Sunday, August 8, 2021

সুমনা মন্ডল

প্রকৃত অন্ত্যমিল
সুমনা মণ্ডল
-----------------------------


বাস্তব থাক রাজপ্রাসাদে
        স্বপ্ন কুঁড়ে ঘরে, 
মুহূর্তেরা থমকে থাকুক
          নষ্ট অবসরে ।
ঘুমের দেশে স্বপ্ন ছুঁয়ে
        তন্দ্রা ফিরুক ঘরে, 
বাদল চিরে বর্ষা নামুক
         ক্লান্ত শহর জুড়ে ।
অলস কলম ভেঙ্গে আড়মোড়া
          করুক চিৎকার, 
স্তব্ধতাকে হনন করুক
           নীরব অন্ধকার ।
ছন্দ ভাঙ্গুক গণ্ডী তার ই
            কাব্য অনাবিল, 
শিহরণ জাগা শব্দ গড়ুক
             প্রকৃত অন্ত্যমিল ।

পবিত্র প্রসাদ গুহ

 প্রসাদ গুহ
পাট ভিজেছে জলে
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
    পাট ভিজেছে জলে
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●


বৃষ্টি ঝরে                    আষাঢ় মাসে
            পাটের ক্ষেতে জল
জল নেচেছে              ফেনিল সাদা
              কী মজা তুই বল!
আলের গালে              জলের চুম্বন
            মুখ তুলে আল চায়
গলা জলে                       স্নাত হয়ে
               মেঠো জল খায়।
পাট ভিজেছে                সিক্ত গায়ে
              তৃষ্ণা মেটায় ধড়ে
লম্বা সরু                    এক পায়েতে
            দাঁড়িয়ে শোভা ভরে।
স্নিগ্ধ সবুজ               পাটের ক্ষেতে
              জল টলমল করে
ভেকের ডাকে            ছন্দে বিভোর
            উদাসী আষাঢ় ঝরে।
পাতার গায়ে             জলের লেপন
           রূপোলি ফোঁটায় পড়ে
টপটপিয়ে জল         পড়ছে ক্ষেতে
                মেঠো জল নড়ে।

●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

পাদক

গলুর পরীক্ষা
পাদক

মাষ্টারমশাই সন্ধ্যে বেলায় পড়াতে এসে দেখেন গলু ঘরের দরজা জানালা  বন্ধ করে চিৎকার করে বই পড়ছে।বছর ষাটের বিমল মাষ্টারমশাই  গলুর পড়ার ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসতেই.... গলু বিনয়ী হয়ে বলে..মাষ্টারমশাই.. মাষ্টারমশাই..,আজ আমার পড়া একদম রেডি।আপনি ধরুন,সব প্রশ্নের উত্তর জলের মতো দিয়ে দেব। একথা কানে যেতেই গলুর মা অতসী দেবী তড়িঘড়ি  পড়ার ঘরে ডুকে বলেন...

না না মাষ্টারমশাই,ওর কথা শুনবেন না, ওকে লিখতে দিন...আজ পড়া না পারলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেবেন।সারা দিনটাই দুষ্টুমি আর দুষ্টুমি... বই নিয়ে বসাতেই পারিনি।বলে বলে আপনি আসার আগে এই বই নিয়ে বসেছে।এমন করে পড়লে কি ক্লাস এইটের পড়া তৈরি হয় মাষ্টারমশাই?আর পড়া না হলে যে করে হোক পড়া করিয়ে ছাড়বেন...এই বলে অতসী দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই গলু মাষ্টারমশাই এর দিকে মুখটা ঝুঁকে বলে...জানেন মাষ্টারমশাই?দিদিমা সেদিন বলছিলেন,আমার ক্লাসে যখন মা পড়তো তখন দিদিমা মাকে খুব বকাবকি করতো।মা একটুও বই পড়তো না।তাই মা পড়া না পারলে মায়ের মাষ্টারমশাইও মাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দিতেন..তাই মা আমার উপর হিংসে করে এ সব বলে‌ গেল.. 

মাষ্টারমশাই একটু রেগে চেঁচিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে। খাতা পেন বার কর।গলু ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে খাতা পেন বার করতে করতে বলে.. মাষ্টারমশাই পড়া ধরুন না...সব পড়া জলের মতো বলে দেব...গলুর কথা শেষ হতে না হতেই মাষ্টারমশাই ধমক দিয়ে বলেন,যা বলছি তাই শোন,তোমার ভূগোল পড়া কি তৈরি হয়েছে?লিখতে দিলে পারবে তো?গলু মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যাঁ হয়েছে,লিখতে দিলে পারবো।ঠিক আছে তাহলে ভূগোল পরীক্ষা দাও তো দেখি কেমন তৈরি? পরীক্ষার কথায় গলু চমকে ওঠে।কারণ বিগত দিনে মাষ্টারমশাই যে পরীক্ষা গুলো নিয়েছিলেন তাতে গলুর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়ে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি তাকে পেতে হয়েছে।তার উপর মায়ের হাতের চড়।তাই গলু প্রথম থেকে চেষ্টা করছিল মাষ্টারমশাই যাতে পরীক্ষা না নেন।সব চেষ্টা ব্যার্থ হলে গলু মাথাটা নীচু করে বলে, মাষ্টারমশাই, হাতের আঙ্গুলটা খুব ব্যথা,লিখতে পারছিনা,পড়াটা একটু ধরুন না?গলুর মতলব বুঝতে পেরে মাষ্টারমশাই জোরে ধমক দিয়ে বলেন... পুরুষ মানুষ হয়ে এতো ভয় কিসের?রাবণ সীতাকে হরণ করলে সীতাকে তাঁর সতীত্ব প্রমান করতে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।আর তুমি? পুরুষ হয়েও পারবে না কেমন পড়া করেছ তার প্রমান করতে পরীক্ষা দিতে?নাও  কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন লেখ..

অগত্যা গলুকে পরীক্ষা দিতে হল। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখতে লিখতে গলু ভাবছে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর আমার ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়? মাষ্টারমশাই এমন বললেন কেন? এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে পরীক্ষা শেষ করে মাষ্টারমশাইয়ের কাছে গলু খাতা জমা দেওয়ার সময় বলে..আচ্ছা মাষ্টারমশাই সেই পরীক্ষায় সীতা কতো নম্বর পেয়ে পাশ করেছিলেন? মাষ্টারমশাই একথার উত্তর না দিয়ে খাতা দেখতে শুরু করেন...

মাষ্টারমশাই খাতা দেখতে গিয়ে দেখেন..ভারতে বৃহত্তম রাজ্য চীন,ভারতের বৃহত্তম প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাজস্থান এমন সব প্রশ্নের উত্তর গলু  উল্টোপাল্টা লিখেছে।গলু অতি কষ্টে কুড়ির মধ্যে সাত পেয়েছে। সেই পুরানো শাস্তি, কান ধরে হাফ চেয়ার। কিছু বকাঝকা করে মাষ্টারমশাই অন্যত্র পড়াতে চলে গেলেন। মাষ্টারমশাই চলে যেতেই  পিঠে মায়ের হাতের প্রকান্ড চড়।মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। সেদিন রাতে গলু শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর ভূগোল পরীক্ষার মধ্যে মিল কোথায়...?

পরের দিন বিকাল থেকে আকাশে মেঘ। সন্ধ্যে বেলায় ঝড় বৃষ্টি আসলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে ভেবে অতসী দেবী পড়ার ঘরে হ্যারিকেনটা ধরিয়ে জোর কম করে পড়ার টেবিলের পাশে রেখে দিয়েছে...

শীতের রাত বাইরে খুব ঠান্ডা।গলু খাটে বসে গায়ে চাদর জড়িয়ে শব্দ করে পড়ছে।এমন সময় মাষ্টারমশাই ঘরের  চেয়ারে বসে বললেন..কি গলু পড়ায় যে আজ খুব মন দিয়েছ?মা কি কাল একটু পিটিয়েছেন?গলু একটু মুচকি হেসে বললো..হ্যাঁ মাষ্টারমশাই, পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে মেরেছে।এবার ভাবছি আর দুষ্টুমি না করে পড়ায় মন দেব...।তা বেশ বেশ, মন দিয়ে পড়..এই বলে মাষ্টারমশাই গলুকে পড়াগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে বললেন।গুলো পড়ছে কিন্তু কোথায় যেন একটু অস্থির হচ্ছে।এমন সময় বিদ্যুত চলে যেতেই... ওরে বাবারে..আমাকে বাঁচাও.. বাঁচাও,বলে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে মাষ্টারমশাই মেঝোতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন।চিৎকার শুনে  পাশের ঘরের সব ছুটে এসে দেখলেন মাষ্টারমশাই গলা চেপে ধরে গোঙাছেন,গলু খাটে বসে সেই দিকে তাকিয়ে বসে।বাড়ির সবাই এক স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে মাষ্টারমশাই?কি হয়েছে? উত্তর না পেয়ে গলুর বাবা নিমাই বাবু মাষ্টারমশাইকে তুলে ধরে বসিয়ে দেন।  ঘাড়ে মাথায় চোখে মুখে একটু জল দেন। হ্যারিকেনের আবছা আলোয় দেখলেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় একটা কালো মতো কি যেন পেঁচিয়ে!।অতসী দেবী হ্যারিকেনের আলোটা কাছে এনে দেখেন মাষ্টারমশাইয়ের গলায় পাকানো কালো দড়ি ঝুলছে,যেটা নিয়ে গলু সকালের‌ দিকে একবার ঘুরছিল।ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে চোখে মুখের জল গায়ে পড়ে জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডায় মাষ্টারমশাইকে কাঁপতে দেখে নিমাই বাবু একটা চাদর দিয়ে মাষ্টারমশাইকে গায়ে দিতে বলে ঘরের বাইরে চলে গেলেন...

গলু বিলক্ষণ জানে মাষ্টারমশাই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর কপালে কি আছে। তবু সাহস মাষ্টারমশাইয়ের কানের কাছে মুখ রেখে গলু বলে,আপনার এতো ভয় কেন?দেখেন না, মা মনসার মাথায় কতো সাপ?তার তো কোন ভয় নেই।আর আপনি পুরুষ মানুষ হয়েও একটা দড়ির এতো ভয় পান?ভয়কে জয় করতে হবে মাষ্টারমশাই তাই আমি আজ পড়ায় মন দিয়েছি...

গলু সত্যি পড়াশুনায় মন দিয়েছিল কিনা সেটা গলুই জানে। কিন্তু এটা জানা গিয়েছিল যে,সে দিনের পর থেকে মাষ্টারমশাই আর গলুর বাড়ির ত্রিসীমানায় আসেননি।

অমিতাভ চক্রবর্তী

বৃষ্টি মুখর রাত
--------------------
অমিতাভ চক্রবর্তী
***************************


ক্রমশ রাত গভীর হচ্ছে আকাশ স্বচ্ছ না হলেও
মুষল ধারাপাত নেই - টিপ টিপ মাঝে মাঝে আবার  স্মিত এক চিলতে হাসির মত পরিবেশের ইষৎ উষ্ণতা আছে!
বিকেলের এক পশলা বৃষ্টির জল জমে
থৈ থৈ করে রেখেছে গাছের টব গুলো!
নিবিড় এই বৃষ্টির শব্দ বুকে অজানা
এক দুঃখ বীজ বপন করছে !
নিয়তির মতোই তুমিও বুকের তলায়
আসন পেতে বসে আছো!
আমার দিন রাত কেড়ে নিয়ে প্রায়
নিঃস্ব করে দিয়েছো!
এ শূন্য ঝুলি থেকে কি দিতে পারি আমি! কি দিতে পারি!
হাসির কানায় কানায় ভরা নয়নের জল?
কবিদের কি বয়স বাড়ে? না ফুরিয়ে যায়! 
এই বদলা রাতে সমস্ত ভালোলাগা আর
ভালোবাসার স্মৃতি এসে জড়ো হয়!
তোমায় খুব মনে পড়ছে!
জানি না কি চাই?
বহুদিন থেকে গভীর শিকড় গেড়ে একটা অলৌকিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে!
শারীরিক সান্নিধ্য ? জানি না!
তবে সান্নিধ্য চাই..
স্পর্শ -এসে ধরছে কেন হাত?
বিকেলে আজ বৃষ্টিতে ভিজলাম
প্রথম বর্ষণের আনন্দে !
পার্কে ছোকরাদের দল ও গড়াগড়ি
খাচ্ছিল ভেজা ঘাসে শুয়ে
একদম অন্য অনুভব!
একাই ভিজছিলাম ! কিন্ত সত্যি কি
একা ছিলাম?
তুমি ছিলে তো পাশে, তোমার হাত
ছুঁয়েছে আমার কণ্ঠ!
"সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের গন্ধ হওয়ার পরে
অঙ্গ বিহীন আলিঙ্গনে সকল অঙ্গে ভরে "
আমার সমস্ত কিছুর মাঝে তুমি ফুলের
রেণুর মত মিশে থেকো কি করে!
তোমায় তেমন করে পেতে কি পারি না আমি?
সত্যি বলতে কি হয়তো তেমন করে
পেতে চাইও না তোমাকে!
কি জানি সশরীরে যদি তুমি কোনদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াও কি করবো জানি না!
অমোঘ টানে বার বার ঘুরে ফিরে
তোমার কাছেই আসি!
তোমার ওই ছোট ছোট উৎকণ্ঠা,
দুশ্চিন্তা গুলো আমার পিঠে কেমন যেন
সোহাগী আদরের মত হাত বুলিয়ে যায়!
আমিও বাউলের একতারার তারে হাত বুলিয়ে বলি -
বাতাস সুগন্ধী হও, উষ্ণতা নিরাময় কর
সর্বোব্যাপী ভালোবাসার কার্পেটে ঢাকুক মেঝে!
তোমাকে আমি ফেরাতে পারি না কোন ভাবেই,
অমোঘ নিয়তির মত সুক্ষ বৈদ্যুতিক তারে
যেন জড়িয়ে আছো,
আর আমি বিনীত হয়ে আছি চন্দন বাতাসে,
অলৌকিক আলোর ফুলকি আর বুকে ছেঁকার দাগ নিয়ে  সব অনুভব অস্তিত্ব
কেড়ে নেয় মায়াবতী জাহাজ!
ছিন্ন পাতায় সাজাই তরণী তোমার
অনুভূতি নিয়ে একা একাই করি
খেলা সারাদিন রাত ...

স্বপন গায়েন

পিছু টান
---------------
স্বপন গায়েন
**********************


পিছুটান আছে বলেই মানুষ আজও বেঁচে আছে
কঠিন সময়কে বুকে জড়িয়ে আছে চিরকালের জন্যে
রোদ মাখা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফেরে সব্বাই।

পিছুটান আছে বলেই মানুষ মরতে গিয়েও মরতে পারে না
জীবনের লড়াইটা সঙ্গী করে বার বার ঘরে ফিরে আসে
জলপ্রপাতের শব্দে হৃদয় দুয়ার খুলে যায় পিছুটানের তাগিদে।

পরিবার বড়ই মায়াময় ভালোবাসার সংসার -
স্ত্রী সন্তান কিংবা আত্মীয়দের অমর বন্ধনেই বেঁচে থাকে মানুষ
ভালোবাসার মোহরকুঞ্জে আজও জীবনটা তাই অনেক রঙিন।

আষাঢ়ের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে অবিরাম ধারায় ...
পিছুটানহীন মানুষ আজও খুঁজে বেড়ায় স্মৃতির পাতার কোলাজ
শৈশবের বারান্দায় উঁকি দেয় ফেলা আসা ধূসর রোদ্দুর।

পাখিদের কলতান শুনে ফিরে তাকায় তার মাটির বাড়ির দিকে
আজও ঝরে যাওয়া বকুলের গন্ধে ভরে ওঠে হৃদয়ের উদ্যান
পিছুটান আছে বলেই মাটির পৃথিবী এতো অপরূপ মায়াময়।

      *******

তুষার কান্তি হীরা

প্রতিবেশী
---------------
তুষার কান্তি হীরা
---------------------------


প্রতিবেশী বড়ো আপন
যদিও হয় পর,
বসত করি মিলে মিশে
পাশাপাশি ঘর।

অন্যের বিপদ নিজের বিপদ
মনে করি তাই,
উদ্ধার করতে মিলে সাথে
সবাই ছুটে যাই।

ঝগড়া-বিবাদ করি আবার
ভুলি সকল রাগ,
দুঃখ-খুশি সবটা করি
সমান সমান ভাগ।

পরামর্শ করে চলি
যেন আপন ভাই,
দুঃখসুখের মাঝে মোরা
খুশি আছি তাই।

জগৎ মাঝে হবো বড়ো
এটা সবার আশ,
সারা জীবন মিলে মিশে
করবো মোরা বাস।

সজল মন্ডল

বিকেল থেকে রাত্রি
—————————
সজল মন্ডল
——————

থমকে থমকে দাঁড়ায়
এক আলগোছা বাতাস
অনুভবে আনে গাছের পাতা
তার এলোচুলে দিয়ে গেলো দোলা
পেলাম আমি সামান্য আভাস৷

সে সব বিকেল বেলার কথা
নদীর ধারে হিজল গাছের ছায়ায়
কাঠঠোকরা ঠুক ঠুক কাঠ কাটে
শব্দ ছুঁয়ে বিকেল বেলার রোদ
কৃপণ নদী বালিতে জল মাখায়৷

তখন সূর্য ডুবু ডুবু ভাব
নিচের আকাশ রং মেখেছে লাল
পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া
শাঁখের শব্দে পাড়া মাতোয়ারা
কি কারনে তার লাল দুটি গাল!

থমকে গেছে হেঁটে যাওয়ার পথ
সন্ধ্যে নামলো ,পাড়া শুনশান
শব্দ ভাসায়  নদীর কলতান
জোনাকিরা আলো বিছায় পাতার ফাঁকে ফাঁকে
তাদের দেখে ঝিঁ ঝিঁরা  গায় গান৷

যত তারা হেমন্তের মাঠে
রাত্রি হলেই নিশি যাপনে আসে
ধানফুলেরা আমোদে ডগমগ
আমি দেখি তাদের দুচোখ ভরে
 তাদের নিঃশ্বাস জমে রাত্রির বাতাসে৷
———————————*——————

গৌতম তরফদার


ডুবসাঁতারে আমি
------------------------
গৌতম তরফদার
------------------------------



অন্তহীন ব্যস্ততার শেষে অল্পস্বল্প বিরতি 
দিনের গুজরান যেন কোনোমতে।
আধঘুমন্ত অনুভূতির খিড়কি খুলে দেখি
রয়েছি আমি ব্যস্ত মনের শূন্য পথে। 

নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখি অর্থহীন কাজে
আপন শখ-আহ্লাদ সব নিখোঁজ।
তুমি-হীন পথের আনাচেকানাচে শূন্যতা 
মনের ব্যস্ত চলাচল রোজ রোজ। 

বর্ষণমুখর আষাঢ়ের ব্যস্ততা বুঝি আমি
ধরণীর অন্তরে শান্তির জল-সিঞ্চন।
ব্যথাতুর মনে কর্মব্যস্ততার অবুঝ প্রলেপ 
এড়াতে চেয়েছি দুর্ভাগ্যের ভ্রুকুঞ্চন। 

বিরহের ক্লান্তি আর মনোমালিন্যের ভ্রান্তি
আমাদের সম্পর্কের নেই মান্যতা। 
রাগ-অভিমানের কাটাছেঁড়ায় অশান্ত মন
তোমায়-আমায় ঘিরেছে শূন্যতা। 

মনের ব্যস্ততা শুধু তোমারই স্মৃতিচারণে
যন্ত্রণার ঝাপটায় ওঠে ঘেমে-নেয়ে।
উল্টো রথ সময়ে ফিরলেও আমি আছি
তোমারই প্রত্যাবর্তনের পথ চেয়ে। 

শূন্যতার মাঝে আমি ব্যর্থ প্রেমিকের সাজে
বুদ্ধুরামের ভাগ্য জানেন অন্তর্যামী। 
অপেক্ষার অনন্ত যাত্রায় উপেক্ষার আঁচড় 
হতাশার সাগরে ডুবসাঁতারে আমি।

কৃত্তিবাস

কল্পনায় চেনা
--------------------
কৃত্তিবাস ওঝা
-----------------------


নদীর বুকটা অন্ধকার
চোখের উঠানে অসংখ্য তারার মাঝে 
একটা শুকতারার ধ্রুপদী অবস্থান
অসীম আকাশের নিস্তব্ধতার কোলাহলে
সব অচেনার মাঝে একটাই চেনা,
পাথরের শুষ্কতা ভাঙে
জলের মৃদু শব্দ,-- ছলাৎ ছলাৎ।

ভাঙা কপালে কে যেন হাত বুলিয়ে দেয়
বিলি কাটে চুলে
নদীর ওপার থেকো 
জোনাকির টিপ টিপ আলো
কথা বলে ইশারায়,
কল্পনার মোনালিসা স্পর্শ চিৎকার
মাঝ দরিয়ায় নৌকা চালায়।

বন্ধ ঘরের ঝুল বারান্দায়
রঙিন পোষাক শুকায়
খালি পেটে বড় বড় হাই তোলে
রাত ঘুমের দিনেরবেলায়।
ঘ্রাণ বাঁশিতে প্রাণের খাতায়
হৃদ-হারমোনিয়ামে গান শোনায়।

মৃত্যুঞ্জয় সরকার

ইচ্ছে তো হয় 
-------------------
মৃত্যুঞ্জয় সরকার 
--------------------------


এ ভাবেই একদিন 
আমিও শেষ হয়ে যাবো 
পরে থাকবে আমার না বলা কিছু কথা 
তুচ্ছ স্মৃতি, যন্ত্রণা,ক্ষুব্ধ মনের প্রতিবাদী আগুন হল্কা। 

আমি ব্যর্থ হয়েছি বারবার 
তুমিও সহ্য করেছো তীব্র দহন 
ইস্তেহারে জং ধরে গেছে,তবু ক্যানভাস কথা বলে 
পুড়ে পুড়ে হয়ে গেছি ক্রান্তিবীর,কঠিন উপন্যাস। 

ঝর্ণা হতে চেয়ে হয়েছি খরস্রোতা নদী 
সুবিচার চেয়ে কলঙ্ক মেখেছি গায়ে, 
তবু হাল ছাড়িনি বুনে গেছি জীবনের বীজ 
ব্যথিত জীবনের ধূসর পাণ্ডুলিপি,দীপ্ত কলরব। 

আত্ম সুখে উপেক্ষিতা তুমি যুগিয়েছো প্রেরণা 
বিরহ  সয়েছো দিয়েছো তেজোদীপ্ত জীবন আমার,  
প্রিয়তমা, এ আমার অঙ্গীকার 
যেতে যেতে রেখে যাবো যুদ্ধ বিজয়ী প্রাণ। 

নতুন সূর্যকণা গড়ে দিবে মন 
দিবে নতুন সাম্যনীতি বিশুদ্ধ জীবন দর্শন, 
তুমি ও নবপত্র এঁকে জগৎ জননী হবে 
দিয়ে যাবে স্নেহ প্রেম প্রীতি নির্ভরতা অঙ্কুরিত প্রাণ।

শ্যামল মিশ্র

গ্রামছবি
--------------
শ্যামল কুমার মিশ্র
------------------------------


বাতায়ন পাশে বসে থাকে খোকন
সকালের নরম রোদ্দুর এসে কত ছবি আঁকে
দূরে শিমূলের পাতার ফাঁকে বসে থাকে ভোরের দোয়েল
শিস্ দিয়ে উড়ে যায় দূরে বহুদূরে...

খোকনের মনে পড়ে ছায়া ঘেরা সেই গ্রাম
ছাইয়ের গাদার পাশ দিয়ে এঁকে এঁকে চলে গেছে পথ
যে পথে গ্রামের মেয়েরা বিকেলে চাপাকলে জল আনতে যায়
রহিম চাচা লাঙ্গল কাঁধে চাষ দিয়ে ফেরে
আদুল গায়ের ছেলের দল মার্বেল পকেটে নিয়ে চলে খোলা মাঠে
কখনো ব্যাটে বলে জোর লড়াই পূব পাড়া পশ্চিম পাড়ার সাথে

সাঁঝবেলা হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে চলে কোন এক বালক
দুরু দুরু বুক তার ভয়ে কেঁপে মরে 
অভয় বাণীর মতো ঝরে পড়ে রাণু পিসির কণ্ঠস্বর---'কে যায়? অংশুর পোলা? ভয় নাই খোকা। আমিতো আছি'?

খোকনের ভয় কাটে, ভেবে নেয় 
ঐ দূরে জেগে রয় দুটো চোখ... 
এগিয়ে চলে ঝিঁঝিঁ ডাকা পথে 
ঐ পথে জীবনের প্রথম প্রভাতে দেখা হয় তোমা সনে 
তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে 
পথটা সরে গেছে দূরে অনেক দূরে 
পথের কোন এক বাঁকে তুমি যেন কবে হারিয়ে গেলে...

অপরাহ্ণের শেষবেলায় আজ সব স্বপ্ন মনে হয় 
জলছবি গ্রামগুলো আজ হারিয়ে গেছে 
হারিয়ে গেছে রহিম চাচা রাণু পিসিরা 
বোষ্টমী পিসি আজ আর 'রাই জাগো বলে' সুর তোলে না 
তমিস্রার এক আঁধার আজ গ্রামের কোল জুড়ে  
প্রযুক্তির আলোয় হারিয়ে গেছে সেইসব গ্রামছবি ভালোবাসার অন্তহীন প্রবাহ...

বাতায়ন পাশে বসে ভেবে চলে খোকন 
ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ তোলা কলসি ভরা গরুর গাড়ি চলেছে ধীরে ধীরে 
খোকন দৌড়চ্ছে..অন্তহীন সে দৌড় 
ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে সব মুখ, সব ছবি 
ক্লান্ত অবসন্ন খোকন আজও খুঁজে ফেরে 
ছায়া ছায়া সেই গ্রাম, ফেলে আসা মায়ের কোল 
শৈশব কৈশোরের হারানো দিনগুলি... 
হারিয়ে যায় সময়ের অতলান্ত গভীরে...