Wednesday, January 24, 2024

ফিরে এসো নেতাজি -- শ্যামল কুমার মিশ্র

 ফিরে এসো নেতাজি
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ২৪.১.২০২৪ 
আজো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পায় খোকন 
আলের পাশ দিয়ে দৌড়ে চলেছে এক বালক 
দূরে মিছিল বেরিয়েছে 
নেতাজির জন্মদিনের মিছিল
ওর বয়েসী কত ছেলে মেয়ে 
মুখেমুখে ফিরছে সেই গান---
" কদম কদম বঢ়ায়ে জা 
খুশিকে গীত গায়ে জা..."
ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে-- 
আরও জোরে পা চালাও খোকা... 

ছেলেটির গতি আরো বেড়ে যায়
আর মাত্র কয়েক গজ 
হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় ছেলেটি
হাতে উঁচু করে ধরা সুভাষের ছবি 
মিছিল থেকে দৌড়ে আসে ছেলেমেয়েরা 
ধুলো মাখা ছেলেটিকে তুলে ধরে রশিদ ভাই
নির্মল হাসি ঝরে পড়ছে তখনও ওর মুখে 
অপলকে তাকিয়ে রয়েছে সুভাষের দিকে 
ধীরে ধীরে মিছিলে সবার মাঝে মিশে যায় ছেলেটি... 

জীবনের অপরাহ্ণে নানা ছবি ফিরে ফিরে আসে 
আজ তোমার জন্মদিনে সব কিছু বড় ম্লান মনে হয় 
তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ আজ বেনিয়াদের হাতে 
ধর্মের বেনিয়া, ভোটের বেনিয়া, ক্ষমতার বেনিয়া 
২২-শের ভোরে তোমার ভারতবর্ষে হারিয়ে গেছে ধর্মের ঘূর্ণাবর্তে
সহস্র দিয়া আজ সরযূর প্রান্ত জুড়ে...

খোকনের মনে পড়ে এমনি এক ২২-শের কথা 
২২-শের শীতার্ত রাত 
গ্রাহাম স্টেনসকে পুড়িয়ে মেরেছিল একদল মানুষ 
মুখে ছিল এক বিশেষ ঈশ্বর-ধ্বনি
তারও ২৫ টা বছর পেরিয়ে গেছে...

২২-আসে, ২২-যায় 
গ্রাহাম স্টেনস হারিয়ে যায় স্মৃতির পাতায় 
সরযূর দিয়ার আলোক সব শুষে নেয় 
স্টেনসকেও নেয়,অভয়াকেও নেয়...

রাত্রি শেষে  ভোর হয়                
প্রতিবারের মতো তুমি আসো নীরবে নিভৃতে 
গানে, কথায়, অনৃত ভাষণে 
আর সরযূতে ফেলে দেওয়া ফুলের মালায় হয়তো বা তুমি চর্চিত হও 
তুমি নীরব অভিমানে হেঁটে যাও 
একেবারে নিঃশব্দে ধীর পায়ে 
খোকন চিৎকার করে ওঠে---
তুমি যেও না, যেও না নেতাজি 
এখনো কিছু মানুষ তোমারেই চায় 
তুমি তাকিয়ে দেখো নেতাজি 
ওই ছেলেটি এখনো দৌড়চ্ছে 
ওর হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছে 
ও দৌড়চ্ছে..দৌড়চ্ছে 
সবার সাথে গলা মিলিয়ে ও গাইছে--
"তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ কর..."

Tuesday, January 9, 2024

ডাকার মত ডাক পেলে -- দিলীপ ঘোষ


ডাকার মত ডাক পেলে
দিলীপ ঘোষ
০৮/০১/২৪
ডাকার মত ডাক পেলে
সাড়া না-দিয়ে কি থাকা যায়
মনের ঘরে কড়া নাড়লে
দরজা না-খুলে কি থাকা যায়

যে ডাক, হৃদয়েতে আগুন জ্বালায়
যে ডাক, মিলনমেলার বার্তা জানায়
যে ডাকতে, ফুল ভ্রমরের স্পর্শ থাকে
যে ডাকে, আগামীদিনের দিশা থাকে
সে ডাকেতে, সাড়া না-দিয়ে, থাকা যায়

যে ডাকের আওয়াজ ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়
যে ডাক, দেহ মনের জড়তা কাটায়
যে ডাক শুনে, অলস পা-ও হাঁটতে চায়
সে ডাক শুনে, সবার সাথে না-হেঁটে কি থাকা যায়

যে ডাক, আগামীদিনের আশা জাগায়
যে ডাক, সূর্যদয়ের পতাকা ওড়ায়
সে ডাক শুনে, ঘরে কি আর থাকা যায়?

Saturday, January 6, 2024

গুপী রামের চাকরি -- তুষার মন্ডল

গুপী রামের চাকরি 
তুষার মণ্ডল
০৪//০১/২০২৪
আরে আরে চুপি চুপি কর কি হে গুপীরাম গুপ্ত,
এ কি শুনি তুমি নাকি পেয়ে গেছ মাছি মারা স্বত্ব?
সরকারি রীতি নীতি জেনেছ কি লেখা আছে বইটায়?
সাবধানে থেকো ভায়া মশা মাছি মারা ঘোরতর অন্যায়।
এইতো কদিন আগে ও পাড়ার ছোঁড়া প্যালারাম বিটকেল,
থাপ্পড়ে মশা মেরে বাঁধালো সে আহা কি দারুন খিটকেল।
তার দাদা ভূতনাথ দিগগজ পণ্ডিত আইনের বড় আমলা,
হায়!পাইনি রেহাই তবু, বেঁধে যায় সে কি বিদঘুটে ঝামলা।

বাপরে কি কটমটে ভয়ানক বিদঘুটে ঘটনাটা ঘটলো,
গুনধর ছাইপাকা পুলিশের ঠ্যাঙানিটা কপালেতে জুটলো।
মিটে তবু যায়নিকো দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল এজলাস
বেচারা আইনের প্যাঁচে পড়ে, করাবাস করে এলো দু-বছর দশমাস।
দুঃতেরি কি যে বলো?মাছিগুলো ভন ভন বসে কেন বাবুদের খাবারে,
চাকরিটা পেয়ে তাই বসে বসে সারাদিন মাছি মারি ভাঁড়ারে।
শুনেছ কি এই যেন সেইদিন, বাঁকুদের ছোট ছেলে ছকু্রায়
নোংরা খাবার খেয়ে বেচারি যে মারা ওই গেল কলেরায়।।

ছেলে মেয়ে হলো ভায়া মেরে কেটে হাতে গোনা আটটি
চাকরিটা পেয়ে তাই খেয়ে পড়ে বাঁচছি, হাতে কিছু পাচ্ছি।।
দুঃতেরি তার চেয়ে পারো যদি মারো তবে বড়োসড়ো গণ্ডার,
নিশ্চিন্তে জীবনটা কেটে যাবে হাতে পাবে বড়সড়ো ভাণ্ডার।
গুঁজে দিও সেপাইয়ের হাতে কিছু আইনের মুখ হবে বন্ধ,
তাই বলি শোনো ভায়া গণ্ডার মারা নয় একেবারেই মন্দ।
আইনেতে আছে নীতি আর আছে ভীমরতি জানো নিশ্চয়
তাই বলি মশা মাছি মেরোনাকো,এতে ঘটেবেই বিপর্যয়।

Friday, January 5, 2024

শেষবেলার শাহজাহান -- গৌতম তরফদার

 শেষবেলার শাহজাহান
 গৌতম তরফদার
 ০৫.০১.২০২৪
" পাঠশালার খোলামাঠে হেসেখেলে শৈশবসঙ্গী সেখ শাহজাহানের সাথে দিন কাটানো সমর্পণ বসুর ছোটোবেলা - বড়োবেলা একসূত্রে গাঁথা। দু'জনের আজীবন বন্ধুত্বের বন্ধন। পড়াশুনার কারণে একসময় দু'জনের শারীরিক ছাড়াছাড়ি হলেও দু'জন দু'জনের খোঁজখবর রাখে, খুঁটিনাটি জানে-বোঝে। 

            শাহজাহান জমিদারবাড়ির একমাত্র সন্তান। জমিদারতন্ত্র কবেই বিদায় নিয়েছে কিন্তু সেখ পরিবারের ঠাটবাট এখনও কিছুটা হলেও চলমান। শহর থেকে স্নাতক পাঠক্রম শেষ করেই গ্রামে ফিরে গেছে জমিজমা - চাষাবাদের বিপুল কর্মযজ্ঞে। শাহজাহানের অন্তর জুড়ে গ্রামেরই অতি সুন্দরী নিয়ালি খাতুনের বসবাস। তাদের দু'জনের মধ্যে পরিচয় - যোগাযোগ - ভালোবাসারর সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রধান কারিগর বন্ধু সমর্পণই। সম্পর্কের শুরুতেই ভালোবেসে শাহজাহান নিয়ালির নাম রেখেছে বনান্তিকা।

            প্রথমার্ধে শাহজাহানের পরিবারের আপত্তি থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ধুমধাম করে প্রায় জমিদারি মেজাজেই সাদি হয়ে যায় দু'জনের। সংসারজীবন শুরু.....গভীর মনোযোগে সংসারধর্ম পালন....পরপর তিন পুত্র সন্তানের জন্ম....তাদের বড়ো হয়ে ওঠা..... নিয়ালির ইচ্ছে ও অনুরোধে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ালি ও শাহজাহানের নামে কেনা জায়গায় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা.... শাহজাহানের ইচ্ছেতে বৃদ্ধাশ্রমের নাম রাখা 'বনান্তিকা' ..... প্রথম আবাসিকা নিয়ালির আম্মা নুরজাহান বেওয়া..... এগিয়ে যেতে থাকল  শাহজাহান আর সমর্পণের বন্ধুত্বের বয়স। দুজনের চোখেই এখন বয়সী চশমা।

          দুর্ভাগ্যক্রমে অল্পদিন আগে শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয়া বনান্তিকাকে হারিয়েছে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায়। সেই থেকেই শাহজাহানের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারানোর প্রবনতা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ কাঁদে...হঠাৎ হাসে।

        শাহজাহানের তিন ছেলে বড়ো তো হলো কিন্তু মানুষ হলো না। বাড়ি - জমি - জায়গা নিয়ে তিন ভাইয়ের চরম বিবাদ.... ছেলেদের অন্যায় দাবি, জোরজুলুম, অত্যাচার... মারধোর....  কিছুই বাদ গেল না শাহজাহানের উপর দিয়ে । বন্ধু সমর্পণের চেষ্টায় ছেলেদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওরই নিজহাতে গড়া বৃদ্ধাশ্রম, ' বনান্তিকা'য় শাহজাহানের ঠাঁই হলো........।"

         আজ রবীন্দ্র ভবনের স্টেজে শ্রোতা-দর্শকে ঠাসা হলে নিজের সদ্য লেখা গল্প, "শেষবেলার শাহজাহান" বিখ্যাত কথাশিল্পী মহারণ্য বসু যার ছদ্মনাম সমর্পণ 
স্ব-কন্ঠে গল্প পাঠ শেষ করতেই তুমুল করতালিমুখর হয়ে উঠল। 

          মহারণ্য বসু দৃপ্তকন্ঠে  শেষে বলল," যার জীবনের গল্প আপনাদের পড়ে শোনালাম সে আর কেউ নয়, আমারই বাল্যবন্ধু শাহজাহান। ওই যে হুইল চেয়ারে বসে আছে। " বলেই স্টেজের পুর্ব কোণ দেখিয়ে দিল।

          ভাগ্যক্রমে আজ রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তার অফিসারদের নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন। তিনি সটান স্টেজে উঠে এলেন। শাহজাহানের হাত ধরে সহমর্মিতা প্রকাশ করে হঠাৎ এক প্রস্তাব দিলেন," আপনি অনুমতি দিলে ও রাজি থাকলে " বনান্তিকা "কে রাজ্যসরকার অধিগ্রহণ করবে। বৃদ্ধাশ্রমের নাম অবশ্যই অপরিবর্তিত থাকবে আর আপনি আমরণ সম্মানীয় আবাসিক হয়েই থাকবেন। "

            আনন্দের অশ্রুজল শাহজাহানের দু'চোখ গড়িয়ে পড়ল। আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক সেই মুহুর্তে শাহজাহানের তিন ছেলে যারা লুকিয়ে আব্বার নামের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল গুটিগুটি পায়ে স্টেজে উঠে এসে আব্বার পা জড়িয়ে ক্ষমা চাইল।


Thursday, January 4, 2024

কালের নিয়ম -- স্বপন কুমার দাস

  কালের নিয়ম 
  স্বপন কুমার দাস 
  ০২/০১/২০২৪
কালের নিয়মে আসবে যাবে 
এই কথা তো নতুন নয়,
কালদন্ড কোপে দাঁড়িয়ে সবে 
এতে তো নেই নতুন ভয়।

নিয়তির বিধান মানতেই হবে 
ললাট লেখা বিধাতা হাতে,
ক্ষণিকের আসা যাওয়া ভবে 
ভরা প্রেম মায়া মমতাতে।

তবুও আমাদের মায়ার টানে 
প্রবীণ বিসর্জন রোদনে,
উৎসবে মাতি উল্লসিত মনে 
বরণের আহ্বান নবীনে।

প্রবীণের স্থলে নবীন আহ্বান 
নতুন কিছু পাওয়ার আশা,
বরাতে যদি আঁধার অবস্থান 
নবীন ঢেউ শুধুই নিরাশা।

নবীন যদি হয় গো সুমতির 
ধরণী জনের উর্ধগতি,
নবীন যদি হয় গো কুমতির 
ধরণী জনের নিম্নগতি।

সবুজ শীতল স্নেহ ভরা কোলে 
নবীন প্রবীণ মিলন মেলা,
কালের নিয়মে যুগে যুগে চলে 
পৃথিবীর এই লীলাখেলা।
=======================

নতুন রঙের সূর্য -- বলরাম সরকার

 নতুন রঙের সূর্য
 বলরাম সরকার
 ০২/০১/২০২৪
এসো নতুন সকাল আনি
দিই ছড়িয়ে সূর্যের আলো,
আবর্জনায় গেছে ভরে সমাজ
সবাই মিলে করি কাজ ভালো।

দিগন্তে দিই ছড়িয়ে নতুন বার্তা
করি কাজ হাতে হাত লাগায়,
ধুয়ে দিয়ে পাপ সড়িয়ে দুষ্টুকে
 সৎ উদ্দেশে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগায়।

ঘুচিয়ে দিয়ে নোংরা সমাজকে
নিয়ে হাতে নতুন ফুলের ডালা,
এসো দূর করে দিই ঘৃণা দ্বেষ
হাতে হাত রেখে শুরু করি পথ চলা।

হোক বন্ধ দেশে দেশে অবিরাম যুদ্ধ 
বন্ধ হোক খুন ধর্ষণ লুট রাহাজানি ,
পুরাতন ক্ষত আবর্জনা সরিয়ে জঞ্জাল কে
একে অপরের সহযোগিতায়  হোক দূর গ্লানি।

আরন্যক জীবন -- উৎপল অধিকারী

  আরণ্যক জীবন  
  উৎপল অধিকারী 
 ০৩. ০১. ২০২৪  
ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম অবসাদ বিশ্রাম 
আরণ্যক জীবনে এসবও ছুঁয়ে যায়, 
স্নেহ মমতা ভালবাসার আদিম ছন্দ  
বয়ে চলে ওদের শিরা উপশিরায়।   

ঝড় ঝঞ্ঝা যখন নির্মম উন্মত্ততায়  
কুটির ভাঙে অতি নিষ্ঠুরতায়,  
দুঃসহ ব্যথা সামলে নিতে অরণ্যবাসী 
অবিচল থাকে তবু দৃঢ় ভঙ্গীমায়।   

জীবন বাঁচাতে অরণ্যে অবাধ বিচরণ 
বহু প্রতিকূলতার সাথে তুমুল লড়াই ,  
বিপদের মাঝে গহীন অরণ্য পেরিয়ে  
খাদ্য সংগ্রহে মত্ত ওরা সবাই।     

নতুন সভ্যতার দিনেও শত জনজাতি 
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকে ব্যস্ত,  
সবুজ অরণ্য ওদের স্বর্গসম বাসভূমি  
সভ্যতার অশুভ ইশারায় ওরা সন্ত্রস্ত।    

জনজাতির বাস ডুয়ার্সের বন ছায়ায়  
তবুও শুদ্ধ বাতাস পাওয়া মুশকিল, 
অরণ্য ধ্বংসকারী মানুষের হিংস্র থাবা  
বৃক্ষ নিধনে জীবনের হিসেব গড়মিল।   

==========================

একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট -- সঞ্জিত কুমার মন্ডল

 একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট
    সঞ্জিত কুমার মন্ডল
         ০৩/০১/২৪
         
        বহু বছর পরে আমাদের গ্রামে কালীপদ যুব সংঘ একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে শীতকালেই। ১৫ দিন আগে থেকেই মাঠ পরিষ্কার,রোলার মেশিন দিয়ে সমান করার কাজ চলছে। গ্রামের লোক তাই দেখতে ভিড় করছে। গুঞ্জন উঠছে কালিপদ যুব সংঘ এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে! অর্থের উৎস সবার জানা হয়ে গেল। বাঁশ দিয়ে তৈরি মাঠের চারিদিকে আটটি বিশাল বাতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের চারিদিকে বিশাল বিশাল হোডিং পোস্টার তাতে লেখা আছে "ফুটবল কাপ-২০২৪, নববর্ষে নব আনন্দে জাগো"। খেলা ৩১শে ডিসেম্বর বিকাল থেকে । ডে নাইট খেলা। ৮ দলের টুর্নামেন্ট। প্রায় ছ'টা জেলা থেকে টিম আসছে। প্রত্যেক টিমে বিদেশি প্লেয়াররা আছে যেমন নাইজেরিয়ানরা আছে। পুরস্কার হিসেবে ফাইনালের বিজয়ী দল দেড় লাখ টাকা পুরস্কার পাবে। রানার্স টিম পাবে এক লাখ টাকা। কোয়ার্টার লেভেলে,সেমিফাইনালে এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার আছে। বিশাল বড় স্টেজ। আধুনিক লাইটের ব্যবস্থা। জমজমাটি খেলা। প্রথমে ভেবেছিলাম টিকিট কেটে খেলা দেখতে হবে। তারপর শুনলাম বিনা পয়সায়। বিনা পয়সায় এত বড় খেলা দেখা সুবর্ণ সুযোগ। 
         ৩০ শে ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে গেল বক্স বাজানো। সন্ধ্যা থেকেই লাইট পরীক্ষা করা। চারিদিকে আলোয় আলো ঝলমল করে উঠলো আমাদের গ্রাম। খেলার লাইভ ভিডিও দেখানো চলবে,বেশ কিছু পর্দা মাঠ থেকেও অনেক দূরে টানানো আছে। পরদিন গ্রামের লোকেরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরেই মাঠের কাছাকাছি জায়গায় যে যার আসন নিয়ে বসে পড়েছে। এখনো দু-তিন ঘন্টা বাকি খেলা শুরু হতে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। মাইকে শুভ নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। প্রতিটা কথা প্রসঙ্গে ভেসে আসছে "নব আনন্দে জাগো।"বাইরে থেকে ঘোষক,ঘোষিকাদের আনা হয়েছে। তারা তাদের কাজ করে চলেছে। মানুষ উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ছে। ছাপানো খেলার চার্ট মাঠের চারিদিকে জনগণকে বিতরণ করা হচ্ছে। সূর্যের আরামদায়ক তাপ গায়ে মেখে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জমজমাটী উদ্বোধনী নাচ গান শুরু হলো। গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে দেখল।আনন্দ করতে লাগলো। স্টেজে টেবিলের উপর বিশাল বিশাল ট্রফি, মেডেল সাজানো আছে। বিশিষ্ট ব্যক্তি অতিথিদের স্মারক ও পুষ্প দিয়ে বরণ করা হচ্ছে। হালকা বক্তৃতার পরেই মাঠে নেমে গেল ঝকঝকে জার্সি পরা দুটি টিম। বাঁকুড়া জেলা ও নদীয়া জেলার দুটি টিম। খেলার একটু বাদেই বাঁকুড়া জেলা নদীয়া জেলাকে একটা গোল দিয়ে দিল। দুটো টিমই সুন্দর ছকে খেলছে। দ্বিতীয় অর্ধে নদীয়া গোল শোধ করলো। খেলা উত্তেজনাকর হয়ে উঠলো। অবশেষে গোল শূন্য ট্রাইবেকার। তারপর টসে হেরে গিয়ে বাঁকুড়া পুরস্কার নিয়ে বিদায় নিল।

          দ্বিতীয় খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছিল ঘোষক ঘোষিকাদের বলার ভাষা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। জনগণ "নব আনন্দ জাগো" এই কথা শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। এক্ষুনি শুরু হবে দ্বিতীয় খেলা সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কলরব শোনা গেল। কারণ জনগণ ইতিমধ্যে জেনে গেছে দ্বিতীয় খেলার একটি টিম এখনও এসে পৌঁছায়নি। প্রত্যেক টিমকে টাইম দেওয়া আছে। সেই টাইমেই তাদের খেলতে হবে। এখানে ওয়াকওভার দেওয়ার নিয়ম নেই। এক ঘন্টা থেকে দু ঘন্টা দেরি দেখে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। "নব আনন্দে জাগো" এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ ভেংচি কেটে জোর চিৎকার করে উঠছে। ঘোষক ঘোষিকারা আর পেরে উঠছে না। ক্লাবের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সত্বেও বাঁধভাঙা জলের মতো জনগণ মাঠে নেমে পড়লো। চারিদিকে ভাঙচুর শুরু করে দিল। রাতের ঝলমলে আলোয় সারা মাঠে জনগণ হইহুল্লোড় করতে লাগলো। স্টেজকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়াছুড়ি শুরু হল। সিভিক পুলিশ অল্প কিছু ছিল কিন্তু তারা মার খেয়ে গা ঢাকা দিল। তারপর পুলিশের গাড়ি। আচমকা পুলিশের লাঠিচার্জ। মাঠ ফাঁকা হল। দর্শকও  শূন্য হলো। তারপর কয়েকটা গাড়ি ঢোকার শব্দ। 

                                 (সমাপ্ত)                        

Monday, January 1, 2024

তেইশের জলছবি --- শ্যামল কুমার মিশ্র


 তেইশের জলছবি 
 শ্যামল কুমার মিশ্র 
 ১-১-২০২৪
দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারটার দিকে তাকিয়ে থাকে খোকন
সকালের নরম রোদ্দুর এসে পড়েছে ওর গায়ে 
নানা রঙের আঁকিবুকি খেলা 
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যায় খোকন 
চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা ছবি 
কোনটাতে মিছিল নগরী কলকাতা 
কোনটাতে ক্ষমতা দখলের লড়াই 
গান্ধীবুড়ির পাদদেশে এক হাজার দিন বসে 
শত শত যুবক যুবতী
কেউ কথা রাখেনি, ফিরে দেখার সময় কোথায়
একটা গোটা ক্যালেন্ডার হারিয়ে গেল...

ক্যালেন্ডারের শেষ পাতায় এসে আটকে যায় খোকন 
ব্রিগেড জুড়ে হাজারো কন্ঠের গীতা পাঠ 
খোকন যেন শুনতে পাচ্ছে---
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতী ভারত
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাস্যহম
পরিত্রানায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম
ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভবামি যুগে যুগে"...
ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে হরেক ছবি 
ফুটবল হাতে চলেছে আরো একদল 
হাতে আবার স্বামীজীর ছবি 
'ফুটবল','গীতা পাঠ' সব যেন কেমন গুলিয়ে যায় খোকনের... 

দিনাবসানে ছায়া দীর্ঘায়িত হয় 
জীবনের অপরাহ্ণ বেলায়
দীর্ঘায়িত সেই ছায়া এসে পড়ে
ভেসে ওঠে একটি মুখ
নামহীন, কুলহীন, গোত্রহীন এক বৃদ্ধা ভিক্ষা চায়
কী তার ধর্ম, কী তার পরিচয় 
ক্ষুধার অন্ন খুঁজে মরে ভগবান...

ক্লান্ত অবসন্ন খোকনের দুচোখ জলে ভরে 
তেইশ আর কয়েক দিন বাদে ফিরে যাবে 
বর্ষশেষের দিনগুলো যেন বড় ভারী হয়ে আসে
গাজার হাসপাতালে হাজারো শিশুর মৃত্যু 
ভেসে আসে মায়ের বুকফাটা কান্না 
মারণাস্ত্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আদরের ধন 
হিংসা,যুদ্ধ, ক্ষমতার সীমাহীন আস্ফালন... 
ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বরপুত্রের দুচোখেও কি জল? 

রোদ্দুরটা অনেকটা সরে গেছে 
পৌষের শৈত্য মেখে ফিরে যাচ্ছে তেইশ 
খোকন আপন মনে বলে ওঠে-- ধর্ম থাক না অন্তরমহলে 
হৃদয় বিকশিত হোক প্রেম ভালবাসার বন্ধনে
২৪ শে ঘটুক তার নব অভ্যুদয়...

নব অঙ্গীকার --- দুর্গা শংকর দাশ

নব অঙ্গীকার
দুর্গা শংকর দাশ
01,01,2024
নতুন বছর আনে নবীন চেতনা,
   নব উন্মাদনা আর নবীন প্রেরণা।

নব বরষের প্রাতে  নব উপহার,
   নবারুণ রশ্মি স্নাত নব পারাপার।

নব নব চিন্তা যত মানবের মনে,
   নবীন প্রানের দোলা জাগে প্রতিক্ষণে।

মুছে যাক সুপ্রাচীন জ্বরা ক্লেদ গ্লানি,
     লুপ্ত হোক পুরাতন সে অসার বাণী।

নব নব কর্মধারা নব সঞ্জীবনে,
    নিয়োজিত হোক সদা মানব কল্যানে।

নববর্ষ উদযাপন হোক বিধিমত,
     অঙ্গীকার করি সবে একত্রে সতত।

ধরা হোক মধুময় মধুর মলয়,
     শুষ্ক শীর্ন জড়তার ঘটুক প্রলয়।

লুপ্ত হোক ভ্ৰষ্টাচার পাপাচার যত,
     নির্মল সমাজ হোক আজ কুসুমিত।

কাননে প্রান্তরে আর ধরণীর মাঝে,
        পবিত্র চেতন চিন্তা  উঠুক গরজে।

হে মানব! আজি প্রাতে কর অঙ্গীকার,
         মুছে দেবে অতীতের কলঙ্কের ধার।

নববর্ষে করি সবে মনন চিন্তন।
      রাখিবো সবার মান সদা চিরন্তন।