Wednesday, October 6, 2021

সঙ্গে গণেশ" (রম্যরচনা) -- অরবিন্দ সরকার



                  "সঙ্গে গণেশ"
                    (রম্যরচনা)
             অরবিন্দ সরকার
           -----------------------------





হ্যাঁরে গণেশ! তোকে নিয়ে এসে তো বিপদে পড়লাম। অতশত খাস না? ভূড়ি কমা। গোগ্রাসে গিলে চলেছিস্ সর্বত্র।
গণেশ-  মা তুমি বাংলা ব্যকরণ জান? গণ+ঈশ=গণেশ । তাহলে কি দাঁড়ালো, জনগণের ভগবান আমি। যতবার পূজা শুরু হয় শুধু সবকিছুই আমাকেই নিবেদন করছে,বলছে ঔম্ গণেশায় নমঃ। তাহলে আমি কি করতে পারি? না খেলে তো প্রসাদ হবে না।তাই খেয়েই যাচ্ছি যতক্ষণ না বমি হয়।বমন না হলে তো উপযুক্ত প্রসাদ তৈরি হবে না। উচ্ছিষ্ট খাবারের নামই তো প্রসাদ।দেখো না চাল ডাল কলা মূলা মিষ্টি বাতাসা সব উগড়িয়ে দিয়েছি।সব পেট থেকে মাখাজোখা অবস্থায় বের করেছি। আহারের সময় ব্যাঘাত করতে নেই জানো তো মা।

মা- তাই বলে সব খাবি।আদেখ্লার বেটা বলবে? সবাই বলবে বাপ কোনোদিন কিছুই খাওয়ায় নি আর বাপের জন্মে দেখেওনি! আমাদের দেবকূলের বদনাম হবে।আখ নারকেল এগুলোও সব খাচ্ছিস।

গণেশ- হাতির মুখ আমার ।তাও তো রয়ে সয়ে খাচ্ছি।হাতি গোটা নারকেল খেয়ে নেয়, আমি ছোবড়া ছাড়ানো ভেঙে ভেঙে খাচ্ছি।হাতি পশু আর আমি দেব।তফাৎ অনেকটাই, শুধুমাত্র মুণ্ডটা হাতির আর সব বাবার। বাবার ভূড়ি আছে আমারও আছে।বাবা সদাশিব, উনি সবসময় চুপচাপ থাকেন।আর তুমি? ধমক দিয়ে বকেই চলেছো আমাকে। 
কার্তিককে আর  তোমার  গুনধর মেয়ে দুটিকে সামলাও এবার?
মা-- ওরা আবার কি করেছে? শুধু শুধু ওদের বকতে যাব কেন!

গণেশ- তোমার চোখ নাই? তুমি আবার ত্রিনয়নী! কার্তিক যার তার বাড়িতে যাচ্ছে আর তাকে সবাই শালো কার্তিক বলছে , শুনতে পাও না? তোমার লক্ষ্মী সবার দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছে, হয়তো ঘরেই ঢুকে যাবে? ভাঁড়ে ভবানী,  তাও আবার লক্ষ্মীর ভাঁড়ার গড়বে?  তোমার মুখে চুনকালি পরবে দেখো।
আর সরস্বতী পড়াশোনা ছেড়ে প্রেম করছে।বই খাতার সঙ্গে যোগাযোগ নাই।বলছে নাকি অনলাইনে ক্লাস। লাইন মেরে মেরে ঘরে ফেরে ! অনলাইনে পরীক্ষা শতকরা হিসাবে পাশফেল।ফেল কথাটি অভিধান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু পাশ। তোমার মেয়ের জানাশোনা যদি প্রেমিক থাকে তাহলে শতকরা ছাড়িয়ে একশত'র মধ্যে দেড়শত পেতেও পারে? একটু ওদের দিকে নজর দাও। আমার দিকে তাকিয়ো না মা! আমি যথেষ্ট ভদ্র সন্তান তোমার। ভালো না হলে সর্বপ্রথম আমাকে কেউ পূজা করে? দেখি এবার ইঁদুর গুলো মর্ত্যে ছেড়ে দিয়েই স্বর্গপুরের রাজধানীতে যাব!মর্ত্যকে সাফসূতরো করে দেবে আমার বাহিনী। কিছু মার খেয়ে মরবে , কিছু বিষ খেয়ে মরবে , তারপর সামনে বছর এসে যারা বেঁচে থাকবে তাদের নিয়ে যাব। স্বর্গের হাহাকার হতে দেওয়া যায় না।বুলাদি এখন স্বর্গে আছেন তাই রক্ষা!স্বর্গে আর দেবদেবীর সংখ্যা বাড়ছে না। জন্ম এবার নিয়ন্ত্রণে এসেছে ! আর মর্ত্যে মারামারি, ধ্বংস লীলা করেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই পাচ্ছে। বোমা পিস্তল তারাও বেড়ে চলে যাচ্ছে ক্রমাগত সমানতালে। ওদের নিয়ন্ত্রণ কর তুমি মা! তোমার ত্রিশূল তৈরীর কারখানা কোথায়? সেখানে গিয়ে বল অস্ত্র তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র পাচার - দুটোই বেআইনি।

মা - এবার তুই থাম্ ! আরতি হবে ও বলিদান হবে। লাইনে সব কেলে পাঁঠারা দাঁড়িয়ে আছে। আমার নামে বলি দিয়ে কি হচ্ছে দেখ্ চেয়ে।বলির মাংস নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে কুকুরের মতো।যে যেমনে পারবে ছাল ছাড়িয়ে নেবে! তুই এবার পাবি নাকি দেখ্ ? ফলমূল গণেশায় নমঃ  কিন্তু পাঁঠার মাংসে ধরায়ঃ মানবায় দানবায় নমঃ। ওদের বিচার কে করবে ! আমি না তুই?

No comments: