Thursday, November 26, 2020

শঙ্খ মামার বেড়াল

শঙ্খ মামার বেড়াল



শঙ্খমামার আদুরে বেড়াল ,
নামখানি তার ভজন ,
গোঁফজোড়া তার ইয়া বড়ো ,
সাত কিলো তার ওজন ।

রোজ সকালে মামার সাথে
ঘুম থেকে তার ওঠা ,
ব্রেকফার্ষ্টে খাবে দুধে
পাউরুটি এক গোটা ।

দুপুরবেলা ভাতের সাথে
কাটা পোনা চাই ,
শরীরটা তো রাখতে হবে
খেতেই হবে ভাই ।

সন্ধ্যেবেলায় একবাটি দুধ
সঙ্গে চারটে মেরি ,
মামা বলেন , ইহজগতে
ভজনই তার বেড়ি ।

ভজনই তার বন্ধু বান্ধব ,
ভাই বোনও ভজন ,
ভজনই তার দেবতাস্বরূপ
ভজন আত্মার স্বজন ।

ভজন যদি বাইরে বেড়োয় 
আঁধার দেখে মামা ,
ঠোঁট ফুলিয়ে হাত পা ছুঁড়ে
কেঁদে ওঠেন - রামা -- ।

রামাচাকর পড়ি-মড়ি
উর্দ্ধশ্বাসে ছোটে ,
ভজনকে না পেলে ফিরে
ভাগ্যে কি যে জোটে ।

এদিক- ওদিক ঘুড়ে ফিরে
হণ্যে যখন রামা ,
ঘরে তখন গভীর ঘুমে
ভজন এবং মামা ।

Friday, November 20, 2020

ছুঁয়ে যায় প্রাণ

ছুঁয়ে যায় প্রাণ



নীল আকাশে ঠোঁট ডোবালাম আজ ,
হিমেল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে যায় ,
এমন করে ভালোবাসার বাতাস
বলছে ডেকে আয়রে কাছে আয় ।

এতদিনের খরায় ফাটা জমি
হঠাৎ করে পেল নতুন প্রাণ ,
আকাশ-জমিন মিলিয়ে দিল আজ
জনমকালের সজীবতার গান ।

এবার বোধহয় নতুন সৃষ্টি হবে
দশদিকেতে তারই আভাস পাই ,
গাল ফুলানো নতুন কুঁড়িগুলির
মনের মাঝে খুশির সীমা নাই ।

শিউলি-বোঁটার গন্ধ ছুঁয়ে গেছে
বৃন্তে এখন নতুন প্রাণের ছায়া ,
কচি কচি সবুজ পাতার ফাঁকে
জড়িয়ে আছে অলৌকিক মায়া ।

পাতার মাঝে চোখ মেলেছে কারা ?
ভেঙেছে বোধহয় পদ্মকলির ঘুম ,
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়
নবীন সূর্যের আলতো হাসির চুম ।

প্রভাত মেঘে সোনার আলো হাসে
সেজেছে কেমন পানায় ভরা পুকুর ,
শারদ-মেঘে জলছবির মতন
শিশির ঝরে পড়ছে টাপুর টুপুর ।

এমন করে সারা শরীর জুড়ে
ছড়িয়ে পড়ে অতল প্রেমের আবেশ ,
সৃষ্টিসুখে আবেগঘন মন
রাখবে বুকে ভালোবাসার রেশ ।

Tuesday, November 17, 2020

দিনের শেষে

দিনের শেষে


দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে
ঘরে ফেরার টান ,
অন্ধ বাউলের একতারাতে
দিন শেষেরই গান ।

সকাল হলে যে ছেলেটার
পেটে ক্ষুধার ধার ,
সন্ধ্যা হলে গুটিশুঁটি
ক্লান্ত শরীর তার ।

ফুটপাতের ঐ জায়গাটুকু
মৃত্যুঘুঘুর ফাঁদ ।
দিনের শেষে সেইখানেতেই
হাসে সোনার চাঁদ ।

চাঁদ যেন তার খেলার সাথি
অনেক কালের সই ,
জনমকালের পরমাত্মীয়
তবু , সঙ্গে থাকে কই ।

যে মেয়েটা দিনের আলোয়
সাত চড়েতেও চুপ ,
দিনের শেষে আঁধার রাতে
তারই অন্য রূপ ।

ঘরে যে তার অভাব শত
ছোট্ট ভাই আর বোন ,
দিনের শেষে খুঁজে ফেরে
অন্ধগলির কোন ।

Wednesday, November 11, 2020

আমি ঈশান

আমি ঈশান





আমি ঈশান ---
ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের জুনিয়র টিচার ।
বাবা-মার একমাত্র সন্তান ।
বাবার বড় ইচ্ছা ছিল ---
তার ছেলে মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে ---
সুযোগও পেয়েছিলাম ,
হায়ারসেকেন্ডারি পরীক্ষায়
আহামরি রেজাল্ট না করলেও
জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভালো ফল নিয়েই
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছিলাম ।

আমার বাবা একজন গেজেটেড অফিসার
চাকরীজীবনের প্রায় শেষ দিক

কলেজে আমার তখন থার্ড ইয়ার চলছে
পড়াশুনার ভীষণ চাপ
বাড়ির সাথে যোগাযোগ করারও সময় নেই
তখন মোবাইল ছিল না 
একদিন এমার্জন্সি কল এল কলেজ হোষ্টেলে
অসময়ে --- হৃৎপিন্ড উঠল লাফিয়ে ---
শিরায় তো একই রক্ত ---- তাই
খবর ছড়ায় রক্তে ---
রূদ্ধশ্বাস নেমে আসি ---

---- হ্যালো ----
---- বাবা , তুই বাড়ি আয়
মায়ের আহত গলা কাঁপিয়ে দেয়
---- কেন মা -----
---- তোর বাবা আর নেই ---
মুহূর্তে দুলে ওঠে আমার পৃথিবী
আকাশ ভেঙে কোথায় বাজ পড়ে কড়্ কড়্ কড়্

শান্ত নীরিহ সদাহাস্যমুখ আমার বাবার মৃত্যু
সহজ পথে আসেনি ---
ভালোমানুষ বাবার কোমল হৃদয়ে
পেয়েছিলাম নখের আঁচড় ,
কতগুলি নরপিশাচের উন্মত্ত লালসা
ক্রমে কলঙ্কিত করছিল 
শরতের আকাশের মতো বাবার মনটাকে
কখনো কখনো জলে ভার হত সে আকাশ
কিন্তু বৃষ্টি ঝরতো না 
অমারবিকতার সাথে যুঝতে যুঝতে
ব্লকেজ বাড়তে থাকে হৃৎপিন্ডের

তারপর সেই দিন ---
মিথ্যার হাতে সত্যের ঘটে চরম লাঞ্ছনা
অপমানে অপমানে ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ
মুখ থুবরে পরে মাটিতে
চারপাশে নরপিশাচের নগ্ন উল্লাস

আমার অসহায় বাবা আর কথা বলেনি

কি দোষ ছিল আমার বাবার বলতে পারেন
সমাজের নগ্নরূপটা চিনতে পেরেছিল, তাই---
ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল মিথ্যার ফানুস
চিহ্নিত করতে চেয়েছিল নরখাদকদের
ব্যাগভর্তি টাকার মূল্যকে মূল্যহীন করে
ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল সমাজের কতগুলি --
ভন্ড কালো হাত ,
তাই , আমার সহজ সরল বোকা বাবার
কালো বিষাক্ত এই পৃথিবিতে
বেঁচে থাকার ছারপত্রটুকু কেড়ে নেওয়া হল,
ভেঙে দেওয়া হল এক সত্যের মেরুদন্ড।

রাতে এখনো আমি স্বপ্নে দেখি
আমার সদাহাস্যমুখ বাবার-
বলেন -খোকা-
সমাজে মানুষের বড় অভাব
মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় 
আসলে একদল পিশাচ
তারা ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ থেকে
দুধ কেড়ে খূতে পারে ,
শকুনের মতো দৃষ্টি নিয়ে ঘোরে সমাজের আনাচে কানাচে
এরা মানুষের মূল্য বোঝে টাকার অঙ্কে
তুই ভিড়িস না যেন এদের সাথে
ওরা ভয়ানক ,

পারলে মানুষ কর ---
কচি কচি বুকে ভরে দে সততার বাতাস ,
বিশুদ্ধতার আলো খেলুক চোখে ,
মানুষের মূল্য বুঝুক মানবিকতায় ,
মুছে ফেলুক কালো পৃথিবীর ছায়া ---

তাই --- আমি আজ ছাতিমতলা প্রাইমারি স্কুলের
জুনিয়র টিচার
বিটেক , ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিটা
আমার আর পাওয়া হল না ।
 

Monday, November 2, 2020

মেঘের পাড়ে

মেঘের পাড়ে


আয় কাছে আয় দেখবি যদি --
নীল আকাশ আর ইচ্ছে নদী
একসাথে আজ মিশে ---
কোন পথে যে চলবে ধেয়ে
সাদা মেঘের পানসি বেয়ে,
পায় না কোনো দিশে ।

চারিদিকে অপরূপ সাজ ,
হারানো সেই মনটাকে আজ
চল না এবার খুঁজি ---
আকাশ পাড়ে নদীর ধারে ,
খুঁজে ফিরি বারে বারে
কত গলি - ঘুঁজি ।

আকাশ পথে চলি উড়ে ,
বাঁধি আমার ছোট্ট কুঁড়ে
মাতি আপন খেলায় ---
লুকোচুরির সঙ্গী যে হই ,
দলছুটদেরও সঙ্গেতে রই
রঙীন মেঘের ভেলায় ।

দিন শেষে যেই সন্ধ্যা নামে ,
আকাশজুড়ে বিরাট খামে
হাজার তারার আলো ,
দুঃখটাকে আড়াল করে ,
রাতের রঙীন তারা ধরে
মুছব সকল কালো ।