Friday, October 4, 2024

দুর্গার মর্ত্যে আগমন -- অরবিন্দ সরকার


   রম্যরচনা 
   দুর্গার মর্ত্যে আগমন
   অরবিন্দ সরকার 
    ৩০/০৯/২০২৪
এই যে নাথ মর্ত্যে চললাম। তাকাবার জো নেই। একবার চেয়ে দেখো? একেবারে ন্যাংটা কোথাকার? নেশায় গদগদ, দেখার ক্ষমতা টুকুও নাই । দেখি এবার একখানা পরিধান তোমার নিয়েই ফিরবো। পুরুত সব নিয়ে নেয়,আমার পরিধান সেটাও খুলে নেয়। যেভাবে আসছি সেভাবেই ফিরে যেতে হবে। আয়রে গনেশ কার্তিক লক্ষ্মী সরস্বতী। তাড়াতাড়ি পা চালা , মহালয়ার মধ্যে মর্ত্যে পৌঁছাতে হবে।
কার্তিক এবার তোর বয়স হয়েছে যথেষ্ট, ময়ূর ছেড়ে ময়ূরীর খোঁজ করবি বুঝলি? কতো জন প্রেম করে বিয়ে করে ফেললো,আর তুই অকেজো কোথাকার? মোবাইলে ভুল ভাল মিস কল দিবি যেখানে সেখানে। তারপর কোনো কুমারীর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলে, ইনিয়ে বিনিয়ে শুরু করবি। তোর চেহারা দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য। ভুলেও বলবিনা বাবার নাম? তাহলে বিয়ে হবে না। এতো বড়ো সংসার চালাতে আমি আর পারছি না। যদি তোকে ঘরজামাই থাকতে হয় তাও থাকবি, আমাদের সময় বুলাদি ছিলো না। থাকলে কি এতো বড়ো সংসার করতাম? লক্ষ্মী বললো- তাহলে আমরা অপয়া বলো? 
অপয়া কেন হবি? তোর লক্ষ্মীর ভাঁড়ার নামে সবার ভাঁড়ার পূর্ণ হচ্ছে,আর তোর কলসী শূন্য। সবাই লুটে পুটে খাচ্ছে। টাকায় কিনা হয়- মর্ত্যে মেয়েরা কিছুই করছে না,সব কাজ করাচ্ছে তাদের বরকে দিয়ে! পান খাচ্ছে,পা টিপে নিচ্ছে, সিনেমায় যাচ্ছে, আবার সিগারেট ফুঁকছে? এবার তুই বলবি গাঁয়ের প্রধানকে, আমার নাম ভাঙিয়ে খাচ্ছো আর আমি পাচ্ছি না। দেখবি তোর নাম উঠে যাবে। তখন তুই মর্ত্যে থেকে যাবি। আমার অনেক চাপ কমে যাবে। তবে সাবধানে থাকবি? ওখানে মেয়ে পেলেই অসুরেরা ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। অবশ্য ধর্ষনের মৃত্যুতে বিশ লাখ টাকা দেয়। তুই তো টাকা নাড়াচাড়া করতে পারবি না,ও টাকা আমিই পাবো। ওখানে মরলে লাভ আছে, তবে কিছুটা কাটমানি দিয়ে পেতে হয়। মদ খেয়ে মৃত্যু তাতেও টাকা। অপকর্ম করলে ছোট ছোট শিশুদের কাজ বলে উকিল নিয়োগ প্রশাসন করে তার সাতখুন মাফ। বেশিরভাগ লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়! পঁচাত্তর পঁচিশের ভাগ দিতে হয় ।
সরস্বতী তোকে নিয়ে আমার চিন্তা নাই। তিন বছরে হাতে খড়ি, তারপরে স্কুল গেলেই ম্যাট্রিক পাস,পাশ ফেল নাই। তারপর সেলামি বা উপঢৌকন দিলেই একেবারে মাষ্টারী। সৎসঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাই মূর্খের পাঠশালায় মূর্খরা কি পড়াবে। যতো মূর্খ থাকবে ততো শাসকের সম্পদ। তোর বীনা ফেলে দে? গান গেয়ে কি হবে? জ্ঞানী গুণী কীর্তন্যা, এরা সবাই উচ্ছন্যা! এইসব পূর্বপুরুষের কথা, এগুলো মেনে চল তাহলে বড়ো হতে পারবি। যেমন তেমন চাকুরী ঘি ভাত। সমাজের কারিগর সেজে সিংহাসন লাভ। একেবারেই রাম রাজত্ব, কতো সীতা, কতো রাম গড়াগড়ি খাবে চাকুরীজীবীর পায়ের তলায়।
এই যে আমার গোবর গণেশ! একে নিয়েই আমার সমস্যা। দোকান খুলেই বাটখারায় জল,ধূপধূনা সহকারে গণেশ বন্দনা করে সবাই ফুলে ফেঁপে ভোম্বল কলাগাছ। এটা হয়ে রইলো শিখণ্ডী। সবার ভূড়ি মোটা হচ্ছে খেয়ে, কেউ কয়লা, কেউ গরু, কেউ কাটমানি, ঘুষ,বালি, রেশনের মাল মেরে পেট ভর্তি। অতশত টাকা,টাকার কুমির সব। পরকীয়া করছে,টাকার গদি , টাকার বালিশে শুয়ে। আমার পুজো তাতেও ভর্তুকি পঁচাশি হাজার টাকা। আগে চাঁদা তুলে পুজো হতো , এখন সব সরকারি খরচ। ঢাকের তালে কোমর দোলে , মদমত্ত হয়ে ডিজের বিকট আওয়াজ। আর তুই দেখ? দেখলেও খরচা আছে? তোর ট্যাকে কিছু গুঁজে রাখতে হবে। যতো মরণ আমার, ভাবতে ভাবতে আবার সেই শিবের শিবিরেই ফিরে যেতে হবে। এখানে বিধবারা ভাতার পাচ্ছে আর আমারটার মরণ নাই। দেশ দুনিয়ায় কতশত মরছে কিন্তু এই নামুন্যা কবে আর মরবে? মনে তো হয়না যে মরবে? এর চারিদিকে গ্যাজ বেড়িয়ে ফুটপাত শিব,বট শিব,নিম শিব,পাতাল শিব,নটরাজ, শ্মশান, বোল্ডার শিব হয়ে অনন্ত কাল বেঁচে রবে। আমার আর ভাতার খুঁজে লাভ নাই। এ মনে হয় আমাকে উলু দিয়ে এনেছে আর হরিবোলেই ছাড়বে?

No comments: