Saturday, October 27, 2018

চিঠি - অন্তিম পর্ব

চিঠি - অন্তিম পর্ব

চিঠিটা একটা প্রেমপত্র । জানতে পারলাম দিদির কাকার বাড়ির পাশে এই বিনয়ের বাড়ি । কাজকর্ম ভালোই করে । আর দেখতেও মন্দ নয় । সব মিলিয়ে দিদির কাছে বেশ লাগে । বিনয় অনেকদিন ধরেই দিদিকে আভাসে ইঙ্গিতে ওর মনের কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু দিদি কখনো সাড়া দেয়নি । যদিও এখন বুঝতে পাচ্ছিলাম দিদি কেন এত ঘন ঘন কাকার বাড়ি যেতে চাইত । কিছুদিন পর দিদি আরেকটা প্রেমপত্র আর একটা ছবি দেখালো । বুঝলাম ছবিটা বিনয়বাবুর ।
এদিকে সুহানীদির মা আমার বাবাকে অনেকদিন ধরেই দিদির বিয়ের ব্যবস্থার কথা বলছিলেন । বাবাও পাত্র খুঁজতে লাগলেন । এই অবস্থায় একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরলে দিদি ম্লান মুখে আমার ঘরে এসে দাঁড়াল । বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে । 
- কি হয়েছেরে দিদি । দিদি আমার দিকে তাকিয়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল । চোখদুটো বেশ ফোলা । আগেও হয়ত কেঁদেছে । 
- আমায় কাল দেখতে আসবে ।
- কে !
- চাকদা না কোথা থেকে ।
- তো ....
- আমি বিধয়কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না । তুই বল না তোর বাবাকে ।
- আ - আমি !
আমি জানতাম দিদির সাথি হিসাবে আমি যতই বড় হই না কেন বাবার কাছে এধরনের কথা বলা আদৌ সম্ভব নয় ।কিন্তু দিদি এখন কি করবে ।

আমার নিরুত্তর মুখ দেখে দিদি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেল । তারপর বলতে লাগল - আমার কপালটাই খারাপ । ছোটবেলায় বাবাকে হারালাম ।বাবার ভালোবাসা কি জিনিস জানিনা । বড় হয়ে যাও বা একজনকে ভালোবাসলাম তাও কপালে টিকল না । ..... যাকগে । চল খাবি চল ।
চাবি দেওয়া পুতুলের মত আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম । মনের ভিতর খচখচ করতে লাগল । কিন্তু কি করতে পারি আমি ।
পরদিন আমি যখন স্কুলে যাব তখন দিদি লুকিয়ে আমার হাতে একটা ইনভেলপ খাম দিল - চিঠিটা পোষ্ট করে দিস । দিদির মুখটা খুব শুকনো লাগছিল । চোখদুটো লাল । মাথার চুল উসকো-খুসকো । দিদিকে আশ্বাস দেবার মত ভাষা আমার ছিল না । নীরবে শুধু মাথা নাড়লাম ।
রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম । আর দিদির কথা ভাবছিলাম । কখন যে পোষ্ট অফিস পেড়িয়ে এসেছি খেয়ালই নেই । খেয়াল হল স্কুলের গেটের সামনে এসে । ফেরার সময় পোষ্ট করে দেব ভেবে ব্যাগে মলাট দেবার জন্য যে খবরের কাগজটা আমি বেছে রেখেছিলাম পুরোনো কাগজগুলোর মধ্যে থেকে তার ভিতরে রেখে দিলাম ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মলাট দেবার জন্য সেই খবরের কাগজটা আর ব্যবহার করা হয়নি ।আর চিঠিটাও তার মধ্যেই থেকে গেছে । যদিও দিদিকে যখনই দেখেছি অপরাধবোধে পীড়িত হয়েছি । আর প্রতিজ্ঞা করেছি কালই স্কুলে যাবার সময় চিঠিটা পোষ্ট করে দেব । কিন্তু ঐ পর্যন্তই । চিঠিটা যে আর পোষ্ট করা হয়নি সুদীর্ঘ সাত বছর পর তার সাক্ষ্য মিলল ।
চাকদার সেই ছেলেটির সঙ্গেই সুহানীদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে আজ প্রায় সাত বছর হল । দুই মেয়ে স্বামী সংসার নিয়ে বেশ সুখেই আছে দিদি । বিনয়কৃষ্ণর কথা ওর মনে আছে কিনা জানিনা । কিন্তু ওর প্রেমের পাখির একটা পালক আমার কাছে গোপনে রয়ে গেছে - এটা সে জানতেও পারল না । জানলে হয়ত আমাকে কখনো ক্ষমা করত না কিংবা হয়ত কিছুই হত না ।

সমাপ্ত 

Thursday, October 25, 2018

চিঠি - তৃতীয় পর্ব

চিঠি - তৃতীয় পর্ব

না , বাবা সেদিন ফিরেছিলেন না । পরদিন দুপুর প্রায় দুটো নাগাদ বাবা ফিরেছিলেন । সেদিনটা কোনো একটা পর্ব উপলক্ষ্যে স্কুল ছুটি ছিল । আমি দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘরেই ছিলাম । বাবর ডাকে একছুটে বাইরে এসে দাঁড়ালাম । কিন্তু বাবার সাথে ঐ মেয়েটি কে ? ইতিমধ্যে বাবা আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে । আমিও আনন্দে নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকলাম ।
পরে জেনেছিলাম ঐ মেয়েটি আমার বাবার কেমন সম্পর্কের ভাগ্নী হয় ।  আমার থেকে বছর পাঁচ সাতেকের বড় হবে । রঙটা ফর্সার দিকেই । দেখতে খুব সুন্দর না হলেও খারাপ নয় । কয়েকদিনের মধ্যেই ওর সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেল ।
শান্তিপুরে সুহানীদির এক কাকা থাকতেন । দিদি এখানে আসার পর কাকা প্রায়ই এসে ওকে নিয়ে যেতেন । এভাবে বছর পাঁচ সাত কেটে গেল । এখন দিদি দেখতে আরো সুন্দরী হয়েছে । যৌবনের পরশে তার দেহ মন সতেজ সরস । আমিও তখন কিশোরী লাজুক লতা । কাজেই দিদির সাথে আমার হৃদ্যতা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।
আগেই বলেছি শান্তিপুরে দিদির কাকার বাড়িতে দিদি মাঝে মাঝেই বেড়াতে যেত । ইদানিং দিদি দুদিন পরপরই আমাকে কাকার বাড়ির কথা বলতে লাগল ।
এরকম বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন কাকার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে দিদি আমার কানে কানে বলল - একটা জিনিস দেখবি ?
- কি জিনিস ?
- এদিকে আয় । আমার হাত ধরে টানতে টানতেআমার পড়ার ঘরে নিয়ে গেল । হাতে ওর পার্সটা । ঘরে ঢুকে প্রথমে দরজার পর্দাটা ভালো করে টেনে দিল । মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে পার্সটা খুলে আমার হাতে ভাজ করা একটা কাগজ দিয়ে রহস্যজনকভাবে হাসতে লাগল । 
- কি এ ?
- খুলে দেখনা ।

আগ্রহের আতিশয্যে ভাঁজ খুলে ফেললাম । একটা চিঠি । দিদির নামে । ইতি - বিনয় । 
- বিনয় কে ?
-  আঃ পড়ে দেখনা ।

আমি রূদ্ধশ্বাসে চিঠিটা পড়তে লাগলাম । দিদি তখন আমার টেবিলক্লথের কোনাটা আঙুলে জড়াচ্ছে আর খুলছে । মুখটা ভারী অদ্ভুত । দিদির এরকম মুখ আমি আগে কখনো দেখিনি ।

চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব

চিঠি - দ্বিতীয় পর্ব


আজো সবই ঠিক ছিল ।শুধু বাবা তার জায়গাটিতে নেই দেখে বাবার কথা মনে পড়ল সারাদিন পর ।
- মা , বাবা কখন আসবে ?
- দেখ - এই ট্রেনে হয়ত আসতে পারে ।
- এই ট্রেন কটায় মা ?
- সাড়ে সাতটা মনে হয় ।
- এখন কটা বাজে মা ?
- সাতটা দশ । সারে সাতটা বাজতে আর কুড়ি মিনিট বাকি আছে ।
- ওঃ কুড়ি মিনিট কতক্ষণে হবে ।
- জানিনা - যা - শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন ।

অগত্যা মার ধমক খেয়ে আবার স্বস্থানে ফিরে এলাম । আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সাড়ে সাতটা বাজার ।
...... কতক্ষণ হয়ে গেল । এখনো কি সাড়ে সাতটা বাজে নি । বাব্বা সাড়ে সাতটা বাজতে এতক্ষণ লাগে । আমার মনে হচ্ছিল সেদিন সাড়ে সাতটা বাজতে যে সময় লেগেছিল ততক্ষণে বোধহয় পৃথিবীটা ধীরে সুস্থে এক পাক ঘুরে আসতে পারবে ।
যাই হোক সেদিন ঘড়ির নিয়মেই সাড়ে সাতটার ঘন্টা পড়ল । মনটা ছটফটিয়ে উঠল । পড়ায় মন বসছে না । বাবা আমার জন্য কি কি আনতে পারে মনে মনে তার একটা লিষ্ট করতে লাগলাম । বারবার মনে হচ্ছে বাবা বোধহয় এক্ষুনি এসে পড়বে । কিন্তু না । অনেকক্ষণ হয়ে গেল বাবা এল না । আমি ভয়ে ভয়ে মার কাছে গেলাম ।
- কৈ সাড়ে সাতটা তো বেজে গেল ।
- কি জানি হয়ত এই ট্রেনে আসে নি ।

মনটা খারাপ হয়ে গেল । বইয়ের সামনে এসে বসলাম । বইয়ের দিকে যে তাকাতে ইচ্ছে করছিল না সেটা বলাই বাহুল্য ।
কি আর করব । স্কুলের কিছু কাজ ছিল সেগুলো সেরে শুয়ে পড়লাম । মাকে বললাম বাবা এলে একসাথে খাব ।
ঘুমিয়ে পড়লে কোনোদিনই মার ডাকে জেগে উঠে আমি রাতের খাবার খাইনি ।বাবাই আদর করে তুলে খাওয়াতো ।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে পেটে বেশ ক্ষিদে অনুভব করলাম ।বুঝলাম রাতে খাওয়া হয়নি । তবে কি বাবা রাতে ফেরেনি ?

Wednesday, October 24, 2018

চিঠি - প্রথম পর্ব

চিঠি - প্রথম পর্ব

পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি আছে ....
পুরনো বই খাতা বিক্রি ......

এই যে বই খাতা বিক্রি .... এদিকে এস ....
বই খাতা নয় । গত বছরের পুরনো খবরের কাগজগুলো জমে আছে । গতকাল ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে সেগুলো সব বার করা হয়েছে । এখন শুধু বিক্রির অপেক্ষা ।
কাগজগুলো আনতে গিয়ে নীচের কাগজটা হাত থেকে পড়ে গেল । বাকিগুলো কাগজওয়ালার কাছে দিয়ে এলাম । পড়ে যাওয়া কাগজটা নিয়ে যাচ্ছি - মাঝখানটা মোটা মোটা লাগল । খুলে দেখি ইনভেলপ খামে লেখা একটা চিঠি । চিঠির মুখটা এখনো খোলা হয়নি । ঠিকানা শান্তিপুরের ।  কোন এক বিনয়কৃষ্ণ মজুমদারের শিরোনামে । প্রেরকের নাম সুহানী কর্মকার - আমার দূর সম্পর্কের এক দিদি ।
আমি তখন বেশ ছোট । একদিন সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে মনে পড়ল সারাদিন তো বাবাকে দেখিনি । তাই তো । বাবা কোথায় গেছে । ছুটে মার কাছে গেলাম -
         - মা বাবা কোথায় ?
         - কলকাতা গেছে ।
         - কখন ?
         - সকালে ।

মনে পড়ল ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখিনি । সকালে প্রতিদিনই আমাকে পড়তে যেতে হয় বাড়ির সামনের মাঠটা পেড়িয়ে কাজলদিদির কাছে । যথারীতি পড়ে এসে স্নান খাওয়া করে স্কুল । তারপর স্কুল থেকে ফিরতে না ফিরতেই গেটের সামনে অপেক্ষা করে থাকে আমার খেলার সাথিরা । আমিও কোনোরকমে একটু খেয়েই ছুটি মাঠে । মাঠ থেকে ফিরতে  ফিরতে সেই সন্ধ্যা । কাজেই এর মধ্যে কে বাড়িতে আছে না আছে তার দিকে লক্ষ্য থাকে না । পড়তে বসলেই মনে পড়ে । কেননা তখন বইয়ের তুলনায় সারাদিনে ঘটে যাওয়া ছোটবড় ঘটনাগুলো মনের কোনে ভীড় করে বেশি । আর পড়তে বসে এসব কাহিনী উপকাহিনী শোনাবার প্রকৃষ্ট মানুষ হল আমার বাবা । বলাই বাহুল্য পড়ার থেকে আমাদের গল্প হত বেশি । তারপর যখন ঘুমে ঢলে পড়তাম তখন মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলত - সারাদিন এত ধকল কি শরীর নিতে পারে চল চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড় ।

Tuesday, October 23, 2018

এসো আবার

এসো আবার


সৃষ্টির আনন্দে মেতে আছি
বহুদিন পর -

এখনো তো আছে দেখি অস্তিত্ব তোমার

আমার বিনিদ্র রাতের ঘুম খায়

ঘুনপোকা
চোরাপথে
আবার কাঁদায়
এতদিন শুনেছি যে আর্তস্বর
বহুদূরাগত -
সে কার , সে বা কার
মাতন লাগে শিরায়
চোখে লাগে হৃৎপিন্ডের জ্যোতি
নানা রঙের
সযত্নে বন্ধ রাখি মুখ
বুঝি বা 
আবার হারায়


লেখনী থামে না তবু

পারিজাতের সৌন্দর্য
খাতার পাতায় ।

Monday, October 22, 2018

কেমন করে

কেমন করে

চেতনা আমার দাঁড়িয়ে আছে
কঠিন পথের রিক্ত বাঁকে
আশার হিমেল পরশ নিয়ে
বারে বারে তোমায় ডাকে
তুমি এখন কোন সুদূরে
নিঃস্ব মনের স্মরণ - সাথি
বুঝি ছিল অবুঝ খেলা
ধরা পড়েছে জালিয়াতি
রিক্ত আমি নিঃস্ব আজ
এই ছিল কি তোমার চাওয়া
বাসনা তোমার পূর্ণ হবে
মিটবে সকল চাওয়া পাওয়া
কিন্তু যদি বারেক ভুলে
দাঁড়াই গিয়ে সামনে তোমার
কেমন করে থাকবে ফিরে
দেখব শত চেষ্টা তোমার ।

আহ্বান

আহ্বান

ভেঙে ফেলো আজ সিংহ দুয়ার
মুক্তির ডাক শোনো
প্রাণ খুলে আজ প্রশ্বাস নাও
নেই যে গো ভয় কোনো


ক্ষণে ক্ষণে আজ শিরায় শিরায়
কোন সে আবেশ মাতন লাগায়



ঐ মাতন যে আর কোনোদিন
পাবি না কক্ষনো ।

আয়রে ভেসে , খেলে হেসে ,
সৃষ্টির নবধারায়
আয়রে পাগল , বন্ধ আগল 
ভেঙে ফেলে ছুটে আয়
শোন শোন শোন , ফিসফিস করে
কে যেন কথা কয়
মনের কোনে সঙ্গোপনে
উতল হাওয়া বয়
হাওয়ার বেগে পাল উচিয়ে
চল চলে যাই দূরে
যেখানে উদাস পথিক গাইছে
গান উদাসী সুরে ।

আলো , আনো আলো

আলো , আনো আলো

সারারাত জেগে থাকি ভোরের প্রতীক্ষায়
স্তব্ধ চরাচর
শোনা যায় নিঃশ্বাসের ব্যর্থ আস্ফালন
কবেকার অমানিশার ঘোর
এখনো আমার চোখে মুখে
আলো খুঁজি আমি , আলো

শিরায় শিরায় বয়ে চলে ক্ষয়রোগ
কখন অজ্ঞাতে চুপিসারে হানা দেয় মনে

মাথায় তীব্র বোধ , সংকট ঘনায়
নরম পাশবালিশও কঠিন মনে হয়
তোমার হাতে যখন উষ্ণতার আবেশ
মননে আমি কোন নিবিড় শীতলতায়
চারদিকে বরফ কঠিন প্রাচীর আমার
শুনি শুধু অবরূদ্ধ আত্মার তীব্র হাহাকার
পথ খুঁজি আমি , প্রশস্ত পথ

তুমিও কি পেয়েছ পথে আলোর সন্ধান ?

বাঁচতে দাও

বাঁচতে দাও

এলোমেলো পায়ে পথ চলি

নির্জন একাকিত্বময় পথ নয়
অগনিত মানুষের কলরবে মুখর
অজস্র গাড়ির হর্ণ
ভালো লাগে -
একাকিত্বের নির্জনতা থেকে
জনসমাগমে ফিরতে

আবার নেমেছি আমি

সন্ধ্যার আলোছায়া গায়ে মেখে
বৃষ্টিধৌত কালো পিচঢালা রাস্তায়
পথচলতি ব্যস্ত মানুষের সাথে
অন্তরের আর একটু কাছে
আর একটু উষ্ণতার কাছাকাছি
কলরব উঠুক - 
নয়ত -
প্রয়োজন হবে অন্য পৃথিবীর।

Sunday, October 21, 2018

বাস্তব

বাস্তব

চারপাশে কতশত সরলতার মুখোশ
লাল নীল হলুদ সবুজ কত বর্ণের মুখ
সব মুখে এক ভাষা ক্লেদাক্ত অতি
মাকালের যেমন রূপের গরব
অযত্নে রোপন করা ছোট্ট চারাগাছ
তবুও আশা , দেবে রক্তরাগ ফুল

ফুলের হাসি খেলেছিল বর্ণহীন হয়ে
এতদিনে পৃথিবীতে নামল প্রলয়

বর্ণহীন ফুল হল গাঢ়রক্তলাল

Thursday, October 18, 2018

উন্মেষ

উন্মেষ

সৃষ্টির নিরন্তর প্রয়াস
তাই -
পাথরের বুকে বাজে প্রাণের গান
শিলা ভাসে জলে

সৃষ্টির নিরন্তর প্রয়াস
তাই -
তোমার ঘন কালো চুলে
জাগে সোহাগের ঝিকমিক
উদাসীন বেপথু মন
আবার ঘরমুখো হয়
কবেকার কান্নাভেজা গোধুলী বিকেল
আনন্দে আবিল হয়
অনাবিল মন
করে সৃজন
নতুন দিনের ভোর ।

Wednesday, October 17, 2018

মেয়েবেলার গল্প

মেয়েবেলার গল্প
একটু যাই না মা । কি হবে গেলে । আমি কি তবে এবার ঠাকুরও দেখতে পাবনা ।
অনুসূয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে । অধৈর্য হয়ে বলে , আর কতবার বলব মানু । পুজো হয়ে যাক বাইরে থেকে দেখবি । ঠাকুরের কাছে যাবি না । কাওকে ছুঁবিনা ।
মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারেনা টিয়া । ওর বন্ধুরা বারবার ডাকতে আসছে পুজোমন্ডপে যাবার জন্য । কিন্তু মায়ের কড়া নির্দেশ এসব হলে ঠাকুর ঘরে যাওয়া বা যারা ঠাকুরের কাজ করে তাদের ছোঁয়া যাবে না ।
তের বছর বয়স টিয়ার । বড় হয়ে উঠছে সে । মহিলা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপে পা দিয়েছে সে । আজ দ্বিতীয় দিন । একটা শারীরিক প্রক্রিয়া তার ছোটোবেলাটাকে এক নিমেষে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । প্রতিবছর প্যান্ডেলে বাঁশ ফেলা থেকে খেলা শুরু হয় সেখানে । বাঁশ বাঁধার পর বাঁশের উপরে উঠে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার মজাই আলাদা । তারপর একটু একটু করে প্যান্ডেলে কাপড় লাগানো হয় । ঠক ঠক করে পেরেক ঠোকার শব্দ কানে গেলে আর ঘরে থাকা যায় না । স্কুল থেকে ফিরে কখন প্যান্ডেলে যাবে সব সময় সেটাই মন তোলপার করে । স্কুলে গেলেই কি পড়ায় মন থাকে । মন তো পড়ে থাকে প্যান্ডেলে । তারপর ঠাকুর আনা । কত কসরৎ করে বড়োরা সেই ঠাকুর মন্ডপে তোলে । এই ধর ধর , এদিকে একটু কাৎ করে , আরে মাথা বাঁচিয়ে , নীচু কর নীচু কর । ওঃ সে যে কি উত্তেজনা সে আর কাকে বোঝাবে টিয়া । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে অঝোর ধারে ।
রাগ হচ্ছে খুব । কেন এসব হয় । বন্ধুরা সবাই কত মজা করছে । প্যান্ডেলে পুজোর ঢাক বাজছে । অঞ্জলিও দিতে দেবে না মা । বাবাটাও যেন কেমন হয়ে গেছে । অন্য সময় তো যত অন্যায় ই করি না কেন বাবা ঠিক মার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয় । আর আজ সেও মার সাথে এক ই কথা বলছে । দুর্গাঠাকুর তুমি কিছু করতে পার না ।
অনুসূয়ার মনটাওভালো নেই । সত্যি তো । এটা একটা শারীরিক প্রক্রিয়া । এর সাথে পুজো আচারের কি সম্পর্ক । মানুষের মল মূত্র ত্যাগের মত এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা । যত বাধা শুধু মেয়েদের বেলায় । বিজ্ঞান কত উন্নত হয়েছে । মেয়েরা কি না করছে । চাঁদ সূর্য তারা কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছে মেয়েরা । আর আমরা ছাপোষা মানুষগুলো এসব সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বসে আছি ।এত বছর ধরে চলে আসা সংস্কারকে ঠেলে সরাতে পারছি কই । বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অনুসূয়ার ।
কইরে টিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে মা । প্যান্ডেলে যাবিনা । হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতর এসে ঢোকে টিয়ার বাবা । পিছন পিছন টিয়ার বন্ধুরা । অনুসূয়া টিয়া দুজনেই অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকায় ।
আরে হা করে দাঁড়িয়ে আছে দেখ । প্যান্ডেলে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে কাল থেকে । রিহার্সাল দিতে হবে না । তোর তো অনেক নাচ আর আবৃত্তি তোলা আছে । এদের নিয়ে রিহার্সাল করে নে । তিন দিনে কিভাবে কিভাবে অনুষ্ঠান নামাবি সেটা ঠিক করে নে । রবীনকাকু একটু পড়ে আসবে তোর সাথে কথা বলতে ।
অনুষ্ঠানের কথায় আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে টিয়ার মনটা আনন্দে নেচে ওঠে । সবাইকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যায় টিয়া । একটা জম্পেষ অনুষ্ঠানের ছক কষতে হবে ।
অনুসূয়া মনে মনে ঠাকুরকে প্রণাম জানাল । মেয়েটা মন খারাপ না করে এসব নিয়ে মেতে তো থাকতে পারবে কটা দিন । তবে মনে মনে ঠিক ই বুঝল মেয়ে অন্তপ্রাণ টিয়ার বাবারই কারসাজি এসব । যাতে পুজোর দিনকটা একমাত্র মেয়েটার ম্লান মুখটা না দেখতে হয় ।

Tuesday, October 16, 2018

শরৎ - ছেলেবেলা - এখন

শরৎ - ছেলেবেল - এখন

শরৎ এসেছে -
পদ্মের বুকে জমে উঠেছে মধু
যেমন প্রথমরাতে জমে নববধূর হৃদয়ে প্রেম
লজ্জনত বদন - প্রথম প্রকাশের আকাঙষা


মধুর চঞ্চলতা দেখি শিউলির বৃন্তে

সবুজ পাতা ঢাকা অজস্র শ্বেত শুভ্র তারা 
ভোরের প্রতীক্ষায়


নীল সাদার অপূর্ব সমাবেশ আকাশে
প্রকৃতির ক্যানভাসে - আর আছে কাশ


.... এদের মায়ায় ঘিরে মোহনীয় তুমি
উজার করা বাঙালী হৃদয় প্রনত হয়
তোমার মোহিমায়
দশস্ত্রশোভিত তুমি দশভুজা
কানে আসে ভদ্র মহোদয়ের জলদগম্ভীর স্বর
" যা দেবী সর্বভূতেষু ...."
ফিরে আসে শৈশবস্মৃতি , হারানো ছেলেবেলা
চোখ খোঁজে আবার আপনজন , হারানো স্বজন
সময় - চক্র পারি দেয় বহুদূরে


আবার ফিরে আসি 'মাতৃ' আহ্বানে
বাস্তবের অনবদ্য টানে স্মৃতিকে বিস্মৃত হয়ে
ছোট্ট মেয়ের হাসিমুখে এ কার হাসি ভাসে


শরৎ মেঘেও বর্ষে যেমন , হায় -
আমার ছেলেবেলা ।

Monday, October 15, 2018

পুজোর ছড়া

পুজোর ছড়া

ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
পুজো এলো কাছে
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
মনটা ভালো আছে ?
ঢ্যাম্ কুরকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
শিউলি তলায় ভোর
শরৎ এলো , বর্ষা তবে
সাঙ্গ কান্না তোর !
কলার পাতায় হাসির ঝলক
চাঁদের পিঠে চাঁদ
শিশুর হাসি নতুন জামায়
সমুদ্র অগাধ ....


ঢ্যাম্ কুরাকুর , ঢ্যাম্ কুরাকুর
হারিয়ে গেছে ঊষা
বেলা হলো তৈরী হওগো
নতুন জীবন তৃষা
নতুন করে চাওয়া পাওয়া
কেন পেছন ফেরা
ভুলে যেও , সকাল ছিল
শিউলি ফুলে ঘেরা
মধ্যাহ্নের ক্ষররৌদ্র
তপ্ত বায়ুর শ্বাস
আর পাবে না , আর পাবে না
প্রভাতকালীন সুবাস....


তবুও , আবার দুর্গাপুজো
নতুন পরিচিতি
শরৎকালীন অনুভূতি
প্রাপ্তি আর ইতি ।

Saturday, October 13, 2018

অন্তর্ভাষ

অন্তর্ভাষ

এ মন আমার হালকা এমন
যেন বাবুই পাখির বাসা
দোলে , আর শুধু দোলে


পলকা হাওয়া আলতো চুমে
ভরিয়ে দিয়েছে সকাল
সোনালী রঙের পাপড়ি খুলে
নির্নিমেষে চাঁপার কুঁড়ি হাসে


আমার আকাশভরা হাজার ঢেউয়ের মাতন
মেঘ নয় - ঠিক যেন কালিন্দী নদী


স্বর্ণচূড়া দ্বৈরথ বাস্তব আর কল্পনা
দুই যুযুধানে সমানে সমানে
চাপান উতোর চলে


তারপর বাস্তবের কঠিন মাটিতে
রক্তাক্ত কল্পনা আমার মুখ থুবড়ে পড়ে


ফিরে আসি প্রকাশ্য রাস্তায় ।

পুজো নষ্টালজিয়া

পুজো নষ্টালজিয়া

পুজো আসে পুজো যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
ফিরে আসে সময় আমার নষ্টালজিক হয়ে
'আশ্বিনের শারদপ্রাতে '.....


এতো যে কাশ দেখি , শুভ্র মেঘ
তবু যেন জলছবি শব্দ জব্দ লাগে
হুতাশনে খুঁজি শুধু পুজোর প্রাণ
আমার একলার আকাশে...


এখন মাটির গন্ধে বারুদের ঘ্রাণ
দুষ্প্রাপ্য প্রেমে এখন আদিম লালসা
সময় বিকায় শুধুই শ্যেনের থাবায়
তারই রক্তাক্ত প্রতিক্রিয়ায়...


বাতাস বড্ড বেশি হিমশীতল
সম্পর্কের উষ্ণতা হার মেনে নেয়
রঙের ফোয়ারা ঘিরেও দলীয় উত্তেজনা
আমার ক্লান্ত মন নষ্টালজিক হয়...

মা আসছেন

মা আসছেন


নৌকো প্রস্তুত কর

আর তো মোটে নেই দেরি
মা আসছেন ....
মাটির গন্ধ গায়ে মেখে, প্রবল স্রোতে
পাল তোলো , বৈঠা নাও হাতে

বৈঠা তো হাতিয়ারও হয়

আদিম মানুষ যেমন
গাছের ডালকে করেছিল হাতিয়ার

আমরা তো সভ্য হইনি....
তাহলে কিভাবে -
নিষ্পাপ শিশুর গায়ে বেঁধাই তীক্ষ্ম সূচ
কিভাবে ছুঁড়ে মারি অসহায় শিশু
কিভাবে রাতের আঁধারে আস্তাকুঁড়ে
ছুঁড়ে ফেলি সদ্যজাত সন্তান

আমরা একুশ শতকের সভ্যতাদর্পী মানুষ
তাই ধরনী দ্বিধা হয়না , চোখ বন্ধ করে রাখে