Wednesday, October 6, 2021

মেলেনি -- মৃত্যুঞ্জয় সরকার

 মেলেনি
-------------
 মৃত্যুঞ্জয় সরকার 
-------------------------


 সাদা ধবধবে কুকুর ছানা মেজকর্তা শখ করে নাম রেখেছে কাব্বু। কি রুগ্ন ছিল যখন প্রথম এ বাড়িতে আসে। আদর যত্নে কে বলবেএখন  সেই কাব্বু। নাদুস নুদুস বেশ বড়ও  হয়েছে। কাব্বুর  মনে খুব কষ্ট। চেনটা সবসময় গলায় বাঁধা। ভালো লাগেনা ওর কিছু আজকাল।  
কেমন যেন দাসত্বের শৃঙ্খল। বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার খাওয়া। ঠাঁই সদর দরজায় বসে  পাহারা দেওয়া। ঝিমুনি আসলেও উপায় নেই,মাঝেমাঝেই ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে হবে। এদিকে আজ আজ কাল চোরের উপদ্রব। এছাড়াও লোকজন ঘরে এলে প্রথমেই গন্ধ শুঁকে শুঁকে পরিচিত হলে অত ঝুক্কি নেই, অন্যথায় বেগড়বাই হলেই লাঠির বাড়ি। 

 কি যন্ত্রনা কিঁউ কিঁউ করে কেঁদে উঠে কাব্বু, মায়ের করুণ মুখটা জ্বলজ্বল করে ওঠে চোখের উপর। বুকের ভেতরটা ছটফট করে কেঁপে ওঠে স্পষ্ট দেখতে পাই মায়ের চোখ  ঠিকড়ে বেড়িয়ে আসা বিকৃতমুখ,বোনের থ্যাতলানো দেহ। সময় দুর্গাপুজো।  দশমী।  ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হইহই করে খেলছে। কেউ আতশবাজি ফোটাচ্ছে, ঢাকের তালে তালে নাচানাচি করছে।

রাস্তার ধারে বটগাছের তলায় কাব্বু  বসে আছে। মা বোনকে নিয়ে খাবারের খোঁজে বেড়িয়েছে।  পাশেই বিশু ময়রার খাবারের দোকান। যা বদরাগী মানুষ একটু এদিক-ওদিক হলেই গরম খুন্তির ছ্যাকা। এখনো তার পিঠে  সেই ঝলসানো দাগ লেগে আছে। বাপরে বাপ সে কি ভয়ংকর যন্ত্রণা।  কাব্বু মাকে দেখতে পাচ্ছে,এক  টুকরো পাউরুটি মুখে নিয়ে দোকান থেকে মা পালাচ্ছে। মনের মধ্যে কি আনন্দ অনেকদিন পর পাউরুটি খাবে ভাবাই যায় না! মনের ভিতর কি আনন্দ  মা বোনকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে।  দোকানির  চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে আঁচে বসানো কড়াই এর  গরম জল মগে করে নিয়ে বোনের দিকে ছুঁড়ে মারে। বোন কুঁই কুঁই করে কেঁদে ওঠে। একদিকে মুখে খাবার অন্যদিকে রুগ্ন বোনের  যন্ত্রণার ছটফটানি,মা কোনরকমে বোনকে নিয়ে ছুটে রোড পার হতে যায়, ছুটে আসা লড়ির  ধাক্কায় সব শেষ। ছিটকে ছিটিয়ে পড়ে মা বোনের দেহ । সারা রাস্তায় চাপচাপ রক্তের দাগ। গাড়ি ছুটে চলে, কারোর ভ্রক্ষেপ নেই।পাষাণ হয়ে যায় কাব্বুর মন। মেজকর্তার ডাকে সম্বিত ফেরে। মেজো কত্তা বলে, -ভোলার সাথে পার্কে যা, নজর রাখবি, বেগড় বাই হলে তুই তো জানিস.... 
-মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় কাব্বু। 

-----------------------
পার্কে বসে আছে কাব্বু। ভোলা মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলছে। এই একমাত্র ছেলে যাকে কাব্বু  ভরসা করে, বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। ওর জন্যই এই খোলা বাতাসে বুক ভরে সে শ্বাস নিতে পারে।কিছুক্ষণের জন্য বন্দী দশা থেকে মুক্ত বাঁচার আনন্দে মন নেচে ওঠে।  এই পার্কেই,  ডাব্বুর সাথে তার প্রথম পরিচয়। তারপর গভীর বন্ধুত্ব। 

 ডাব্বুর  কাছে কাব্বু জানতে পারে  জীবনের অন্য ধারাপাত স্বপ্নময় আবেগ বাঁচার লড়াই -এর বীজ মন্ত্র।  চোখে জল এসেছিলো বারবার ডাব্বুর জীবন কথা শুনে । সেও তো ভুক্তভোগী।  কাব্বু  জেনেছে ডাব্বুর  বাবা খুব বদরাগী, নেশাখোর, গাঁয়ের ভাটিখানায় আশেপাশেই  লুচ্চার মত ঘুরঘুর করতো ওর বাবা। মাতাল  লোকদের  ফেলে দেওয়া চাট, মদের শেষ বিন্দু  চেটেপুটে স্বাদ নিতো। 
ঘরে যে  ছেলে বউ আছে ওদিকে কোন নজর ছিল না। আবার ঘরে ফিরে সেকি হম্বিতম্বি, বকাঝকা,  চিৎকার-চেঁচামেচি। মাঝে মাঝে ডাব্বুর মাকে মারধর। মনটা বিষিয়ে যেত ডাব্বুর।  মায়ের করুণ মুখটা দেখলেই কান্না পেত।  ঠিক করে নিয়েছিল এর একটা বিহিত করবে কিন্তু করতে পারিনি। হঠাৎ করেই একদিন বাবা উধাও হয়ে যায়।  তন্ন তন্ন করে এ গাঁ  থেকে ওগাঁ   খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু বাবা মেলেনি। এই বোধ হয় একজন সাদ্ধী নারীর  মনের ব্যাকুলতা হাজার অন্যায় সহ্য করেও একমুঠো বিশ্বাস আঁকড়ে বেঁচে থাকা। 

 প্রতি সপ্তাহের রবিবার দুই বন্ধুর  দেখা হয়।  কত নতুন নতুন কথা ডাব্বুর  কাছ থেকে কাব্বু জানতে পেড়েছে।  ডাব্বুর প্রতি গভীর আস্থা ধীরে ধীরে জমে ওঠে সেও ডাব্বু হতে চায়। 

 ডাব্বুর কাছে জানতে পারে গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে সে একটা দল তৈরি করেছে।  সাম্যবাদী কুকুরের দল।  সমাজের বঞ্চনা,  অবহেলার প্রতিবাদে,  এক মঞ্চ তৈরি করেছে। ওদের জীবন নিয়ে কেউ ভাবে না শুধু প্রয়োজন মেটায়।  কিছু কিছু জাত ভাইদের  রহস্য উদ্ঘাটনের কাজে ট্রেনিং দিয়ে  পুলিশ বিভাগে  কাজে লাগায়। তাও বিনা পরিশ্রমে। 
 কাজ ওদের,নাম বিভাগের। কাজ ওদের রোজগার মালিকের।  কেউ কেউ আবার ঘর, রেস্তোরাঁয়, হোটেলে পাহাড়াদার, কিছু পশুপ্রেমী আছে তাদেরও সংখ্যা কম।  এইতো কদিন আগে হাসপাতাল চত্বরে দুটো নার্স লাঠি মেরে মেরে শেষ করে দেয় ওদের এক জাতভাইকে। 
 বিতর্কের  ঝড় উঠে,  শুনেছে মামলাও শুরু হয়েছে নাকি। 

------------------------------
 বেশ কিছুদিন যাবত ডাব্বুর দেখা নেই। কাব্বুর মন আর আগের মতো ভালো নেই।  উদাস হয়ে  ওঠে।  মন স্বাধীনতাখুঁজে।ওই নিল নিল চোখ দুটোকাকে খুঁজে?  কাব্বু বসে আসে বেঞ্চে,ভোলা খেলছে। পাশের ঝোপ হঠাৎ,  নড়ে উঠলো। বিস্ফোরিত চোখ নিয়ে কাব্বু দেখে শুকনো মুখ ছল ছল চোখ,  ল্যাংচাতে  ল্যাংচাতে ডাব্বু এগিয়ে আসছে তার দিকে। ক্ষীণ স্বরে বলে,  একটু খাবার, একটু জল দিবি.... 
- কি হয়েছে তোমার
- আগে একটু দেনা কিছু খেতে, কোনরকমে জেলখানা  থেকে পালিয়ে এসেছি, তারপর তোকে বলছি সব একটু জিড়িয়ে নি।  
- কি হয়েছে বলো? 
 ডুকরে কেঁদে উঠে ডাব্বু 
 এই প্রথম কাব্বু ডাব্বুর চোখে  জল দেখতে পেল। প্রতিবাদী বিশ্বাসী মনে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ দেখতে পেল।  এক ছুটে কাব্বু মালিকের ছেলের ব্যাগ থেকে  খাবার, জলের বোতল,  নিয়ে দৌড়ে আসে ডাব্বুকে কে দেয়।  ডাব্বু গোগ্রাসে খাচ্ছে, কতদিন যেন খেতে পাইনি।  খুব মায়া হচ্ছে কাব্বুর। শুধু চেয়ে আছে বন্ধুর দিকে,  মনে ভাবছে খাবার চুরি করে আনা কোনো পাপ না।কোন ঘৃণা নেই, কোন চৌর্যবৃত্তি নেই, বাধ্যকতা নেই,একটু অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা মাত্র, এক নতুন বিপ্লব। 
কিছুক্ষণ পর ঢেকুর তুলে ডাব্বু বলে প্রাণ বাঁচালি তুই আজ আমার। এ কথা কোনদিন ভুলবো না আমি। ভেবেছিলাম আর হয়তো তোর সাথে দেখা হবে না আমার। 
- ও কথা বলে না বলতে নেই।  
- সত্যি কথাই তো বলছি রে ভাই। 
- কি হয়েছিল তোমার বলো না শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। 
- বলবো বলতে এসেছি তোর কাছে অনেক কাজ বাকি আছে রে। 
- ঠিক আছে তুমি একটু বিশ্রাম করো তারপর না হয় শুরু করবে। 
- না সময় খুব কম, চারিদিকে ফতোয়া জারি হয়েছে আমাকে দেখলেই এনকাউন্টার,বা বন্দি সব শেষ। 
- কি আবোল তাবোল বকছো কি সাংঘাতিক কথা বলছ? 
- তোকে বলেছিলাম না বাবাকে  আর খুঁজে পাওয়া যাইনি। আমি তো আমাদের লড়াই কায়েম করার জন্য নানা জায়গায়  ঘুরে ঘুরে এককাট্টা করছিলাম আমাদের জাতিদের। 
- হ্যাঁ সেতো জানি
- আস্তে আস্তে সবাই আমার কথা শুনছিল বুঝাতে চেয়েছিলাম সবাইকে আমরা তো বেশিরভাগই উদ্বাস্তু না আছে ঘর, না ঠিকানা,  না পেট ভরার মত কোন রসদ, সব সময় দয়া ভিক্ষা বা চুরি করা,  চুরি করে খাবার জোগাড় করা।  জীবন থেকে মুক্তি পেতে কি কি করতে হবে  তাই বলেছিলাম, সবাইকে বোঝাতে চেয়েছি অন্যায় কাজ করা থেকে বিরত হয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। 
- আমারও বন্দী দশা  ভালো লাগে না ভাই
= এভাবেই চলছিল বিপ্লবের পাঠ।  হঠাৎ একদিন শহরে এসে পড়ি বাবার সাথে দেখা হয়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে বাবা আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে পালাচ্ছিল
- কেন
= পরিচয় অস্বীকার করবে বলে। রাগ হল খুব যার জন্য আমার মায়ের এত কষ্ট,  আমার,এত কষ্ট, চোরনী নামে মায়ের অপবাদ, ইচ্ছে হচ্ছিল  ঝাঁপিয়ে বাবার  ঘাড় মটকে  দি।  পারিনি বাবা তো। 
- আমরা তো এখনো সম্পর্কে বিশ্বাসী মানবতার পূজারী
- হাঁ রে  এ তো আমি তোকে শিখিয়েছি, শোন অন্য জাতিভাইদের  মুখে জানতে পারি আমার নাকি আরো কয়েকটা মা, ভাই আছে, বাবা এলাকার দলের সর্দার। 
- কি ভয়ংকর
- হ্যাঁ অন্য মা ভাই বোনদের উপর না বাবার উপর একরাশ ঘৃণা হয়েছিলো।  জিজ্ঞেস করেছিলাম  কেন আমাদের বিসর্জন দিলে? 
- কি বলল তোমার বাবা
- এটাই ধর্ম। ধোঁকা দেওয়ায় কাজ পুরাতন বিসর্জন দিয়ে নতুনত্ব কে আবাহন করতে হয়।  আমি অবাক হয়ে যাই।এইজন্য,এখনকার  নেতার মত চাটুকদারী কথা। মুহূর্তে  ওখান থেকে চলে আসি।  

- তবে যে  বলছিলে  জেলখানা
- সেটাই তোকে বলছি রাস্তায় ঘুরে ঘুরেই আমার জাতির লোকদের অনেক কে আমার স্বপ্নের কথা বলি,  ফ্যাক ফ্যাক করে  হেঁসে সবায়
পালিয়ে যায়। কেউবা বলে ন্যাকামো করো না সুযোগ পেলে খাবার ছিনিয়ে নাও।  সে সময় বুঝলাম...
- কি বুঝলে
- অধিকার, কাইম, সমাজতন্ত্র, প্রয়োগের ক্ষেত্র আলাদা আলাদা। 
- সমাজতন্ত্র কি গো
- ও, তোকে সহজ করে বলি, যে সমাজ ব্যবস্থায় সবাই সমান অধিকার ভোগ করে সেটাই সমাজতন্ত্র
- চলনা, আমরা স্বাধীনতা খুঁজি, সমাজতন্ত্রী হয়ে উঠি। 
-  মনে তুমুল ঝড় ওঠে,  নিজের মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় হাজার প্রশ্ন, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি বারবার। শহুরে একটা পার্কে বসে আকাশের দিকে চেয়ে জীবনের কথা ভাবছিলাম হঠাৎ কানে এলো কি ভাইয়া করছো কি? তাকিয়ে দেখি
- কি দেখলে? 
- তোর  মত নাদুসনুদুস একটা কুকুর ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসছে।  তোর কথা খুব মনে পড়ে গেল কেঁদে উঠলো মনটা আমার। 
- তাই বুঝি!
- হ্যাঁ রে তোকে খুব মিস করছিলাম। কুকুর ভাই আমাকে বলল, আগে তো তোমায় এদিকে কোনদিন দেখিনি নতুন বুঝি? থাকো কোথায়?"। 
 আমি বললাম গাঁ  থেকে এসেছি।  ও বল্ল, বাউণ্ডুলে  বুঝি? কি মন চাই  না আস্তানা?  আমিও মাথা নাড়ি। ও বললো, "তোমাকে একটা পথ বলতে পারি তবে কি জানো ভাইয়া উপযাচক  হয়ে  কাউকে উপকার করলে পিছনে আঝোরা বাঁশ নিতে হয়। তোমাকে দেখে বেশ সহজ সরল মনে হচ্ছে তাই মায়া হলো তাই আমি.
একটা তোমার ব্যবস্থা করে দিতে পারি নিরম্বু উপবাস থেকে তো কমসেকম বাঁচবে। যদি তোমার ভালো লাগে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। মন চাইলে 
 যখন খুশি চলে যেতে পারো তোমার ইচ্ছে"। ওর কথা শুনে আমার খুব ভালো লেগে গেল চলে গেলাম ওর সাথে ওর মনিবের বাড়ি। 
- তাহলে জেলখানা বলছ কেন? 
= আরে বলছি বলছি।  কি আনন্দ ক'দিন। বাসার নাম দিয়েছে "আনন্দ নিকেতন"। কতো ধরনের কুকুর দেশী-বিদেশী কতো প্রজাতির সবার জন্য আলাদা আলাদা সুন্দর থাকার ব্যবস্থা ঠিক যেন ফাইভ স্টার হোটেল অত্যাধুনিক ব্যবস্থা. রুটিনমাফিক অনুশীলন. সাপ্তাহিক বডি চেকআপ,আরো কত কি। ঠিক যেন  আমার স্বপ্নের রাজ্য। 
- আমাকেও নিয়ে চলো না তোমার সঙ্গে...
= চুপ এসব লোক দেখানো টাকা রোজগারের কারখানা।  একটা রূপান্তর জীবন। নতুন নতুন কুকুর ক্রস করে  নতুন নতুন প্রজাতি চড়া দামে বিক্রি। কাজ শেষে আবার আমাদেও বিক্রি করে দেয়। আবার বিক্রি. এইভাবে হাত ফেরত হতে হতে এক বদ্ধ জুয়াড়ি,  মাতালের কাছে এসে পৌঁছায়।  

- সেকি গো? 
- চাবুকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত আমার সারা দেহে কালশিটে দাগ  পড়ে গেছে । প্রথম বিক্রির সময় আমি কুকুর বন্ধুকে বলেছিলাম কেন আমাকে ধোঁকা  দিলে? ও হেসে বলেছিল, "বোকা ধোঁকা দেওয়াই আমার পেশা।  আমিও তো ধোঁকা খেয়ে এখানে এসেছি"।  কথাটা বলেই  হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে, আমাকে জাপ্টে ধরে ছিল বলে ছিল, "ক্ষমা করে দিও"। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি। 
- মায়া হচ্ছিল খুব তাই না? 
 হবেই তো। এটাই তো জীবনের নতুন পাঠ বর্ণমালা।  একদিন সুযোগ এলো মনির আমাকে খোলা রেখে কোন এক জরুরি মিটিংয়ের চলে গেল। এসে গেল সুযোগ, মুক্তির আনন্দে মন মেতে উঠলো,  দিলাম চম্পাট, দৌড়...দৌড়...  দৌড়.. কত পথ  পেড়িয়ে অজানা অলি গলি পেড়িয়ে, বনবাদর পেড়িয়ে,  রাস্তাঘাট পেড়িয়ে, অনেক কষ্টে এইখানে। দুদিন থেকে এখানে বসে আছি। 
বৃষ্টির জলে ভিজে জবুথবু হয়েছি তবু বিশ্বাস ছিল তুই আসবি। তুই বেঁচে আছিস। 
- তুমি না ওই মন্দির দিকে আজ থেকে থেকো। আমি  তোমায় মাঝে মাঝে দেখতে আসবো। 
- না রে  থাকবো না। 
 তুই কি যাবি আমার সাথে?  আমি নতুন জীবন দেখতে চাই, সত্যি যাবি আমার সাথে? 
- হ্যাঁ গো আমি তোমার সাথে যেতে চাই আমাকে মুক্ত করো মুক্ত করো এই পরাধীন জীবন। আমি স্বাধীনতা চাই...
- চল আমরা যাই ফিরে সেই তপবন আশ্রম। ওখানেই শুরু করি নতুন জীবন, ঋদ্ধ  হই  ঋষিদের মাঝে থেকে।   শুরু করি শুদ্ধতার পাঠ, শুরু করি মঙ্গলাচরণ, শক্ত হয়ে ওঠে তৈরি করি নিজেদের মন মানসিকতার  বিকাশ।  সজীব করে তুলি মানবতা।  জীবনের শিক্ষা নিতে নিতে আশাবাদী হয়ে উঠি খুঁজে নি  সত্য পথের ঠিকানা। 

------------------------------
 অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক।  দুটি হৃদয় বড় কাছাকাছি আজ। একে অপরকে জাপ্টে ধরেছে,  টপটপ করে অশ্রু ঝরে পড়ছে.....
চিবুক বেঁয়ে।  চোখে-মুখে বিস্ময়। হাওয়ার স্রোত বইতে শুরু করেছে,  মেঘের গর্জন শুরু হয়েছে,  একটু পরেই অঝোড়ে  বৃষ্টি নামবে উঠে দাঁড়িয়েছে ডাব্বু কাব্বু, ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে নতুন পথের  ঠিকানায়......

No comments: