ে চিরযোগিনীর বেশ,
"গাছ বাঁচাও, পলাশ বাঁচাও"- স্লোগানে আত্মস্থ,
কে যেন বলল- এ নিজেকে ঠকানো,
নিজের থেকে নিজের পালিয়ে বেড়ানো,
অন্তর্লোক তো যুক্তির জালে বন্দী,
যুক্তি সেখানে খেয়ালী আবেগের পাহারাদার,
হঠাৎ কার বুক পকেট থেকে এল একটা উড়োচিঠি,
সাদা কাগজে আতরের গন্ধ, হার না মানা ভাব,
চিঠিটা যতবারই ফেলে দিই, উড়ে আসে,
কখনও মঁহুয়ায় বিভোল, বা রক্তগোলাপ সাঁটা,
আপত্তিকর রকমের গায়ে পড়া কিন্তু অবশ‍্যম্ভাবী,
চিঠির মালিকের সালিশি করার লোকের অভাব নেই,
আমার প্রিয় মানুষেরাই দল বদলের সারিতে,
আপাত ষড়যন্ত্রটা হঠাৎ কেমন প্রিয় হয়ে উঠছে,
বৈশাখী পূর্ণিমায় গানে গানে হারালাম,
তপ্ত দিনেও বইল সুরেলা বায়ুপ্রবাহ,
কাব‍্যমাস দেখি বড় সর্বনেশে গ্রাস করছে সবকিছু,
মনের এই বিচিত্র ধ্বনি,অনাস্বাদিত আনন্দই কী প্রেম,
প্রশ্নটা অনুচ্চে হলেও উত্তরটা হাতে রেখে গেল,
চিরসখা হয়ে বৈশাখী অবগাহনে, শীতল স্নানে।

Friday, April 16, 2021

রাত জাগা তারা

রাত জাগা তারা 




চোখের সামনে ঘুমিয়ে আছে রাতের শহর 
আলোয়  সজ্জিত এ শহর বড় মায়াময় 
সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে রূপালী আলোর বন্যা 
সেই আলোয় সাঁতার কেটে মাঝে মাঝে এগিয়ে আসছে 
একটা দুটো গাড়ি,  নিঃশব্দে ---
এই রূপের কাছে শব্দরাও হার মানে  ,
চোখ মেলে দেখে ---
বোকা বোকা ল্যাম্পপোষ্টগুলোর একঘেয়েমি দাঁড়িয়ে থাকা  ,
কালো পিচঢালা রাস্তাটার নিঃসঙ্গ বিশ্রাম  ,
বড় বেশি বেমানান লাগে আজ 
চোখ ধাঁধানো নিয়নের আলোও ম্রিয়মান মনে হয়
বিজ্ঞাপনের উঁচু উঁচু হোর্ডিংগুলোর ক্লান্ত অবস্থান 
কোথাও কোনো প্রাণ নেই  , নেই চপলতা 
শান্ত শহর ঘুমায় শুধু দিনের প্রতীক্ষায় 

ব্রিজের নিচে আস্তানা বাঁধা পাগলীটা ঘুমাতে পারেনা 
আর জেগে থাকে রাতের ধূসর তারা ---
তার ঘুম কেড়ে নেয় অজানা ভয়  ,
বুকের মধ্যে জাপটে ধরে পুঁটলিটা
আর ঘন ঘন মাথা চুলকায় ,
বড় বড় নখে উঠে আসে থিকথিকে উকুন
একহাতে মারা যায় না  , তাই দূরে ছুড়ে ফেলে  ,
গালাগালি দেয়,  আরেকহাতে জড়িয়ে থাকে পুঁটলিটা 
মাঝে মাঝে নড়ে ওঠে বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ,
রাতের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে দেয় অনাহূত চীৎকার 
পাগলী সামলাতে থাকে পরম মমতায় 

মাত্র ক'দিন আগে রক্তমাখা পিচ্ছিল পথে
এসেছে মানবশিশু এক ---
দশমাস গর্ভযন্ত্রণা  সয়ে পাগলী মা হয়েছে ।
পাগলীদের বাচ্চার বাবা থাকে না --- শুধু মা
আর সুরক্ষার গন্ডীতে ঘিরে রাখে রাস্তার কুকুর। 
তারাও বোঝে মা হওয়ার যন্ত্রণা 
নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে রাত জাগা তারা 

দিনের সূর্য হোক বা রাতের শহর
পাগলীর বাচ্চার খবর কেউ নেয় না 
বোকা ল্যাম্পপোষ্টগুলো দাঁড়িয়ে থাকে ব্যঙ্গচিত্রের মতন
শহর এগিয়ে চলে উন্নয়নের সোপানে চড়ে। 

Saturday, April 10, 2021

আজি বসন্তে

 আজি বসন্তে 



















বসন্ত আসন্ন 
লক্ষ্মী কান্ত দাস
-------------------------



মুকুলে আকুল আগত বসন্ত 
শিশির স্নানের শেষে ,
পলাশের চোখে চোখ রেখে বলে
 ফাগুন গেছে এসে ।
মাতাল সমীর ব্যাকুল কবির 
দোলা দিয়ে যায় মনে , 
রঙের বাগানে ফুলের আগুন
ডাক দিয়ে যায় প্রাণে ।
আহা মরি মরি আকুলি বিকুলি 
চকোর চকোরী করে গলাগলি
আবির গুলালে মাতোয়ারা প্রাণ 
পুলকিত মদন বানে ।
সখী যতসব করে কলরব 
সখারে দিতেছে ডাক 
মলয় সমীরে গা শিরশিরে 
প্রেমেরই চক্রবাক । 
কুহু কুজনে আজ কৃষ্ণচূড়া মাতে 
চকোর চকোরী মাতে জ্যোৎস্নাতে 
সময় যে মাতে নিজেকে হারাতে 
আম্রমুকুল সুগন্ধ মাখা রাতে ।


-----------------------
 সবুজ শোভা
অশোক কুমার পাইক
--------------------------------



ফাগুন বনেতে সবুজ শোভায়
যায় যে সদাই হেসে,
আকাশে বাতাসে বহিছে মাতন
রূপেরই ভালোবেসে l

হৃদয় দুলিয়া উঠিছে বধূ'রে 
সবুজ পরশে প্রাণে,
ফুলেল হাসিতে দুলিছে সদাই
সুমধুর যত গানে l

গাছের শাখায় পাখিরা গাহিছে
নাচিছে সুরের তালে,
ফুলের কাননে সুবাস ছুটিছে
অলিদের মধু গালে l

সবুজ শোভায় পরাণ জুড়িয়া
যায় গো সবার মনে,
নতুন পাতায় সবুজে মাতিয়া
ভরায় আঁখিতে ক্ষণে l

রঙিন রঙের ফাগুন বনেতে
বধূর স্বপন জাগে,
মনের খুশিতে হৃদয়ে ভরায়
প্রেমের স্মৃতি টা আগে l


---------------
বসন্ত 
সৌমিত্র আচার্য 
--------------------------




বসন্ত 
ছুটি ছুটি আকাশে
কালো মেঘ খেলা করে,
বসন্ত ভেসে গেছে পাখিদের ডানাতে, 
তোর কথা ভাবলেই সন্ধ্যা  কি সকালে 
মাঝরাতে হেসে যায় দূরের ওই তারা গুলো, 
মেখে নিয়ে রোদ্দুর নীল নদী বয়ে যায় 
তোর সুর বুকে বাজে নদীর ওই মোহনায়।
ভালোবেসে মধু খায় মৌমাছি গোলাপে, 
ছোট শিশু পুকরে ঢেউ তোলে দুপুরে, 
কানামাছি খেলা চলে বাবুদের বাগানে।
খিলখিল হাসি দেখে পুঁটি আর কাতলায়, 
রামদেব বসে বসে আরোগ্য বাতলায়।
তুই ময় পৃথিবীর একটাই ভ্যাকসিন, 
মোবাইলে রিং বাজে তোর নাম হলো সিন।
হাসিমুখে ব্যথা গুলো যন্ত্রণা নিরাময়, 
এইটুকু হৃদয়টা কেদারায় শুতে চায় ।
দুই চোখে স্বপ্ন হাজারটা ছবি আসে 
তোর চোখ তোর হাসি স্বপ্নকে নেয় পাশে, 
মন তাই অজান্তে চিৎকারে বলে যায়,  
এ ছেলেটা সব ভুলে তোকে শুধু ভালোবাসে....
কানে কানে বলে যায়  হৃদয়ের টুকরো, 
বসন্ত এসে গেছে বসন্ত এসে গেছে...



------------------------
 ফাগুন এসেছে 
শংকরী সাহা
----------------------------



চারিদিকে আজ ফাগুনের সাজ
রাঙা রাঙা ফুল ডালে,
বাগানের ফুলে প্রজাপতি দোলে
অলিরা নাচছে তালে।

ফাগুন এসেছে আগুন লেগেছে 
শিমুল পলাশ বনে,
আবির ঢেলেছে ভোরের আকাশে
বিধাতা আপন মনে।

বনবীথি সাজে নব পল্লবে
ভ্রমর করছে খেলা,
প্রেমের রঙেতে রাঙিয়েছে মন
এসেছে ফাগুন বেলা।

বসন্ত কালে কোকিলের গানে
মনেতে যে রঙ লাগে,
মৌমাছিরা  গুঞ্জরিয়া যায়
ওই কুসুমের বাগে।

রঙের খেলায় মাতবে সবাই
সকল বিভেদ ভুলে,
আবির রঙের রঙিন দোলায়
দোলবে মানব কুলে।


কেন অমিত হলে?
----------------------------

বীরেন  আচার্য্য 
---------------------



আমার সেই প্রথম বসন্ত 
খুঁজেছিল কি কৃষ্ণচূড়া ? 
তবে লালমাটির সোহাগ ছুঁয়ে বেজেছিল 
নুপুরের রুনু ঝুনু স্বপ্নডাঙার বাসস্টপে ;
লাজুক হাসির অন্তরালে ছিল অনেক না বলা কথা - 
খোঁপার সেই রক্তকরবী দুলিয়ে কয়েকটা শব্দ-
কাল ঠিক এই সময় এই স্বপ্নডাঙার বাসস্টপে । 
যৌবন হতে বসন্ত হারায় ; 
হতাশায় নুব্জ যৌবনে পলাশ ধরায় না নেশা ; 
জীবনের প্রথম বসন্তের রক্তিম ভাবনা 
জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত সৈনিকের কাছে
অতীতের কোন এক দুঃস্বপ্ন ।
কালের নিয়মে পলাশ ফোটে , 
কৃষ্ণচূড়ায় সব প্রেম যেন আকাশ রাঙায় - 
শুধু স্বপ্নডাঙার বাসস্টপে ফেলে আসা বসন্তটা 
স্মৃতিটাকে তোলপাড় করে বলে - 
"শেষের কবিতা " হাতে কেন  ' অমিত ' হ'লে?
 
          -----------------×--------------

Saturday, March 27, 2021

সে কি কেবলই যাতনাময়

সে কি কেবলই যাতনাময় 





















মনের মধ্যে তখন আমার পড়ন্ত বিকেল
পোড় খাওয়া দিনগুলির তামাটে রঙ 
গায়ে মেখে
আমি ঘরপোড়া মানুষ এক 


অনেকেই ভালোবেসেছিল 
কাউকে তো ভালোবেসেও ছিলাম
তাদের ভালো- লাগা ভালো-বাসা সফল-ব্যর্থতার 
টুকরো টুকরো কাহিনী আজ 
কোলাজে বন্দী  হয়ে আছে 

কত ফাল্গুন গেছে সঙ্গে নিয়ে রঙের ডালি 
আষাঢ় শ্রাবণ ধারায় ভিজেছে চোখের কোন 
আমার অমানিশা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে
হারিয়ে গেছে পূর্ণিমার  আকাশ
রোদভেজা পাখির ডানায় শুধুই দীর্ঘশ্বাস 

জলভরা কালো মেঘ ভার বয় শুধু 
বর্ষে না প্রাণ খুলে আর, 
মাঝে মাঝে গুমরে ওঠা আষাঢ় -সময়
করুণ মেঘমল্লার গায় 
আমার শ্রান্তমন বিশ্রাম খুঁজে ফেরে 
মনের ক্লান্তি কুয়াশা হয়ে ঝরে
আজন্ম আসঙ্গলিপ্সা ডুকরে ডুকরে কাঁদে 
এক আকাশ কান্না নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে 
বন্ধুর আশায়। 



Monday, March 22, 2021

অমর একুশে

অমর একুশে 





~~~~~~~
রক্তের দাগ
~~~~~~~~~
শ্যামল কুমার মিশ্র
~~~~~~~~~~~~

রোজ রাতে স্বপ্ন দেখে খোকন। খোকনের স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে এক মা। শতচ্ছিন্ন বেশবাস। আলুলায়িত কেশে স্খলিত পদে হেঁটে চলেছে ঢাকার রাজপথে। কোন দিকে দৃষ্টি নেই। শান্ত স্নিগ্ধ চোখ দুটোতে শীতল বহ্নি প্রজ্জ্বলিত। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ভাষা শহীদ মিনারের দিকে। অচঞ্চল দৃঢ় প্রত্যয়ী সে চলা। মিনারের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে হাতে ধরা পুঁটলি থেকে বের করে কয়েকটি ফুল। ছড়িয়ে দেয় মিনারের পাদদেশে। তারপর আস্তে আস্তে মিনারের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে---ঘুমো রফিক....ঘুমো... আমি তো আছি খোকা....। তারপর কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। উদভ্রান্তের মতো পরনের  ছেঁড়া টেনা দিয়ে দেওয়ালের গায়ে ঘষতে থাকে যেন কিছু মোছার এক দুর্মর চেষ্টা। হাতের আঙ্গুল বেয়ে টপটপ রক্ত ঝরে পড়ে।খোকন চিৎকার করে ওঠে---এ তুমি কি করছ মা? উত্তর নেই। খোকন আবার ও প্রশ্ন করে। ধীরে ধীরে মাথা তোলে মা। বলে ওঠে--- মুছছি, রক্তের দাগ। রফিকদের রক্তের দাগ। দেখছ না, দেওয়াল জুড়ে কত রক্ত.... মায়ের দুচোখে জলের ধারা। 
খোকনের ঘুম ভেঙে যায়। অপসৃয়মান মায়ের মুখটা ধীরে ধীরে আবছা হয়ে আসে।
~~~~~~~~~
কল্যাণ  ভট্টাচার্য্য
~~~~~~~~~~~~
একুশ আমার অহঙ্কার  
~~~~~~~~~~~~~

একুশ মানে তো ছাত্রের রক্তাক্ত লাশ 
আর বুলেটে ভেজা লাল ঘাস। 
একুশ মানে তো প্রতিবাদ আর ধিক্কার  
রক্তে ভিজে যায় বাংলার অক্ষর। 
একুশ মানে তো দরদী বুকে চোখের জল
বুটের শব্দে শূণ্য হয় মায়ের কোল। 
একুশ মানে তো শহীদের বদলে মাতৃভাষা 
বুলেটের চোখে নামে কালো ধোঁয়াসা। 

বন্দুকের নিশানায় রক্ত নদী বহতায়
বসন্তে বাঁধা সবুজ প্রাণ হারিয়ে যায়
চোখের জল তৃষ্ণা মেটায় হাহুতাশে
স্তম্ভিত পৃথিবী বিবেকহীন অত্যাচারে। 

লাশের পাহাড়ে মাতৃভাষার অহঙ্কার  
বুটের নীচে লেগে থাকা রক্তে ধিক্কার 
নির্ভীক মশাল বসন্তের শানিত চোখে 
কালো পৃথিবীর কম্পন ঈগলের ঠোঁটে। 

একুশ মানে তীব্র প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ 
বাংলা আমার অহঙ্কার বোঝে নি নির্বোধ।

~~~~~~~
মাতৃভাষা 
------------------
কৃত্তিবাস ওঝা 
=================


ভাষা শিক্ষার সমবাহু ত্রিভুজ, --
পড়া বলা আর লেখা 
অন্তঃ সম্পর্ক দূর্বল হলে 
তিনজন হয়ে যায় একা ।

জোনাকির মত শব্দমালার আলো নিয়ে 
মাতৃভাষা জ্বলতে জ্বলতে 
নিজেই তৈরি করে নিজের ভূবণ ।
সভ্যতা,  সংস্কৃতি,  প্রেম ভালোবাসা, দিনগুজরান 
মাতৃভাষা সবার মাধ্যম ।

বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা
ভাষা মায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে 
আবুল,  জব্বার,  বরকত, সালাম, রকিককে 
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে করতে হয়েছে মৃত্যুবরণ ।
পৃথিবীর ভাষা তালিকায় 
বাংলা আজ না কি পঞ্চম মহাজন 
এ সম্মান পেতে অসংখ্য শহীদের  হয়েছে রক্তক্ষরণ ।
অনেক আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে 
করছি তাদের স্মরণ ।

ভাষা শিক্ষার সঞ্চয়ে অসংখ্য গুপ্তধন 
গ্লোবাল এক প্রজন্ম তৈরির নেশায় 
মাতৃভাষাকে গামছা পরিয়ে 
ভাষার সম্মান করছি হরণ ।

ভাষার সম্মান, ভাষা  শহীদদের মর্যাদা রক্ষা
আজ বড় প্রয়োজন ।
মাতৃভাষাকে খুন করে 
কোন ভাষা চাপিয়ে দেবার চেষ্টার বিরুদ্ধে 
চালিয়ে যেতে হবে আন্দোলন ।


~~~~~~~~~~~
  রক্তে রঞ্জিত দেশ 
~~~~~~~~~~~~
 সুবর্ণা চক্রবর্তী
 ~~~~~~~~~~~~~

এ দেশ আমার মাতৃসমা 
এ দেশ রেখেছি অন্তরে,
এ প্রাণ করিব বলিদান
এ আমি যুদ্ধে চিরতরে।

এ ভূমি আমার ভালোবাসা 
এ ভূমে জন্মে গর্বিত,
এ ভূমি দেখিতে অপরূপা 
এ ভূমি হবেনা খর্বিত।

এ দেশ মুক্তি সেনাদের 
ও তাঁরা এনেছে স্বাধীনতা,
এ দেশ রক্তে রঞ্জিত 
ও তাঁরা মানেনি অধীনতা। 

ও তাঁরা জীবিত পতাকায় 
ও যাঁরা এনেছে পরিচয় 
এ দেশ তাঁদের অবদান
এ দেশ রহিবে অক্ষয়।


~~~~~~~~~~
একুশে ফেব্রুয়ারি
~~~~~~~~~~
সুমিত রায়।
~~~~~~~~~~

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ উনিশশো বাহান্ন সাল,
আমার ভাইয়ের রক্তে বাংলার মাটি হয়েছিল লাল।
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা শুনে সকলেই উঠলেন ক্ষেপে,
প্রতিবাদের মিছিল নিয়ে ভাইরা পড়লো ঝেঁপে।
মায়ের ভাষায় কথা বলে আমরা কত সুখ পাই,
বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা দাবী ছিল তাই।
আমার ভাইয়ের রক্তের বদলে ভাষা পেলাম তাই,
মায়ের ভাষা রক্ষা করতে শহীদ হলো আমার ভাই।
একুশ এলে মায়ের কোলটা ফাঁকা মনে হয়,
ভাষা আন্দোলনের শহীদ ভাইরা মোর হৃদয়ে রয়।
একুশ হলো শ্লোগান মুখর বিজয় পাওয়ার স্বাদ,
বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া ভাইয়ের আর্তনাদ।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা বাংলা আমার প্রাণ,
আমার ভাইয়া জীবন দিলো রাখতে ভাষার মান।
ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে ভুলে মায়ের স্নেহ,
অত্যাচারীর বুলেটের আঘাতে খোকার নিথর দেহ।
বাংলা আমার মায়ের ভাষা গাই একুশের গান,
মায়ের ভাষায় কথা বলে আমাদের জুড়ায় মন প্রান।
একুশে ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার হলো জয়,
রফিক, সালাম, শফিক,বরকত কে জীবন দিতে হয়।
শহীদ হলো দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য,
ফেব্রুয়ারির অমর একুশ আজ বিজয় মাল্যে ধন্য।
বাঙালী হলো বীরের জাতি আজ বলছে বিশ্ববাসী,
সন্তান হারা মায়ের মুখেও আজ গর্বে ভরা হাসি।
বাংলা ভাষার জন্য  ভাইরা দিলো জীবন বলিদান,
দেশ বিদেশে বাংলাভাষা এখন পাচ্ছে কতো সম্মান।
একুশ মানে শহীদ ভাইদের স্মৃতির পাতায় দেখা,
একুশ মানে তাদের জন্য নিজের ভাষায় লেখা।
একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটা স্মৃতিতে ফিরে আসে,
রাজধানীর পথ ভরে গিয়েছিল আমার ভাইদের লাসে।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাইদের স্মরণ করে,
শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবকে দিই ভরে।

Saturday, March 20, 2021

আমার আকাশ

আমার আকাশ 












আমার উদাসী মন আকাশ ছুঁতে চায় 
দু'চোখে দুরন্ত রোদ্দুর, 
আরো দূরে চলে যাই --- নীল থেকে নীলে 
মহাশূন্যের একেবারে বিন্দু সীমানায় 

যে পথে অপার প্রেম , পলাশের লালিমা  ,
যে পথ দীর্ঘ ছায়াঘেরা  , বনফুলের হাসিময়  ,
সে পথে আকাশ আমার নতজানু হয়  ,
অঝোরে প্রেম ঝরে কৃষ্ণচূড়ায়  ।

আমার আকাশ জুড়ে শিমুল ফোটে  ,
তারার মালায় বধুঁবরণ হয়, 
সাক্ষী থাকে ধ্রুবতারা  , অরুন্ধতী , অঙ্গীরা 
হাজার তারার মালায় সোনালী শপথ  ।

আমার উদাসী মন আকাশকে ভালোবাসে 
আরো গভীরে --- নীলে ডুবে যায়  ,
কখনো স্বপ্ন খোঁজে বিন্দুকনায়  ,
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটদুটি দিশেহারা হয়  ।

আধো ঘুমে পাই কত গভীর আশ্লেষ  ,
দীর্ঘচুম্বন শেষে তৃপ্ত ওষ্ঠদ্বয়  ,
বিনিসুতোয় গাঁথা পরে দুটি হৃদয় 
আকাশ ভালোবেসে শুধুই আমার হয়  ।

Saturday, March 6, 2021

আমার ফাগুন

আমার ফাগুন







আমার অলস সময় বয়ে চলে 
তোমার কথা ভেবে ,
অচিনপুরের যাত্রী তুমি ,
আমায় কি আর নেবে? 

ভিন দেশেতে যাত্রা তোমার 
ভিন্ন বন্ধু মহল, 
আমার দেশে ফাগুন এলেও 
চৈতী হাওয়ার টহল। 

তোমার দেশে অশোক পলাশ
আমার ফাগুন আগ ,
তোমার আকাশ আবীরসম
আমার রক্তের রাগ। 

আমার কোকিল দুঃখে কাঁদে
সাথিহারা হয়ে  ,
তুমি শুনছ সুমিষ্ট গান
সুরের ঝরনা বয়ে। 

তবুও মনের মাধুরী নিয়ে 
পথ চেয়ে থাকি, 
বন্ধু তুমি  ,সুজন তুমি ,
আমার দৃষ্টিহারা আঁখি। 

Wednesday, January 20, 2021

সময়

সময়



সময় যদি ফিরে যেত
বারো বছর আগে ----
অনেক নোনাজলের হিসেব যেত মুছে ,
অনেক লেখনী হারাতো ঘুমহীন রাত ,
নিঃসারে মাথা রেখে ডাইনিংয়ে
বো-বো করে ঘুড়তে থাকা ফ্যানটাও
স্বস্তি পেত ।
কলম ছবি আঁকতো ফুল - নদী - পাখির ,
সময়ের দীর্ঘশ্বাস সুখশ্বাস হয়ে 
ছড়াতো অক্সিজেন ।
আর সোডার বোতলের মত
জীবন উথলে উঠতো আনন্দে .....

সময় যদি ফিরে যেত
কুড়ি বছর আগে ----
প্রাণোচ্ছ্বল জীবন তবে ঝড়না হতো ,
চারপাশে থাকত বাহারী ফুলের সমারোহ ,
উচ্ছ্বাসে গেয়ে উঠত পাখি ,
পাহারের মাথায় দেখা যেত সোনার মুকুট .....

সময়টা এগিয়ে এল বারো বছর পর ---
শ্যাওলায় নোংরা দূষিত জীবন ,
বিন্দু বিন্দু জমে বিষের বাষ্প ,
ঠোঁটের নীচের তিলটা থাকে অপেক্ষায়
শেষরাতে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষায় ,
বোধে আসে না আর শিউলির সুবাস ,
নিকোটিনের গন্ধে ভরে অবুঝ হৃদয়
সচল মস্তিষ্ক বেছে নেয় আত্মহনন ।

Friday, January 8, 2021

কথারা

কথারা



কথারাও পথ হারায় ---

যে কথা একদিন
কলকল্লোলে ফল্গুধারায় বইত ,
আজ তা নিষ্প্রাণ পাথর ।
ফুলে ফুলে দুলে দুলে বেড়ানো কথাদের
ছন্দ গিয়েছে হারিয়ে ।
রামধনু রঙের পাখনা মেলে যে কথারা
বিচ্ছুরিত হত আকাশে
আজ তারা শুধুই ধূসর
পাখিদের মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো কথাদের
ডানা গিয়েছে কাটা ......

কথারাও বিপথগামী হয় -----

আকস্মিক বেপথু জীবনে
অকস্মাৎ খেই হারায়
লাটাইয়ের সুতো ছিঁড়ে উড়ে যাওয়া ঘুড়ির মত
আর ফেরেনা নিজস্ব ঠিকানায়

কথাদেরও অভিমান হয় ------

একরাশ যন্ত্রণা বুকে কথারাও
ফুঁফিয়ে কাঁদে , বালিশ ভেজায়
স্নানঘরে কান্নাভেজা কথারাও
উষ্ণতা চায় একবুক মরুতৃষ্ণা নিয়ে

কথারাও ভালোবাসে -----

স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দেয় হৃদয় ,
হৃদয়ের শুষ্ক গহ্বরে তোলে জলতরঙ্গের অনুরণন
প্রাণে আনে অক্সিজেনের জোয়ার
কোষে কোষে ভালোবাসার উন্মাদনা
কথার পুষ্পবৃষ্টিতেই উর্বর হয় সৃষ্টি
ফুল হাসে শুভেচ্ছায় ।

Tuesday, January 5, 2021

আমি যে পথশিশু

আমি যে পথশিশু



ক্ষুধার তাড়নায় পেট জ্বলে যায়
খাইনি সারাদিন কিছু ,
 দে না দিদি দুটো পয়সা --
আমি যে পথশিশু ।

গায়ে আমার নোংরা জামা ,
মাথার চুলে জটা ,
তাই বুঝি তোর ঘেন্না লাগে,
ছুড়িস পয়সা কটা ?

তোদের কাছে সামান্য যা ,
আমার পেট ভরায় তা --
তবু তোরা মেরে তাড়াস
যেন ঝামেলাটা !

বাবার স্নেহ , মায়ের আদর 
তোদের জন্য সব ----
আমার আছে শূণ্য জীবন
ক্ষিদের কলরব ।

তোদের ছেলে ইস্কুলে যায় --
পরে নতুন পোষাক
আমার পোষাক ছিন্ন শত ,
পোষাকময় দাগ ।

চুলের চরুনি চোখে দেখিনি ,
পাইনি পায়ে জুতো ,
দুটো পয়সা পেলে পেটটা 
ভরবে দিনের মতো ।

তোদের ছেলে থাক না সুখে ,
খাক না দুধে ভাত ,
আমার শুধু একটি বায়না ---
কাটুক আঁধার রাত ।

আমিও পাবো জামা , জুতো ,
ব্যাগভর্তি বই ---
হইনা আমি অনাথ শিশু ,
পথশিশুই সই ।

Thursday, December 24, 2020

ওরা খালপাড়ে থাকে

ওরা খালপাড়ে থাকে


কৃষ্ণা দ্বাদশীর চাঁদ তখন মধ্যগগনে --
কুয়াশামাখা রাতের আদুল গায়ে হিমেল পরশ ,
বহুদিনের দাবদাহের জ্বালার অবসান ,
দু'হাত ছড়িয়ে উপভোগ করছে সময় ......

খালপাড়ের বস্তিতে একটুকরো বিছানায় 
জ্বরে পুড়ছে সাত বছরের শিশুপুত্র ,
শিয়রে বড় বোন -- বছর আটের ।
সন্ধ্যার অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে
মা গিয়েছে কাজে --- অন্ধকার গলিপথে ,
যে পথে শহরের বিত্তবান বাবুরা
দু'চোখে কামনার আগুন ছড়িয়ে দাঁড়ায় ,
তাদের ঠোঁটের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কষাটে লালসা ,
শরীর পেতে শুষে নিতে হয় তাদের ধর্ষকাম পৌরুষ
তারপর সন্তানধারণের যন্ত্রনায় ছুটে যেতে হয় বস্তিতে --

একফালি চাঁদের আলো তাদের জীবনে
পূর্ণিমা হয়ে আসেনা কখনো ,
পিতৃহীন অনাথ তর্পণে তাদের আহুতি হয় ,
রাতের অন্ধকারেই মিলিয়ে যায় তাদের পরিচয় ,
সভ্যতার আগুনের স্পর্শ 
উষ্ণতার আবেশ বয়ে আনে না তাদের জন্য

ভাঙা চালের ফাঁক দিয়ে পিছলে আসে
একফালি আকাঙ্ক্ষার রোদ্দুর ।
তাকেই আঁকড়ে ধরে শিশুমন ,
ভবিষ্যতের কল্পনায় বাড়ে ।

মায়ের মমতা আসে দিনান্তে ভাতের সুঘ্রাণে ।
একমুঠো ভাত , একটু রোদ্দুর তাদের প্রত্যাশার দর্পণ ।

ওরা যে খালপাড়ে থাকে ।

Wednesday, December 16, 2020

ভালোবাসার চাদর


ভালোবাসার চাদর

ভালোবাসায় মোড়া চাদর পেয়েছি এক
আরোহণ করেছি তাতে --
নীল আকাশে সাদা মেঘের মত
চাদর চলেছে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে ---
কত মাঠ-ঘাট , নদী-সাগর , পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে
চাদর পৌছেছে এক মায়াবি জগতে
স্বর্ণালী আভায় পূর্ণ সে জগৎ ।

বর্তমানের কোলাহল-ক্রন্দন-বঞ্চনা-জিঘাংসা
স্তিমিত হচ্ছে ক্রমে ---
না-পাওয়ারা পূর্ণ হচ্ছে সব পেয়েছির দেশে ,
নিরাশার অন্ধকার ডুবে যাচ্ছে আশার আলোকে ,
মাঠ উপছে পড়ছে গর্ভবতী সোনালী ধানে ,
দু'হাতে গ্রহণ করছি অমৃত-প্রদায়ী কল্লোলিনীর অঞ্জলি ,
পাখির কুজনে কলরিত আত্মার সুজন ,
নিষ্পাপ ফুলের হাসিতে ঝরছে শিশুর সারল্য ,

ভাষাহীন ভাসমান ভেলা ভাসিয়ে চলেছে দূরে ---
অন্তহীন আশার খেয়াল-খুশির খুনশুঁটি গায়ে মেখে

সে যে আশার জগৎ , ভালোবাসার জগৎ
সীমাহীন ভালো লাগা হৃদয় জুড়ে ।


Thursday, November 26, 2020

শঙ্খ মামার বেড়াল

শঙ্খ মামার বেড়াল



শঙ্খমামার আদুরে বেড়াল ,
নামখানি তার ভজন ,
গোঁফজোড়া তার ইয়া বড়ো ,
সাত কিলো তার ওজন ।

রোজ সকালে মামার সাথে
ঘুম থেকে তার ওঠা ,
ব্রেকফার্ষ্টে খাবে দুধে
পাউরুটি এক গোটা ।

দুপুরবেলা ভাতের সাথে
কাটা পোনা চাই ,
শরীরটা তো রাখতে হবে
খেতেই হবে ভাই ।

সন্ধ্যেবেলায় একবাটি দুধ
সঙ্গে চারটে মেরি ,
মামা বলেন , ইহজগতে
ভজনই তার বেড়ি ।

ভজনই তার বন্ধু বান্ধব ,
ভাই বোনও ভজন ,
ভজনই তার দেবতাস্বরূপ
ভজন আত্মার স্বজন ।

ভজন যদি বাইরে বেড়োয় 
আঁধার দেখে মামা ,
ঠোঁট ফুলিয়ে হাত পা ছুঁড়ে
কেঁদে ওঠেন - রামা -- ।

রামাচাকর পড়ি-মড়ি
উর্দ্ধশ্বাসে ছোটে ,
ভজনকে না পেলে ফিরে
ভাগ্যে কি যে জোটে ।

এদিক- ওদিক ঘুড়ে ফিরে
হণ্যে যখন রামা ,
ঘরে তখন গভীর ঘুমে
ভজন এবং মামা ।

Friday, November 20, 2020

ছুঁয়ে যায় প্রাণ

ছুঁয়ে যায় প্রাণ



নীল আকাশে ঠোঁট ডোবালাম আজ ,
হিমেল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে যায় ,
এমন করে ভালোবাসার বাতাস
বলছে ডেকে আয়রে কাছে আয় ।

এতদিনের খরায় ফাটা জমি
হঠাৎ করে পেল নতুন প্রাণ ,
আকাশ-জমিন মিলিয়ে দিল আজ
জনমকালের সজীবতার গান ।

এবার বোধহয় নতুন সৃষ্টি হবে
দশদিকেতে তারই আভাস পাই ,
গাল ফুলানো নতুন কুঁড়িগুলির
মনের মাঝে খুশির সীমা নাই ।

শিউলি-বোঁটার গন্ধ ছুঁয়ে গেছে
বৃন্তে এখন নতুন প্রাণের ছায়া ,
কচি কচি সবুজ পাতার ফাঁকে
জড়িয়ে আছে অলৌকিক মায়া ।

পাতার মাঝে চোখ মেলেছে কারা ?
ভেঙেছে বোধহয় পদ্মকলির ঘুম ,
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়
নবীন সূর্যের আলতো হাসির চুম ।

প্রভাত মেঘে সোনার আলো হাসে
সেজেছে কেমন পানায় ভরা পুকুর ,
শারদ-মেঘে জলছবির মতন
শিশির ঝরে পড়ছে টাপুর টুপুর ।

এমন করে সারা শরীর জুড়ে
ছড়িয়ে পড়ে অতল প্রেমের আবেশ ,
সৃষ্টিসুখে আবেগঘন মন
রাখবে বুকে ভালোবাসার রেশ ।

Tuesday, November 17, 2020

দিনের শেষে

দিনের শেষে


দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে
ঘরে ফেরার টান ,
অন্ধ বাউলের একতারাতে
দিন শেষেরই গান ।

সকাল হলে যে ছেলেটার
পেটে ক্ষুধার ধার ,
সন্ধ্যা হলে গুটিশুঁটি
ক্লান্ত শরীর তার ।

ফুটপাতের ঐ জায়গাটুকু
মৃত্যুঘুঘুর ফাঁদ ।
দিনের শেষে সেইখানেতেই
হাসে সোনার চাঁদ ।

চাঁদ যেন তার খেলার সাথি
অনেক কালের সই ,
জনমকালের পরমাত্মীয়
তবু , সঙ্গে থাকে কই ।

যে মেয়েটা দিনের আলোয়
সাত চড়েতেও চুপ ,
দিনের শেষে আঁধার রাতে
তারই অন্য রূপ ।

ঘরে যে তার অভাব শত
ছোট্ট ভাই আর বোন ,
দিনের শেষে খুঁজে ফেরে
অন্ধগলির কোন ।

Wednesday, November 11, 2020

আমি ঈশান

আমি ঈশান





আমি ঈশান ---
ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের জুনিয়র টিচার ।
বাবা-মার একমাত্র সন্তান ।
বাবার বড় ইচ্ছা ছিল ---
তার ছেলে মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে ---
সুযোগও পেয়েছিলাম ,
হায়ারসেকেন্ডারি পরীক্ষায়
আহামরি রেজাল্ট না করলেও
জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভালো ফল নিয়েই
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছিলাম ।

আমার বাবা একজন গেজেটেড অফিসার
চাকরীজীবনের প্রায় শেষ দিক

কলেজে আমার তখন থার্ড ইয়ার চলছে
পড়াশুনার ভীষণ চাপ
বাড়ির সাথে যোগাযোগ করারও সময় নেই
তখন মোবাইল ছিল না 
একদিন এমার্জন্সি কল এল কলেজ হোষ্টেলে
অসময়ে --- হৃৎপিন্ড উঠল লাফিয়ে ---
শিরায় তো একই রক্ত ---- তাই
খবর ছড়ায় রক্তে ---
রূদ্ধশ্বাস নেমে আসি ---

---- হ্যালো ----
---- বাবা , তুই বাড়ি আয়
মায়ের আহত গলা কাঁপিয়ে দেয়
---- কেন মা -----
---- তোর বাবা আর নেই ---
মুহূর্তে দুলে ওঠে আমার পৃথিবী
আকাশ ভেঙে কোথায় বাজ পড়ে কড়্ কড়্ কড়্

শান্ত নীরিহ সদাহাস্যমুখ আমার বাবার মৃত্যু
সহজ পথে আসেনি ---
ভালোমানুষ বাবার কোমল হৃদয়ে
পেয়েছিলাম নখের আঁচড় ,
কতগুলি নরপিশাচের উন্মত্ত লালসা
ক্রমে কলঙ্কিত করছিল 
শরতের আকাশের মতো বাবার মনটাকে
কখনো কখনো জলে ভার হত সে আকাশ
কিন্তু বৃষ্টি ঝরতো না 
অমারবিকতার সাথে যুঝতে যুঝতে
ব্লকেজ বাড়তে থাকে হৃৎপিন্ডের

তারপর সেই দিন ---
মিথ্যার হাতে সত্যের ঘটে চরম লাঞ্ছনা
অপমানে অপমানে ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ
মুখ থুবরে পরে মাটিতে
চারপাশে নরপিশাচের নগ্ন উল্লাস

আমার অসহায় বাবা আর কথা বলেনি

কি দোষ ছিল আমার বাবার বলতে পারেন
সমাজের নগ্নরূপটা চিনতে পেরেছিল, তাই---
ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল মিথ্যার ফানুস
চিহ্নিত করতে চেয়েছিল নরখাদকদের
ব্যাগভর্তি টাকার মূল্যকে মূল্যহীন করে
ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল সমাজের কতগুলি --
ভন্ড কালো হাত ,
তাই , আমার সহজ সরল বোকা বাবার
কালো বিষাক্ত এই পৃথিবিতে
বেঁচে থাকার ছারপত্রটুকু কেড়ে নেওয়া হল,
ভেঙে দেওয়া হল এক সত্যের মেরুদন্ড।

রাতে এখনো আমি স্বপ্নে দেখি
আমার সদাহাস্যমুখ বাবার-
বলেন -খোকা-
সমাজে মানুষের বড় অভাব
মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় 
আসলে একদল পিশাচ
তারা ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ থেকে
দুধ কেড়ে খূতে পারে ,
শকুনের মতো দৃষ্টি নিয়ে ঘোরে সমাজের আনাচে কানাচে
এরা মানুষের মূল্য বোঝে টাকার অঙ্কে
তুই ভিড়িস না যেন এদের সাথে
ওরা ভয়ানক ,

পারলে মানুষ কর ---
কচি কচি বুকে ভরে দে সততার বাতাস ,
বিশুদ্ধতার আলো খেলুক চোখে ,
মানুষের মূল্য বুঝুক মানবিকতায় ,
মুছে ফেলুক কালো পৃথিবীর ছায়া ---

তাই --- আমি আজ ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের
জুনিয়র টিচার
বিটেক , ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিটা
আমার আর পাওয়া হল না ।