Wednesday, October 6, 2021

ছাত্র যখন শিক্ষক ডঃ সঞ্জীব রায়


ছাত্র যখন শিক্ষক
------------------------
ডঃ সঞ্জীব রায়
------------------------



রাহুল ছেলে হিসেবে বড়ই ভালো। একটাই দোষ, পড়াশোনায় মন নেই। বাবা-মা আর এক বোনকে নিয়ে সংসার। বেশ কষ্টেই চলে।  বাবা হঠাৎ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। নবম শ্রেণীর ছাত্র রাহুল পারলৌকিক ক্রিয়া মিটে যাওয়ার কয়েকদিন পর স্কুলে হাজির হয়।

প্রথম দিনেই দ্বিতীয় ক্লাসটি অনিলবাবুর, ইংরেজি। অত্যন্ত বদরাগী অনিলবাবু কারণে-অকারণে প্রহার করেন। সেদিন তিনি Tense পড়াচ্ছিলেন। রাহুলকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আমার বাবা ৭দিন ধরে জ্বরে ভুগিতেছেন - এর ইংরেজি কী হবে?" পড়া না পারলে রাহুল চুপ করেই থাকে। সেদিন কি হলো, ছলছল চোখে বলে ফেলে "আমার বাবা একমাস আগে গত হয়েছেন।" ক্লাসের দুষ্টু ছেলেরা না বুঝেই হেসে ওঠে৷ রেগে অনিলবাবু পাগলের মত রাহুলকে প্রহার করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে হেডমাস্টারমশাই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে প্রচন্ড কাঁপতে থাকা রাহুলকে একটি ছেলের সঙ্গে বাড়ি পাঠান।

দুদিন পরে অনিলবাবু কি মনে করে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় নিজের নাম গোপন করে রাহুলকে দেখতে যান। দরজার সামনে সাদা কাপড় পরিহিতা এক মহিলা নিজেকে রাহুলের মা বলে পরিচয় দিলেন। কঠিন হৃদয় অনিলবাবুর মূহুর্তের উপলব্ধি, হয়ত রাহুল সত্যি কথাই বলেছিল। জিজ্ঞাসা করেন "রাহুল এখন কেমন আছে ?" উত্তরে মা বলেন, "জ্বর আছে। দুজন সহপাঠী বলেছিল স্কুলের মাস্টারমশাই অনিলবাবু ওকে খুব প্রহার করেছেন। কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করলে বলে - মা উনি খুব ভালো। আমি বন্ধুদের সঙ্গেই মারামারি করেছি।" অনিলবাবু আর বসতে চাননি।

বিদায় নেবার মুহূর্তে রাহুলের মা হাতজোড় করে বলেন, "মহাগুরুনিপাত বছর, খুব ভয়ে আছি ওকে নিয়ে। দয়া করে একটু আশীর্বাদ করে দেবেন।" অনিলবাবু তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। 


2 comments:

Unknown said...

চমৎকার লেখা। দারুণ লাগলো। লেখককে অভিনন্দন জানাই। দেবী পক্ষের শুরুতে এমন লেখা মন ছুঁয়ে গেল। পূজো খুব ভাল কাটুক আপনার। আরও লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

Oindrila Banerjee said...

খুব ভালো লাগল আপনার এই লেখা টি।আগামী দিনে আরও অনেক লেখার প্রত্যাশা রইল। দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে আপনাকে জানাই অনেক শুভেচ্ছা। শারদীয়ার দিনগুলো আনন্দময় হোক।