Wednesday, October 11, 2023

জীবনানুভূতি -- এম এ হালিম শিশির


জীবনানুভূতি
এম এ হালিম শিশির 
তারিখ : ১১/১০/২০২৩ ইং
খুব বেশী লোভ নেই আমার,
টিনের ছালের সাথে বৃষ্টির শব্দ,  রাতের নির্জনতার সাথে একাকী ভাবনা, এতটুকুই যে আমার পছন্দের তালিকা। 
খুব উচ্চবিলাসী জীবনের স্বপ্ন নেই আমার, 
কুঁড়িঘর বাসস্থান, সামাজিক যোগাযোগ 
আর আপনত্বের সম্পর্কের সিকিউরিটি, 
এতটুকুই আশ্বাসের ইচ্ছানুভূতি আচ্ছন্ন মনাকাশ,
খুব চাওয়া-পাওয়ার বিষণ্নতা নেই আমার,
দিনের পরিশ্রম শেষে তার উপযুক্ত পাওনার হিসাব,
তাতে অন্নের উপার্জনের পেটের কান্না নিঃশেষ, 
অতিরিক্ত লোভের ঘৃণা, আর হিসাবকষে সংসারের হালচাল, 
এতটুকুই জীবনের চাওয়া নিয়ে অসীমতা ছোঁয়া। 
অফুরন্ত কোনো অহংকার নেই আমার, 
হাসিখুশি নিয়ে রোদ-বৃষ্টির সাথে প্রেম, আর দিনের শেষে জীবনসঙ্গী কে আগলে ধরে প্রশান্তির এক ঘুম, এতটুকুই আমার পার্থিব ভাবনার সমষ্টিকরণ একান্ত নিজস্ব চেতনা।
দীর্ঘকাল বাঁচার স্বপ্ন নেই আমার,  
যদি পাপ পুঞ্জিভূত জীবন হয় আমার!
পরকালের আসামী,
বাঁচতে চাই শতাব্দীর পর শতাব্দী, 
যদি দেখি আমার দ্বারা মানবের মুখেমুখে রক্তিম হাসি,
আর পরকালের  শান্তির ফয়সালা স্বরূপ পূণ্যের মজুদদারী।


Tuesday, October 10, 2023

আগ্রাসন -- বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য

 আগ্রাসন
 বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য্য
  ১০/১০/২০২৩
জগৎ জুড়ে চলছে দখলদারির লড়াই,
বুদ্ধি আর বাহুবলের অদম্য প্রতিযোগিতা;
কখনও একটুকরো জমি, 
কখনও বা আস্ত নারী শরীর, 
কখনও ক্ষমতা ও আসন টিকিয়ে রাখার !

বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য-খাদক সম্পর্কে অদ্ভুত মাৎস্যন্যায়!
ব্যক্তিগত লাভের অঙ্কে যথেচ্ছ গোঁজামিল,
সামগ্রিকতার ধার ধারার দায় ঠেকে না কারও।
গরীবের রক্ত চুষে পরিপূর্ণ কুবেরের ভাণ্ডার,
গরীবের অশ্রু নদীতে নিত্য অবগাহন,
দুদিনের জীবনে লুটেপুটে খাওয়ার জরুরি তাগিদ;
সামরিক বরাদ্দ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়নে
মিলিত বরাদ্দের  চেয়ে দশ গুণেরও বেশি।

প্রকৃতিকে ভোগ উপভোগ.... সব শেষ করে--
নিঃশেষ করার তাগিদে নেমেছে যুযুধান ,
এবার এক মহাসঙ্কট সৃষ্টি না করলেই নয়;
কত প্রাণ, কত সৃষ্টি, স্থাপত্য, ইতিহাস --
ভেসে যায় স্মৃতির অতল গহ্বরে , 
যান্ত্রিক জীবনের ঘেরাটোপে আটকে আছে
অস্ফুট শৈশব, প্রতিভাময় যৌবন -- স্রষ্টা বার্ধক্য!

ছাড়পত্র পেয়েছে আগ্রাসনের একচেটিয়া বাজার,
অজস্র নিরীহ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত সভ্যতা!
কী জানি, এবার হয়তো দেখতে হবে ----
লাঠির মাথায় স্থাপিত টুপিকে স্যালুট না করার অপরাধে প্রাণদণ্ড হবে অসহায় জনতার !
যারা ক্ষুধায় দিতে পারে না একগ্রাস খাদ্য, 
পিপাসায় দিতেই পারে না বিশুদ্ধ জল, 
বিশ্বাসের বিনিময়ে প্রতিদান দেয় বিশ্বাসঘাতকতা,
মেকি সভ্য পোশাকের আড়ালে বর্বর লোলুপতা;

আর একটা মন্বন্তর চাই , চাই নবযুগের সূচনা,
আবার নতুন করে পাঠ শেখোনো হোক ---
অপরের প্রাণ কেড়ে নেওয়াতে বাহাদুরি নেই,
বাহাদুরি আছে - 
নিজেকে বিপন্ন করেও অপরের প্রাণ বাঁচানোতে ,
শারীরিক নিগ্রহে নয়, প্রেম বিনিময়ে,
ধ্বংসের বিভীষিকায় নয়, সৃষ্টির মহোৎসবে।

Monday, October 9, 2023

নৈবেদ্য -- ডঃ অশোক খাড়া

 নৈবেদ্য 
 ডাঃ অশোক খাঁড়া 
 9.10.2023 
বস্তির দেবশিশু ছুটে এসে থামালো আমার কলমের দৌড়। 
কবিতার শব্দগুলো যেন শূন্যে ঝুলে পড়ল ।
আগমনীর সুরে যেন ভেসে এল বিষাদের ঝড় ।
ক্ষুধার পাত্রটা হাতে নিয়ে 
সে বলে, " আমি পেট ভরে শুধু খেতে চাই। আমায় খেতে দে।"
বোবা কলমটা এখন নিশ্চল প্রস্তর  মূর্তি। 
শিশুটা আবার বলে, " আমি চাই না পুজোর পোশাক , আমায় দুমুঠো খেতে দে।"
আমার অবচেতন হৃদয়ে জেগে ওঠে আমার শৈশব। 
ছিন্নবস্ত্রে , অভুক্ত দেহ নিয়ে 
আমি দেখেছি, পণ্যের দোকানে 
সারি সারি পুজোর পোশাক। 
আমি দেখেছি ক্ষুধার রাজ্যে
দেবশিশুর দীর্ঘ সারি। 
যেন এক অসাম্যের সমান্তরাল রেখা, দেবী দর্শনার্থীর পাশে ।
চেতনার সাম্রাজ্যে ফিরে আসি আমি। 
আমি অর্ঘ্য করি নৈবেদ্য দেবশিশুর চরণে,
ঈশ্বর যেখানে বিরাজমান হৃষ্ট মনে।

জীবনের ধারাপাত -- মালিয়া দে

 জীবনের ধারাপাত
 মালিয়া দে
 ৯/১০/২৩
জীবন এক রঙ্গমঞ্চ,
এখানে তোমায় রাজা - ফকির, সাধু - ভন্ড
শিশু - বৃদ্ধ কত চরিত্রেই অভিনয় করতে হয়।

জীবন হলো রেসের মাঠ,
শুধু দৌড়,দৌড় আর দৌড়েই যাওয়া,
থামা মানেই পিছিয়ে পড়া, হেরে যাওয়া।

জীবন মানে হাজার স্বপ্ন,
স্বপ্ন গুলোই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়,
সব স্বপ্ন পূরণ হয়না, তবু স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন।

জীবন এক গোলকধাঁধা,
বয়স যত বাড়বে, ততই দায়িত্ব কর্তব্য ,সমস্যা
চক্রের মত ঘিরে ধরবে, বেরোনো বড়ো কঠিন।

জীবন যেন যুদ্ধক্ষেত্র,
সমাজ - সংসার, পরিবার - পরিজন, রোগ - ব্যাধি,
এমনকি মনের সাথেও প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলতে হয়।

জীবন পাটিগণিতের সরলঅংক,
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, বন্ধনী সবকিছুই থাকে,
যত দিন যাবে, ততই তার সমাধানের দিকে এগোনো।

জীবন হলো ক্ষণিকের পান্থশালা,
জন্ম থেকে মৃত্যু, এই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর মাঝে
কত সম্পর্কের জাল বোনা, কত বিচ্ছেদ ,আসলে একা ।

তবুও জীবন বড়ো সুন্দর ,
স্নেহ - ভালোবাসা , প্রেম - প্রীতি, দয়া - মায়া, 
আবেগের বন্ধনে জড়ানো এক অনুভূতির আকর।

Saturday, October 7, 2023

প্রকৃতির প্রতিশোধ -- বিক্রমজিৎ মান্না


প্রকৃতির পরিশোধ 
বিক্রমজিৎ মান্না 
০৬/১০/২০২৩
ঝাঁঝাঁ রৌদ্রের চাতক ডাকা নয় এ গ্রীষ্ম ক্ষণ ।
আকাশ জুড়ে মেঘের পর মেঘের আস্তরন 
নিয়ে এলো সজল বেলা  বঙ্গলোকের পরে
রিমঝিম যতো বৃষ্টির গান তড়িৎ শিখায় ভরে  
ঋতুরানী বর্ষা । তবুও কেন খামখেয়ালি খাসা
সারা দিনমান রক্ত চক্ষু     লয়ে ও অগ্নি শিখা 
ঐ আকাশে মাখা ! ?

ঘোর কলিতে ধ্বংসের ডাক দিচ্ছে ধরণী
সবুজায়ন এর সমাধান বলছে বিজ্ঞানী ।

দেশ নেতার সময় নেই  বিজ্ঞানীর  ব্যথা 
ধৈর্য্য ধরে শোনার মতো ছেঁদো বাক্‌ অযথা ।
ঢালতে ব্যস্ত টাকার বস্তা ভোটের মুখ চেয়ে
দিন রাত্তির প্রতিশ্রুতির যাচ্ছে মিথ্যে গেয়ে ।
তাই ---
গাছ রোপণে অর্থ বাজেট বিমুখ যতনে
এই বর্ষার ক্ষণে ।

বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তর দূষণে হয়েছে ফুটো ।
বানের জলে যেমনি ভাষে অবাধ খড়কুটো
তেমনি ভাষবে দেশ,দুনিয়া প্রকৃতির রোষানলে 
ঘোর বর্ষায়  তাই এ আকাশ রৌদ্রের কবলে ।

অজ্ঞ রাজা, রাণীর তরে দূষণে প্রকৃতি ভরে
উঠবে যত দেখবে প্রজা আপন বিনাশেরে  ।

তাই ----
ঘোর বর্ষায় কাঠ ফাটা রোদ আনবে ডেকে খরা
সুনামির মতো জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবী আর্তস্বরা
হয়ে ভাষাবে সকল জীবন এমনি অকালে 
ধ্বংস  নিদান উঠবে কল্লোলে ।

এসে আয়লা,আমফান আর টর্নেডো, টাইফুন
রক্ত চোখে করবে মানুষ খুন  ।
ফিরবেনা হায় সম্বিত তবু ধিক্ ও দুর্মতির 
যতই দেখুক  চন্দ্রদেশে সায়েন্স অগ্রগতির  ।

ভাবছে দেশের পিতা কেবল সামরিক শক্তি
কোটি টাকা ব্যয়ে মারণাস্ত্রে বাড়ালেই মুক্তি ।

মারণাস্ত্রে শত্রু রুধিবে প্রকৃতি যে রুষিবে ,
তারে ----
না দিয়ে যতন  করলে লালন প্রতিশোধ হায় নেবে
আজ বা কাল দুদিন পরে কে এ কথা বোঝাবে
কুলাঙ্গার , নরশ্বাপদ রাজনীতি বাদশায় ?

ছায়া সুনিবিড় বনবিথী নীড়  প্রকৃতির হৃৎ ম্পন্দন,
সে হৃদয় ফেলি খুঁজছে মানুষ অমৃতময় জীবন
দেদার অর্থ ঢেলে শত্রু নাশের ছলে 
সামরিক সজ্জায় নবীন ভরসায় 
রচিছে আপন দিবা, রাত্তির শ্মশান শয্যায়  ;
স্নিগ্ধ , শ্যামল, শোভন প্রকৃতি ধ্বংস যজ্ঞ নেশায়‌ ।

ঘোর বর্ষায় তাই যে আকাশ গ্রীষ্ম অট্ট হাঁসি
হাঁসিয়া চলিছে সারা দিনমান  রোষ খানা প্রকাশি ।

পাতাল সিক্ত , সজল ধারায় তুলে এনে অপচয়
করায় আপন আঁকিছে ললাটে ভূমিকম্পের ভয় ।

কালোধোঁয়ায় আকাশ ভরে আনছে ঝড়ের মাতন
কুঞ্জ ছায়ে ধুলার গায়ে কভু না সাজায়ে ভুবন
আনছে অজ্ঞ রাজা, প্রজা সুধুই আপন মরন ;
বর্ষার দিনে রিমঝিম গানে নেই তাই বরিষণ ।

Thursday, October 5, 2023

ঘাসের সুঘ্রান -- পবিত্র প্রসাদ গুহ

 পবিত্র প্রসাদ গুহ
 ঘাসের সুঘ্রাণ
 ০৫/১০/২০২৩
হলদে সবুজ মেশানো কচি বাসন্তী রঙের প্রভাতী সূর্য ঘষাঘষি করে লেমন ঘাসের পাতা ভেজা ফড়িঙের পাখায়,
আমি সে রঙে নিজেকে আরো একবার নিতে চাই স্নান করিয়ে ।

দূর্বা ঘাসের নরম পালকের গা বেয়ে চুঁইয়ে পরছে রসালো সবুজের সুঘ্রাণ,
সেই ঘ্রাণে বুঁদ হয়ে মাতাল হয়ে চাই থাকতে সারা জীবন।

ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ন্ত চড়ুইয়ের ঠোঁটে আধা শুকনো বাদামী ছন ঘাসের খড়কুটো,
পরিবারের জন্য কত ভাবনা, আরো সুরক্ষিত করতে শাবকের আস্তানা।

আমড়ার কচি হরিৎ পাতার মত সুঘ্রাণ তখনো মেখে আছে দীঘির পাড়ের নরম দুবলা ঘাসে,
কুচ কুচ করে ধারালো সাদা দাঁতের আগা দিয়ে পিষে পিষে খেতে থাকে লাল গোল গোল চোখের তুলোট সাদা রেশমি পশমের খরগোশ গুলো।

আমার মনের শরীরে মেখে থাক পল্লী পথের দুধারের জংলী ঘাসের জংলী সুঘ্রাণ,
যেন কত একাত্ম, পবিবারের সদস্যের ন্যায় বছরের পর বছর বসবাস করছে একসাথে ।

Wednesday, October 4, 2023

কুমারী জননী -- মঞ্জুরুল হক তারা

 
কুমারী জননী
মঞ্জুরুল হক তারা 
খোলা দরজার পর্দা ঠেলে
      ঘরে ঢুকেই চমকে গেলাম 
                      তুন্নির চোখে জল, 
     ঘরময় তপ্ত কোলাহল
              গুপ্ত চোখে দেখলাম
                  হারিয়েছে ঠোঁট থেকে
                               বুকের সাহস বল।
        ঘরের যত সব আসবাবপত্র যত্রতত্র এলোমেলো
           কাপড়-চোপড়  বিছানা চাদর  সব অগোছালো।
  তন্বীর  লাল গাল  আরো লাল
       হাসি খুশী   মুখের আড়াল
     বুকের ব্যথা    নরম আঙ্গুলে ছড়ায়, 
       তন্বী আমার দিকে চায়
     কী বলতে গিয়ে থেমে যায়
           লাল গালে উষ্ণ হাওয়ায়
       বুকের ব্যথায় চোখের জল গড়ায়। 
-
  আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করে
                           বুকের কাছে নেই টেনে
সে তার আঙ্গুল ওষ্ঠাধরে চেপে ধরে
     " চুপ -কোন কথা নাই
       পুরুষের কোন গ্লানি নাই  ভ্রূণের রক্ত পানে। "
অতপর সে -
যন্ত্রণার আঁধারে হেলান দিয়ে দেয়ালে
  তার গুপ্ত বুকের সব কথা  বলে  খুলে।
ব্রহ্মপুত্রের পারে তোলপাড় করা
                        আগুন প্লাবনের ছন্দ, 
স্বপ্ন গুলি তার ইচ্ছাহীন ঝরে পড়া
          বিভ্রম করা দূরন্ত সাগরের গন্ধ।
সে দিন সন্ধ্যায় কাশবনের আড়ালে
             নির্জন বালু চরে কেমন করে
বুকের আঁচল থেকে সহসা ঝরে পড়ে
                  স্বপ্ন, সাধ, সব গিয়েছে উড়ে।
   
-অস্পষ্ট স্বরে ব্যথা কাতরে বললে -
"পশুটা এসেছিল শিশুটির দায়িত্ব নেয়নি
      স্পষ্ট বলে দিয়েছি -সম্পর্কের ইতি টানি,
আমার খোকা মায়ের পরিচয়েই বাঁচবে
পৃথিবীর আলো দেখবে হাসবে খেলবে
           কবি,   ওকে আমি নষ্ট করতে দেইনি।"
আমি তাকায়ে দেখি অদ্ভুত অপরূপ
    শাড়ির আঁচলে হাসি খুশী
     খেলা করে নিষ্পাপ শিশুর মুখ, 
জল ভরা চোখ   আশা ভরা বুক
        দাঁড়ায়ে রয়েছে কুমারী মা জননী, 
            অমন মোহিনী হাস্য মুখ
         স্নেহময় নারীর মাতৃত্ব রূপ
                আকাশময় সুগন্ধ ছড়ায়
                      প্রেমময় স্নিগ্ধ ছায়ায়
               সমাজ নিন্দার ভয় সে করেনি।
   সাহসি মেয়ে  প্রেম দিয়ে  নতুন সমাজ গড়ে
   স্বর্গের আলো নিয়ে গায়ে,
   আমার গোপন অন্তর শ্রদ্ধা ভরে  নূয়ে পড়ে
   প্রেম প্রতারিত কুমারী মায়ের পায়ে।
               

Tuesday, October 3, 2023

অবিনাশ -- উমা মুখার্জী

  অবিনাশ
  উমা মুখার্জী
  ০৩/১০/২০২৩
অবিনাশ তোমায় বড়ো দেখতে ইচ্ছা করে
সেই ভুবন ডাঙ্গার মাঠের শেষে ভঙ্গ মন্দিরের গায়
বৃক্ষ জড়িয়ে লতাগুলো একই ভাবে দাঁড়িয়ে
কতবার করি সেই পথে আসা, যাওয়া তুমি ছাড়া।

দখিনা বাতাস এসে চুপিচুপি ওড়ায় আঁচল
ঝিনুকের মতো নয়ন জলে ভেসে জমাই স্মৃতির মুক্তো
আসবে বলে অঙ্গুরীয় দিয়ে সেই গেলে চলে
অবিনাশ তুমি কি পেয়েছো নতুন সাথী আমায় ভুলে।

বেলাশেষে ম্লান সূর্যের আলো ছুঁয়ে যায় বারান্দা
চায়ের কাপে তুলে ঝড় আসতো সুন্দর সন্ধ্যা
সন্ধ্যাতারা আজও চেয়ে হাসে মিটিমিটি
এক গোছা রজনীগন্ধা টেবিলে আজ সাজেনা।

পূর্ণিমা জোছনা আজও আমায় একই ভাবে মাতায়
কত কথা কত গল্প সেই মধুরাত মনে দোলা দেয়
এতো সহজে তুমি সব ভুললে কি করে তাই ভাবি
অবিনাশ দেবে সেই রাবার আমি যদি মুছতে পারি।

অবিনাশ তোমার কথা ছিলাম, আছি, থাকবো
নিশুতি রাতে আসেনা ঘুম জোনাক দেয় আলো
যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তুমি ভুলে গেলে কেন?
তুমি কি তবে বিস্মৃতির নদী সামনে এগিয়ে চলো।

নতুন যুগের উত্থান -- মৃণাল কান্তি রায়


নতুন যুগের উত্থান
মৃণাল কান্তি রায় 
০২/১০/২০২৩
যুগ যেন বদলে গেছে   নতুনভাবে প্রাণ পেয়েছে
              হরদম চলছে রদ-বদল,
নতুন শিক্ষা নতুনভাবে  কার গিন্নি কে পাবে
            যেন অভিসারে এমন সকল।

কত্ত প্রক্সি কত্তভাবে কে জিতবে কে হারবে
               এই নিয়ে যত্ত কেচাল,
যেন এ নব অভিসার    সর্বত্র যেন লোকাচার
             পরিবেশ বড় বেসামাল। 

অভিসারের যেন সিনেমা  কত্ত কি দেখ উপমা
               রূপক যুগের কবিতা,
ডানে যেমন বেতাল   বামেতে তেমন কেচাল
              যেন আধুনিক ছবিতা। 

ছবি যেথায় মুখ্য    যোগ-বিয়োগে দক্ষ 
             সামন পেছনে  হাতছানি,
কোথাও নাই স্বস্তি  রাত-দিন কেবল কুস্তি
             শশব্যস্ত যেন ভাব খানি। 

সম-অসমের বুদ্ধিমাত্রা  অভিসারে যেন যাত্রা
               কারোর লক্ষ্য না সুস্থির,
যুগের দাওয়াই তেমন  ব্লাকমেলের রূপ যেমন
               পল্টিতে পল্টিতে অস্থির! 

মানের দিয়ে দোহাই  সম-অসমের লড়াই
               অভিসারে ব্যস্ততায় সবাই,
জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবি  ভেবে-চিন্তে পরজীবি 
               এ যে কুল রক্ষার লড়াই! 

নর-নারীর বসুমতী     শিশু-যুবার কত্ত মতি
               লুকোচুরির ভাগ বাটোয়ারা,
কেউবা শূন্যে গড়ায়   কেউবা ভুঁড়ি বাড়ায়
              কেউবা সুযোগে মাতোয়ারা। 

অভিসারের কাজ-কৌশল  নকল আর আসল
               মিশ্রণে পুরো একাকার,
নিং বং আর টিপ ছাপ  কত্ত কি বাপরে বাপ
               বুদ্ধিতে চলছে লোকাচার। 

কেউবা নগন্য কেউবা ধন্য অভিসার সৃষ্টির জন্য
               সেয়ানারা বুদ্ধিতে অগ্রগণ্য,
অপরকে বানায় দোষী পল্টিতে পল্টিতে মহাখুশি
               দেশময় তাবেদারী সৌজন্য!

কেউ বঞ্চিত কেউ অবাঞ্ছিত  কেউবা অতিরঞ্জিত 
                   বলছে কালের ঘড়ি,
সময় চলছে বয়ে  হিংসা কুৎসার পথ ছুঁয়ে
                 কেউবা মারছে তুড়ি! 

ইন্ধন-ঈশারায় ছাওয়া  নতুন যুগে যাওয়া
              নারীকুলে ইশারায় অবয়ব,
কারবা কে আছে     কোথায় কে গেছে
              আকারে-ঈঙ্গিতে জনরব।

ছিল না আগে এমন  নতুন যুগের ভাবন
         আঁখিতে-আঁখিতে সংলাপ,
এক আঁখি কি দু আঁখি  ধোকাতে ধোকাতে ফাঁকি
         নতুন যুগের এ আলাপ। 

সবাই নাকি মঙ্গল চায়  বোঝাটা বড্ড দায়
            তেলেজমাতি ধর্মীয় লোকাচার,
কত্ত যে বুদ্ধির ঘট      দেখ যত আছে পট
           ইন্টারনেটে ব্লাকমেল আবার! 

সুযোগ সন্ধানী দল  ফায়দাতে রদ-বদল
             শেষমেষে ওরা ওরা তারা,
এহেন দুর্গতির কাল  পরিবেশ টালমাটাল 
             জনবিচ্ছিন্ন করাবে যারা। 

নতুন যুগের উত্থান  গাও সবে জয়গান
           যারা থাকি যারা চলে যাই,
কিছুই করার নাই  নতুন যুগের ধারাই
           নতুনত্বের ভাবমূর্তি তাই। 

বুঝেই আসলো এবার  নতুন যুগ সবার
             অভ্যস্ততা অতীব জরুরী,
যুগেই চলতে হবে    নয়তো পিছু থাকবে
            বোঝ যত সুন্দর-সুন্দরী!

মনকে করবে সুন্দর  বৃহৎ রাখবে অন্তর
               নতুন যুগের লাচারি,
সুখের আশা নাই  কষ্টগুলো ঘোচাও তাই
             নতুন যুগ বড় বাহারি!