Thursday, December 26, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল




         আমার কথায় রামশরণ যেন বাস্তবে ফিরে আসে আবার । 

        --- তারপর আর কি মাষ্টারমশাই । বড়বাবুর চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার নিশ্চিন্ত জীবনেরও ইতি ঘটে গেল । আবার বেড়িয়ে পড়লাম নিরুদ্দেশের পথে । কিন্তু যে পাক থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম বড়বাবুর স্নেহের শাসনে সে পথে আর পা বাড়াইনি । কতদিন কত দোকানে কাজ করলাম --- চায়ের দোকানে , মুদির দোকানে , হোটেলে । কিন্তু এই কয় বছরে বড়বাবুর কাছে থেকে আমার রুচিরও পরিবর্তন ঘটে গেছে । ওদের গালাগালি , খিস্তি - খেউরগুলো আর ভালো লাগত না । বই পড়তে খুব ভালোবাসতাম । একদিন এক বইয়ের দোকানে কাজ পেলাম । বেশ বড় দোকান । কত বই । সারাদিন বই পড়ার এমন সুযোগ পড়ার নেশাটাকে আরো বাড়িয়ে দিল । দোকানে বিক্রিও হত মন্দ না । মালিককাকার একটামাত্র মেয়ে ছিল । একদিন কাকা এসে বলল , ক'দিন দোকান বন্ধ থাকবে । তার মেয়ের বিয়ে । দোকানের বদলে এই কয়দিন তার বাড়িতে কাজ করতে হবে । গেলাম তার বাড়ি । লোকজন বলতে তেমন কেউ নেই । কাকা কাকীমা আর দিদি । ফলে দোকানবাজারের অনেক কাজই আমি পেলাম । করলাম আনন্দের সাথে ।কি বলব মাষ্টারমশাই এই প্রথম যেন কোনো পরিবারের অংশ বলে মনে হল নিজেকে । দিদি বিয়ে হয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । আমি দোকান বাড়ি দুটোই সামলাতে থাকলাম । কাকীমাও আমাকে নিজের ছেলের মত ই ভালোবাসতেন । 

       কিন্তু এ সুখও সইল না । কাকীমার হঠাৎ খুব কঠিন রোগ ধরা পড়ল । এখানে চিকিৎসা হবে না । দিদি কাকা-কাকীমাকে নিয়ে চলে গেল ব্যাঙ্গালোর । দোকানটা হয়ে গেল বন্ধ । আমি আবার বেকার ।

       পুরানো কথায় ডুবে গেছে রামশরণ । একইসাথে সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যকে দেখা , অনুভব করা ঘটেছে তার জীবনে বারবার । জীবনের কত উত্থান-পতন যে মানুষকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় ।

        ---- তা তুমি এখানে এলে কি করে ? 

           ----- সে তো আরো বড় ইতিহাস মাষ্টারমশাই । কিছুদিন একাজ- ওকাজ কত কাজই না করলাম । কিন্তু কিছুতেই মন বসে না । একদিন ট্রেনে চেপে বসে রইলাম । হাতে টাকাপয়সা প্রায় নেই । জামাকাপড় অত্যন্ত মলিন । স্নান হয়নি কয়দিন । অবসন্ন শরীরে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল ধাক্কায় । ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি সামনে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে । আর কালো কোট পড়া একজন লোক সবার টিকিট চেক করছে । পেটে খাবার নেই তো টিকিট কাটব কি করে । আমার কাছে টিকিট চাইলে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । টিকিট না পেয়ে আমাকে পাগল ভেবে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দিল । শিয়ালদা থেকে কত দূরে আছি , কোথায় যাব কিছুই জানি না । প্ল্যাটফর্মে বসে রইলাম সারাদিন । খিদে তেষ্টার অনুভূতিও আর নেই । বিকেল হয় হয় । একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম । দুটো বিস্কুট আর চা খেলাম । তারপর ওয়েটিং রুমে গয়ে বসলাম । সারারাত সেখানেই পড়ে রইলাম । বড়বাবু আর কাকা-কাকীমার কথা খুব মনে পড়ছিল । দিদির ফোন নম্বর দিয়েছিল আমাকে । খুব ইচ্ছে করছিল ফোন করে ওদের খবর নিতে । কিন্তু পয়সা কোথায় ফোন করার । 

          ---- তারপর ? যতই শুনছি কঙ্কালের কথা শোনার আগ্রহ আরো বেড়ে যাচ্ছে ।

          ----- তারপর সকাল হল । একের পর এক ট্রেন যাচ্ছে আসছে । একসময় দেখলাম একদল স্কুলের ছেলে দলবেধে কলরব করতে করতে যাচ্ছে । কি ভেবে ওদের পিছু নিলাম । হাটতে হাটতে এই স্কুলটার সামনে এলাম । ওরা ভেতরে ঢুকে গেল । আমি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম । আর ওদের দেখতে লাগলাম ।

        জানেন মাষ্টারমশাই , আমি আগের জন্মে অনেক পাপ করলেও কিছু কিছু পুণ্য কাজও করেছিলাম । তাই একসময় নজরে পড়লাম ঐ দ্বিজেনমাষ্টারের । তিনি অনেকক্ষণ ধরে আমাকে লক্ষ্য করে একসময় কাছে এগিয়ে এলেন । আমার নাম-ধাম-ঠিকানা সব জিজ্ঞাসা করলেন । এমন ভালো মনের মানুষদের কাছে মন আপনাআপনি আত্মসমর্পণ করে জানেন তো মাষ্টারমশাই । আমিও আমার জীবনের পিছনে ফেলে আসা  সব ঘটনা মাষ্টারমশাইকে বলে চললাম । মাষ্টারমশাই আমাকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে গেল । ঐ যে আমগাছের বেদিটা দেখছেন সেখানে আমাকে বসতে বলে ভেতরে গেল । তারপর কিছুক্ষণ পর হাসিমুখে এসে বলল যে আমার চাকরি হয়ে গেছে । আমি মাষ্টারমশাইয়ের পা ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম মাষ্টারমশাই । তিনি আমাকে তুলে নিয়ে ঐ ঘরটাতে থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিলেন । তার উপর দিলেন মাইনে । আমিও প্রাণ দিয়ে স্কুলটাকে ভালোবেসে ফেললাম । সারাদিন ছোটোবড় কত ছেলেদের আনাগোনা  । ছোটাছুটি , চীৎকার , চেঁচামিচি । একসময় ওদের সাথে ভাব হয়ে গেল । ওরা কতরকম দুষ্টুমি করত । আমার হয়ত একটু ঘুমের ঢুল এসেছে । ওমনি পেছন দিয়ে এসে আমার টিকির সাথে দড়ি বেঁধে দিত । কখনো প্লাষ্টিকের সাপ সামনে ফেলে দিয়ে ' সাপ ' ' সাপ ' বলে ভয় দেখাতো । আমিও ওদের মজা দেবার জন্য ভয় পেয়ে লাফাতাম । কখনো আমার জুতো লুকিয়ে রাখত । তবে ওরা শুধু দুষ্টুমিই করত না ওদের জন্মদিনের কেক লজেন্সটাও আমার জন্য নিয়ে আসত । ওদের ভালোবাসায় আবার আমার জীবনটা ভরে উঠল । আস্তে আস্তে বয়স বাড়তে লাগল ।ষাট পেরিয়ে পয়ষট্টি - সত্তর । আমি যেন এই স্কুলেই একটা অঙ্গ হয়ে উঠলাম । তারপর একদিন ওপরয়ালার ডাক এল । এই ঘরেই আমার জীবনের শেষ হল । আমার তো কেউ ছিল না । মাষ্টারমশাইরা আমাকে গোর দিল । 

          ---- আচ্ছা , তাহলে তুমি এখানে এলে কি করে । ---- শেষ কৌতুহলটা আর চাপতে পারলাম না ।

           ----- ওদের ভালোবাসা আমাকে ওখানে শান্তি দিল না মাষ্টারমশাই । আমি ইস্কুল আসার জন্য অস্থির হতে লাগলাম । একদিন সুযোগ এল ।

             ----- ইস্কুলের কয়েকজন মাষ্টারমশাই আমার গোরের পাশ দিয়ে কোনো অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিল । অনেক রাত । গোরে শুয়েও আমার তো সবসময় এই স্কুলের দিকেই মনটা পড়ে থাকত । তাই স্কুলের কোনো মাষ্টারমশাই বা ছাত্রদের কথা শুনলেই উৎগ্রীব হয়ে উঠতাম । সেদিনও মাষ্টারমশাইদের কথা শুনছিলাম । বিজ্ঞানের মাষ্টার অভীকবাবু হেডমাষ্টারমশাইকে বলছিল যদি স্কুলের জন্য একটা আসল কঙ্কাল পাওয়া যায় তবে খুব ভালো হয় । এমনি তাদের কথাবার্তা চলছিল । হঠাৎ মুখঢাকা দুজন অস্ত্রধারি লোক মাষ্টারমশাইদের সামনে এসে দাঁড়াল । যা আছে দিয়ে দিতে বলল । নয়ত প্রাণে মারবে বলে হুমকি দিতে লাগল । আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না । ছোকরাদুটোর কাছে গিয়ে নানারকম কায়দা করতে লাগলাম । ভয়ে সেদুজনের সেকি পড়িমড়ি দৌড় । হাসব না কাঁদব ভেবে পাইনা । মাষ্টারমশাইদের দিকে তাকিয়ে দেখি তাদেরও একি অবস্থা । শুধু অভীকবাবু আর হেডমাষ্টারমশাই দাঁড়িয়ে আছে । আমি আস্তে আস্তে তাদের বললাম --- ভয় পাবেন না মাষ্টারমশাই । আমি রামশরণ । অভীকবাবু আমাকে অনেকদিন ধরে দেখেছে এই স্কুলে । তাই নির্ভয়ে হেসে বলল --- এখনো কিসের টানে রামশরণ । আমি বললাম ---- আজ্ঞে মাষ্টারমশাই । আমাকে স্কুলেই একটু জায়গা দিন । ছেলেদের কলকল না শুনে আমি থাকতে পারিনা । অভীকবাবু বলল ---- ঠিক আছে দেখছি তোমার জন্য কি করতে পারি । তার কিছুদিন পর মাষ্টারমশাইরা আমাকে ওখান থেকে তুলে পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন করে স্নান- টান করিয়ে এখানে রেখেছে । আমিও খুব খুশিতে আছি এখন ।

          নিজের অজান্তে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল আমার বুক চিরে । আমিও হারিয়ে যেতে থাকলাম অনেক অনেক দূরে যেখানে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ছেলেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রামশরণকে । আর রামশরণ হাত - পা নেড়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করছে ।

####সমাপ্ত ####

Wednesday, December 25, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


--- তুমি কে ? -- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম ।

----  আপনি তো এই স্কুলে নতুন এসেছেন তাই আপনি আমাকে চেনেন না । আমার নাম রামশরণ । ছেলেরা ঐ নামেই আমাকে ডাকত । গেটে চৌকিদারির কাজ করতাম । ঐ যে এখন যেখানে মিড ডে মিলের ঘর হয়েছে সেখানে আগে ছিল আমার বাস । চব্বিশ বছর বয়সে একদিন ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছিলাম ইস্কুলের সামনে । কোনো কাজ-কামের আশায় । তখনকার দ্বিজেনমাষ্টার দেবতা ছিলেন । গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমাকে সব জিজ্ঞাসা করলেন । তারপর আমাকে একটা চাকরি দিলেন । থাকার জায়গাও দিলেন ইস্কুলের ভিতর । কাজের মধ্যে রাতদিন ইস্কুল পাহাড়া দেওয়া । সকালে ইস্কুল শুরু হওয়ার আগে দুটো ভাতে ভাত ফুটিয়ে খেয়ে নিতাম । আর সেই রাতে একবার ।

----- তোমার বাড়ি কোথায় ছিল রামশরণ । --- কৌতুহলে জানতে চাইলাম ।

-----  সে তো ছিল বিহারে । কত ছোটোবেলায় মা মারা যাবার পর বাপটা আমাকে নিয়ে গা-ঘর সব ছেড়ে চলে এল কলকাতায় । বাপ শিয়ালদায় কুলিগিরি করত । আমি প্ল্যাটফর্মের একটা কোনে বসে থাকতাম । ট্রেন আসা-যাওয়ার ফাঁকে বাপ আমার কাছে আসত আর দু-পাঁচটাকা করে দিয়ে যেত । আমি খাবার কিনে খেতাম । তারপর বাপটাও একদিন মরে গেল । না-খাওয়া পেটে অত ভারি ভারি মালপত্র টানতে পারছিল না আর । একদিন এক বাবুর মাল মাথায় নিয়ে যেতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মেই পড়ে গেল । আর উঠল না । আমি এবার কি করব । অন্যান্যো কুলিকাকারা প্রথম প্রথম দু-তিনটাকা করে দিত । কিন্তু তাতে আমার পেট ভরত না । খিদের জ্বালায় চুরি করতে শুরু করলাম । এভাবে বেশ হাত পাকিয়েও ফেললাম । তখন একটু বড়ো হয়েছি । একদিন এক মহিলার সোনার চেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লাম । পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ।খোঁজ করার মত আমার তো কেউ ছিলনা । তাই পনেরো দিন জেলেই রইলাম । নাবালক বলে তেমন কোনো সাজা হল না । কিন্তু জেলের যে বড়বাবু ছিল সে একদিন আমায় ডেকে আমার সব কথা শুনল । কি জানি হয়ত আমার ওপর তার মায়া হয়েছিল । একদিন আমায় ডেকে জিজ্ঞাসা করল -- তুই জেল থেকে বেড়িয়ে কোথায় যাবি । 

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম । কি বলব । আমার তো কোনো ঘরবাড়ি বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন কোথাও কেউ নেই । আবার অনির্দেশের পথে আমাকে কামড়াকামড়ি করে বাঁচতে হবে । বুক ফেটে কান্না আসছিল তখন । কেবল বাপের কথা মনে হচ্ছিল । বড়বাবু আমার মাথায় হাত রেখে বলল --- আমার সাথে যাবি ? আমার ঘরবাড়ি দেখাশুনা করবি , বাগান দেখবি আর আমার ঘরে থাকবি । কি বলব সেদিন যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । একমুঠো নিশ্চিন্তের ভাতের আশায় চোখদুটো চকচক করে উঠেছিল । 

রামশরণ তার পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়ে একটু থামল । আমি আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম --- বড়বাবুর বাড়িতে তুমি গেলে ?

--- হ্যাঁ , আবার বলতে শুরু করল রামশরণ । ছাড়া পেয়ে সেইদিন আমি জেলের বাইরে বসেছিলাম । তারপর বড়বাবুর ডিউটি শেষ হলে আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন । কি বলব মাষ্টারমশাই এমন ভালো মানুষ যে পৃথিবীতে আছে তা তার সঙ্গে না গেলে বুঝতেই পারতাম না । উনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক বাবা তার ছেলের জন্যও করে না । নামেই তার বাড়ির কাজের লোক ছিলাম । সে আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিল , থাকার জায়গা দিল , দিনকয়েক পড়ে আমাকে ইস্কুলেও ভর্তি করে দিল । আমি খাইদাই পড়াশুনা করি আর বড়বাবুর বাগানে বাড়িতে যতটা সম্ভব কাজ করি । এভাবে মাধ্যমিকটা পাশ করেছিলাম । একদিন হল কি দিব্বি ভালো মানুষ খেয়েদেয়ে জেলে গেলেন । সন্ধ্যার সময় প্রচুর গাড়ির ভীড় সামনে । কি ব্যাপার বাবু তো জেলে গেছে । অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি গেটের দিকে । একটা মড়াবাহী গাড়ি ঢুকল গেট দিয়ে । ছুটে গেলাম । আমার বড়বাবু শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে । একবারো তাকিয়ে দেখল না ।

কঙ্কাল বোধহয় নিজের কষ্টকে দমন করতে কিছুক্ষণ থামল । আমার একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল । ভালো মানুষরা বোধহয় বেশিদিন আয়ুকাল নিয়ে পৃথিবীতে আসে না ।

---- তারপর কি হল রামশরণ ? --- রামশরণের জীবনকাহিনী আমাকে চুম্বকের মত টানতে লাগল আরো জানার জন্য ।


পরের পর্ব আগামীকাল ........... 

Tuesday, December 24, 2019

কঙ্কাল

কঙ্কাল


         ক্লাশ টুয়েলভের টেষ্ট পরীক্ষা শেষ । ফাইনালের জন্য ল্যাবটা পরিষ্কার করাচ্ছিলাম কয়েকটি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে । এক্সটারনাল এগজামিনার আসবেন । একটু গোছগাছ না করলে কেমন দেখায় । 

               গোছানো শেষে একটু আগে ছেলেরা চলে গেছে । আমি তখনো চেয়ারে বসে ওদের প্রজেক্টের খাতাপত্রগুলো ঘাটাঘাটি করছিলাম । সাড়ে তিনটে বাজে । চারটে নাগাদ বেরোবার ইচ্ছে । একটি ছেলের খাতায় চোখটা আটকে গেছে । কভারটা তো সুন্দরই । খাতার ভিতরটাও এত সুন্দর পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন যে চোখ আপনা-আপনি পরপর পৃষ্ঠাগুলো পড়তে বাধ্য করছিল । এমন সময় কে যেন ডাকল ---- ' শুনছেন ' । আমি দরজার দিকে তাকালাম । কেউ নেই । হয়ত আমার মনের ভুল অথবা নীচে থেকে আওয়াজ আসছে ভেবে আবার খাতায় মনোনিবেশ করলাম ।

     দ্বিতীয় ডাকটা একটু পরে আরো স্পষ্ট করে উচ্চারিত হল ---- ' মাটারমশাই , শুনছেন । '

       এবারও আমি দরজা-জানালাসহ সমস্ত ঘরটাতে একবার চোখ ঘুড়িয়ে নিলাম । এই স্কুলে আমি জয়েন করেছি আট মাস হল । এর মধ্যে শুধু ক্লাশটুকু করা ছাড়া ল্যাবে খুব বেশি সময় কাটেনি আমার । উপরন্তু ল্যাবরেটরিটা তিনতলায় সারি সারি চারটে ঘরের একদম শেষ ঘরটায় । বাকি ঘরগুলোও বন্ধ । তাই এমন নির্জন পরিবেশে গাটা ছমছম করে উঠল । হঠাৎ চোখ পড়ল আলমারির ভেতরে রাখা কঙ্কালটার দিকে । 

   --- হ্যাঁ , হ্যাঁ , আমি বলছি । আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । '

          আলমারের পাল্লা খুলব কি মুহূর্তে আমার সারা শরীর কেমন অবশ মনে হল । হাত-পাগুলো এত ভারি যে আমার নড়বার ক্ষমতা নেই । মাথার মধ্যে কোনো বোধও কাজ করছে না । 

      --- ' আলমারির পাল্লাটা একটু খুলুন না । আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে । খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন । '

         এই করুণ আর্তিতে আস্তে আস্তে সম্বিত ফেরে আমার । একুশ শতকে ভুত ! তাও আবার আমার ল্যাবে ! আমার বিজ্ঞানমনষ্ক মন জেগে উঠতে থাকে । কৌতুহল হয় । যা শুনছি সেটা কি ঠিক । চেয়ার ছেড়ে উঠে আলমারির চারপাশটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম । আজকাল স্যার - ম্যাডামদের বিপাকে ফেলার জন্য ছেলেরা অনেক রকম দুষ্টুমি করে । আমাকে ভয় দেখাবার জন্য সেরকম কিছু করে রাখেনি তো । এখন তো সবার হাতেই এন্ড্রয়েড ফোন । ভালো করে ল্যাবের সর্বত্র খুঁজে দেখতে লাগলাম । না । সন্দেহ করার মতো কোনো বাক্স বা স্পীকার কোথাও নেই । বাইরে বেড়িয়ে কড়িডোরটা একবার দেখলাম । নীচের দিকে ঝুঁকে দেখলাম । সব ফাঁকা । এবার আস্তে আস্তে আলমারিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । কঙ্কালটাকে ভালো করে লক্ষ্য করছি । খুব বেশি পুরনো তো নয়ই , জিনিষটাও আসল বলেই মনে হচ্ছে । পর্যবেক্ষণ করছি , এমন সময় কঙ্কালের মুখটা যেন সত্যিই নড়ে উঠল । 

       --- মাষ্টারমশাই , পাল্লাটা একটু খুলবেন । 

      আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে সে আবার একই কথা বলল । আমি এবার আস্তে করে পাল্লার একটুখানি খুললাম ।

     --- ব্যাস , ব্যাস , ওতেই হবে মাষ্টারমশাই । অনেক ধন্যবাদ । ছেলেগুলো একেবারে আটকে দিয়ে গেছে ।

       আমার নির্বাক মুখের দিকে তাকিয়ে সে বলতে থাকে --- প্রায় ন'মাস ধরে আমি এখানে আছি । কি করব বলুন সারা জীবন যাদের মাঝে কাটিয়ে দিলাম মড়েও যে তাদের ছেড়ে থাকতে পারিনা । বাচ্চাদের কলরব না শুনতে পারলে আমার ভালো লাগে না মাষ্টারমশাই ।

       ---- তুমি কে ? --- আমি অষ্ফুটে জানতে চাইলাম । 


ক্রমশ : ......

Monday, December 16, 2019

এখনো হাসে

এখনো হাসে

আমি তখন বছর তেরো
সলাজনত একলা ঘরে
হঠাৎ চমকে ফিরে তাকাই
অজানা এক কন্ঠস্বরে
এমন কেন ধ্যান-গম্ভীর
স্তব্ধ চারপাশ
আমি তখন ভীত হরিণী
জীবন - উদাস

হয়ত তখন একটি-দুটি
পাপড়ি মেলার সময় হল
কিন্তু আমি স্বভাব-ভীতু
একলা মনে এগিয়ে চল

এই নিয়মে এই রীতিতে
চলেই গেলাম একা একা
হঠাৎ পথে চড়াই হল
ধানের ক্ষেতে প্রথম দেখা

ধানেও একদিন সূর্য নামে
সোনা রোদের আগুন ছড়ায়
দেখতে দেখতে জীবনজুড়ে
হেমন্ত তার মেদূর ছড়ায়

আমি আবার একলা পথে
একলা জীবন একলা মতে
চমকে দেখি শীত গিয়েছে
বসন্ত দ্বারে কড়া নাড়ায়
খুলব কিনা ভাবতে ভাবতে
কেটে গেল একলা দুপুর
বুঝিনি তাই কোন রীতিতে
সন্ধ্যা ঘনায় কাঁদায় সুদূর

এখন যখন ব্যস্ত ঘড়ি
জীবন আমার চলনসই
হাতের কাছে সঞ্চয়িতা
এখনো তবু অবাক হই
শেষের কবিতা শেষ হয়নি
এখনো অনেক আছে জমা
বাড়ির ভিতর সেই বাড়িটা
এখনো হাসে ঝর্ণাসমা ।


Monday, December 9, 2019

শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

                 শেষ দেখা --- অন্তিম পর্ব

    স্টেশনচত্বর একদম খাঁ খাঁ করছে । টোটোর কোনো চিহ্ণ নেই । মনে পড়ল গতকালের একটা ভাসা ভাসা কথা --- বিকেলের দিকে টোটো উইনিয়নে মিটিং আছে বোধহয় । উঃ এবার কি করবে । চোখ ফেটে জল আসছে । কি আর করা যাবে । আসার সময় তাড়াহুড়োয় মোবাইলটা টেবিলেই ফেলে এসেছে বোধহয় ।
হাটাপথ ধরল ঐশী । মাঠের মধ্যে দিয়ে গেলে একটু সর্টকাট হয় । জমির ফসল উঠে গেছে । মাঠও এখন ফাঁকা । অন্তত দশ মিনিট সময় কমবে ।
মনের মধ্যেটায় কু ডাকছে বারবার । হে ঈশ্বর ভালো করে দিও । বাড়ি ফিরে মানুষটাকে যেন ভালো দেখতে পারি ।
    সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পালদের  পুকুরের কাছে চলে এসেছে ঐশী । আর বেশিদূর নয় তাদের বাড়ি । পুকুরটা বায়ে রেখে একটু এগোলেই বড়ো রাস্তা । তারপর পাঁচ মিনিট হাটলেই ওদের সাবেকি বাড়ি । যদিও এত বড় বাড়িতে এখন বাসিন্দা বলতে ওরা চার শরিকের চার ছেলের পরিবার । আর তাদের চার ঘর ভাড়াটে ।

    হঠাৎ পুকুরপাড়ের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধরাস করে উঠল ঐশীর । একটা আবছায়া দেখা যাচ্ছে । এইসময় এখানে কে দাঁড়িয়ে আছে । পা যেন ভারী হয়ে আসছে ঐশীর । পালদের পুকুর সম্পর্কে বদনাম আছে অনেক । প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের পুরানো পুকুর । দেবাংশুর চিন্তায় আগে পুকুরের কথা মনে পড়েনি । পুকুরপাড়ের কলাবাগানের মধ্যে কি যেন একটা ছুটে পালালো । ঐশীর গা শিরশির করে উঠল । একপা একপা করে এগোতে লাগল ঐশী । আর কিছু মাথায় আসছে না । আবছায়াটা এবার উঠে দাঁড়ালো । ঐশী আর এগোতে পারল না । মুহূর্তে চোখের সামনেটা অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে শুনতে পেল কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে ।

     এ কি দেবাংশু তুমি এখানে ।
আজ তো টোটো ইউনিয়নের মিটিং আছে । টোটো পাবে না । ফোনেও তোমাকে পাচ্ছি না । তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
ওঃ কি ভয় পেয়েছিলাম । তোমার কথা ভাবতে ভাবতে  আর এই পুকুরের কথা মনেই ছিল না । কিন্তু তুমি যে বললে তোমার শরীর খুব খারাপ । তাহলে এতটা পথ এলে কি করে ।
অন্ধকারে দেবাংশুর মুখটা দেখা গেল না । এইরকম পরিবেশে সুস্থ দেবাংশুকে পেয়ে আজ যেন কথায় পেয়েছে ঐশীকে ।

     হঠাৎ মনে হল পাড়াটা যেন আজ একটু বেশিই নিস্তব্ধ । কুকুরগুলো চুপচাপ । মনে একটা খটকা লাগলেও দেবাংশুর সুস্থ হয়ে ওঠার আনন্দে এসব আর আমল পেল না ঐশীর কাছে ।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বাড়ির সামনে বহু মানুষের জটলা চোখে পড়ল ঐশীর । কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই 'তুমি এগোও , আমি একটু আসছি ' বলে যেন অন্ধকারে মিশে গেল দেবাংশু ।
ঐশী পায়ে পায়ে বাড়ির গেটের কাছে উপস্থিত হয় । তাকে দেখতে পেয়ে সবাই তার পথ ছেড়ে দাঁড়ায় । সবার চোখে মুখে কেমন একটা সন্ত্রস্তভাব । কিছু বুঝতে না পেরে ঐশী ছুটে যায় ভেতরদিকে । উঠোনের মাঝখানে শোয়ানো রয়েছে দেবাংশুর নিষ্প্রাণ নিথর দেহ । এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না ঐশী । তার অচৈতন্য শরীরটা লুটিয়ে পড়ল মৃত দেবাংশুর পায়ের কাছে ।

Thursday, December 5, 2019

শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

                  শেষদেখা --- প্রথম পর্ব

ট্রেন থেকে নামতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল ।প্রায় দু'কিমি পথ এখনও যেতে হবে । টোটো করে যেতে হবে । মনের মধ্যে নানান চিন্তা ভিড় করে আসছে । একটা সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর একটা । মনটাকে কিছুতেই সংযত করতে পারছে না ঐশী ।
অফিসে তখন লাঞ্চব্রেক চলছিল । খাবারের ট্রেটা হাতে নিয়ে মাত্র মাত্র টেবিলে বসেছে , ওমনি দেবাংশুর ফোন ।
তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসো , আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ।
তখন থেকেই মনটা খচখচ করছে । ক'দিন ধরেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছে । গত বুধবার অফিস থেকে ফিরল জ্বর নিয়ে । রাতে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ঐশী । সামান্য জ্বর । রাতটা গেলেই ভালো হয়ে যাবে । কিন্তু রাতটা যেন আর কাটতেই চাইছে না । জ্বর কিছুতেই একশো চারের নীচে নামছে না । গত দু'দিন এভাবে কেটেছে । দুদিন পর আজ অফিসে এসেছে ঐশী । ভেবেছিল একটু তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে । কিন্তু দেবাংশুর ফোনটা পেয়ে আর স্থির থাকতে পারল না ঐশী । কোনো রকমে একটু খেয়ে রাইকে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিয়েই বেড়িয়ে এল । তবু প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবার আগেই তিনটে চল্লিশের ট্রেনটা বাই বাই করে বেরিয়ে গেল । যেদিন তাড়া থাকে সেদিন সবেতেই এরকম হয় । এরপর ট্রেন সেই চারটে পঁচিশে ।
ট্রেন থেকে নেমে দ্রুত পা চালাল ঐশী।আগে নাগেলে টোটোতে জায়গা পাওয়ামুশকিল হবে।একার জন্য কোনো টোটো যাবে না।আর গেলেও বেশি ভাড়া চাইবে।কিন্তু একি!

Monday, December 2, 2019

অনুগল্প --- খবর

                       অনুগল্প --- খবর

ওমা বৌদি জানো না কাল রাতেই শেষ গো ।
আমাদের কাজের মেয়ে চুমকির বলার ধরনে শুয়ে থেকেও কানটা সজাগ হয়ে উঠল । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়ার আগে স্থানীয় যা কিছু সংবাদ চুমকির দৌলতে তার প্রায় সবই আমার কানে এসে পৌঁছোয় । এমনকি পাশাপাশি বাড়িগুলির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য , যেগুলি কোনোভাবেই আমাদের জানবার কথা নয় সেগুলিও অনায়াসেই আমরা জানতে পারি চুমকির খবর শোনাবার আতিশয্যে । মাঝে মাঝে ভাবি আমার আর আমার স্ত্রীর নির্ভেজাল সংসারে এমন কোনো ঘটনা ভাগ্যিস ঘটে না যেটা এভাবে অন্য কোনো বাড়িতে মুখরোচক হয়ে পরিবেশিত হয় । যাই হোক চুমকির আজকের খবরটা শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে রইলাম ।
কি আবার হোলো রে । কি শুনব । আমার স্ত্রীর নিরুত্তাপ অভিব্যক্তি । এমন শান্ত শিষ্ট নিরুত্তাপ স্রোতা পেলে আদৌ কারো এমন টাটকা সংবাদ শোনাতে ইচ্ছে হয় কিনা মাঝে মাঝে আমার তাতে সন্দেহ জাগে । অবশ্য এক দিক থেকে আমার স্ত্রী যে এক নম্বর সে কথা মানতেই হবে । কারো কোনো কথায় কখনো বিরক্ত হতে তাকে আমি আজ পর্যন্ত কখনো দেখিনি । সে সবার সব কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে । আজো তাই ।
ওমা , বিলে গো , বিলে গুন্ডা .... । কাল রাতে ছ'টা গুলি করেছে গো । কি আওয়াজ সাঁই সাঁই করে .... । আমাদের ঘরের কাছাকাছি কিনা .... । ভয়ে আমার সেকি অবস্থা .....। তারপর আমাদের ঘরের পেছন দিয়েই তো সব ছুটে গেল গো । আমার তখন কি কাঁপুনি .... । ভয়ে কাউকে ডাকতেও পারছিনা ..... ।সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি গো ।
প্রত্যেকটা পাড়ায় যেমন একটি করে উঠতি দাদা থাকে বিলেও তাই । ভালো নাম প্রবাল শিকদার । ক্লাশ নাইট - টেনে আমার কাছে পড়ত । বাবা কাঁকিনাড়ার ঔদিকে কিসের একটা কারখানায় কাজ করে । বাড়িতে অনেকগুলো ভাইবোন । ও পরিবারের বড় ছেলে । হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেওয়ার পরপর ওর বাবা মারা যায় । তারপর  এঘাট ওঘাট করে অবশেষে এই পথে স্থিতু হয়েছিল । কিছুদিন ধরেই ওর জুলুমবাজির নানা কান্ডকারখানা কানে আসছিল । তারই কোনোটার প্রতিফলন নাকি আজকের ঘটনা ।
আরে ঐ যে খালপাড়ে দশ বিঘা জমিটা নিয়ে যে বুড়িটা একা একা থাকে না .... । ঔ বাড়িটার ওপর ওর অনেকদিন ধরে লোভ রয়েছে  গো ....। গতকাল বুড়ি ওর বাগানের দুটো মোটা মোটা গাছ কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি করেছে গো । বুড়ির তো কেউ নেই । খাবে কি । তাই গাছ দুটো বেচেছে । তা আর খাওয়া ...... । গাছ কেটে নিয়ে যাওয়াও সারা  আর বিলের ওখানে পৌছনোও সারা । ব্যাস গাছ বেচা টাকা থেকে দশ হাজার দাও । বুড়ি বলে  , ও বাবা  আমি একা মানুষ । কেউ দেখারও নেই খাওয়ানোরও নেই । এই বয়সে কি কাজ করতে পারি । এই টাকা দিয়ে আমি শেষ দিন কটা খেয়ে পরে চলব বলে গাছদুটো বিক্রি করলাম । আর তুই সে টাকাও আমায় দিবিনা । তোর এত লোভ । ভগবান তোর বিচার করবে । ভগবানই তো আমাকে পাঠিয়েছে বলে সে টাকা নিয়ে নিল গো । এতটুকু মায়া দয়া নেই । কিন্তু কি হল । পারলি না তো একটা রাতও কাটাতে । ভগবান দূত পাঠিয়ে ঠিক শাস্তি দিল তো । এজ্যেই বলে লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ।
কি একটা কাজে কদিন আগে ঐ পথ দিয়ে একবার যাবার দরকার হয়েছিল । তখন খালপাড়ের ঐ বাড়িট চোখে পড়িছিল । কেউ যে ওই বাড়িতে থাকে তা অবশ্য মনে হয়নি । নানা রকম দুষ্কর্ম করার উপযুক্ত জায়গা বটে । কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে না থেকে তাদের শেষ সহায়টুকু আত্মসাৎ করার এ কি খেলায় মেতে উঠেছে যুব সমাজ ! যাদের হাত ধরে সমাজ  আরো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তারা কোন পাঁকে ডুবে যাচ্ছে ! এই দুঃসময়ে এইরকম দিশাহীন ছেলেগুলোকে সঠিক দিশা কে দেখাবে । অন্ধকারের উৎস হতে আলোর দিকে হাত ধরে নিয়ে যাবে কে । নাকি সত্যিই ভগবানের দূত এসে  এভাবে শাস্তি দেবে তাদের !