Wednesday, February 27, 2019

প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

শেষরাতে হানা দেয় বোমারু বিমান
প্রতিশোধস্পৃহা আছে মনে
ভাইয়ের রক্ত সফল করতেই হবে
প্রতিশোধের আগুনে


মায়ের কান্না বা প্রিয়ার যন্ত্রনা
অবুঝ শিশুকেও বোঝানো যায়না
কেন তার আপনার জন
আর কখনোই ফিরে আসবেনা


ক্রোধের আগুন শুধু ধিকধিক জ্বলে
একসাথে চৌদ্দটি সাঁঝবাতির আগুন
নিমেষে ধ্বংস করে গুপ্ত ঘাটি
চূড়ান্ত সফল হয় গুপ্ত অভিযান


দেশ হাসে দশ হাসে উপযুক্ত জবাব
বীর সেনাদের নির্ভীক দক্ষতা
দেশজুড়ে চলেছিল দিওয়ালি উৎসব
পেয়েছে অবশেষে প্রতিশোধের বার্তা ।

Monday, February 25, 2019

শুধু তুমি

শুধু তুমি

নিষ্পাপ শিশুর মুখে
যখন চেয়ে দেখি ,
কোন এক পবিত্রতা
আমায় আকুল করে ।

তোমার মুখের দিকে 
যখন চেয়ে দেখি ,
শরতের আকাশের কথা 
মনে পড়ে ।

শরতের শিশিরভেজা ঘাসে
পা ডুবিয়ে যখন
দূরের ঐ নদীটার দিকে তাকাই ,
কোন এক দূরদেশের স্মৃতি
মনে ব্যথা জাগায় ।

কলকল ছলছল টলমল জল
আকাশের রঙ চুরি করে
হাসছে খলখল ,
খুব ইচ্ছে করে ---

একবার স্পর্শ করি তোমায় ।
সদ্য ফোটা গোলাপ কুঁড়ির
মিষ্টি আঘ্রাণে
তোমার গায়ের গন্ধ
বয়ে আনে শান্তির নিঃস্তব্ধতা ।

Sunday, February 24, 2019

সংশয়

সংশয়

ছুটে বেড়াচ্ছি নাতো
কোনো মরীচিকার পিছনে
আকন্ঠ মরুতৃষ্ণা বুকে নিয়ে
তৃষ্ণার্ত প্রাণ আমার---
ভালবাসার বৃষ্টি চাই
একটুকু ছায়া
একটু সস্নেহ স্পর্শ
মরুদ্যান হবে কি আমার জীবনে
না কি -----
মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়াব
আজন্মকাল ধরে
তৃষ্ণার্ত পথিক আমি ...

Friday, February 22, 2019

এ কেমন বসন্ত

বসন্ত নাকি এসে গেছে কচি পাতায় ফুলে !
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে রূপসাগরের কূলে !
মউল ফুলের নেশায় মেতেছে ভ্রমর-ভ্রমরী !
বাতাসে নাকি বইছে প্রেম মানবরূপ ধরে !

আমার বসন্তে আসে না এসব কুঞ্জফুলের শোভা
আমার বসন্তে অরূপরতন পায়না মনোলোভা
আমার বসন্ত গুমরে কাঁদে বরফ- কঠিন রাত
আমার বসন্ত পায়না কোথাও প্রেম জাগানিয়া রাত
আমার বসন্তে পলাশ ফোটেনা , ফোটেনা অশোক-শিমূল
আমার বসন্তে শুধুই বসন্ত গুটি বাঁধে শতমূল
আমার বসন্তে বাতাস রুক্ষ , আকাশে দাবদাহ
আমার বসন্তে সংসার নয় শান্তিসুখের গৃহ
আমার বসন্তে কোকিল ডাকেনা , কোথায় পালিয়ে যায়
আমার বসন্ত পথশিশুদের ক্ষুধার্ত কান্নায়
আমার বসন্ত অনাহারে আর নীরব অসহায়তায়
আমার বসন্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে গোলাগুলিতে কেটে যায়
আমার বসন্ত একমুঠো চালে , একটা পোড়া রুটি
পেটের আগুন লাফিয়ে চলে , বর্ষা গুটি গুটি
আমার বসন্তে রাত পেড়োলেই একরাশ চিন্তা
আমার বসন্তে নুন আনতে ফুরোয় যে পান্তা

আমার বসন্ত টাট্টু হোকনা , হোক দুর্বার গতি
আমিও হব বড়ো বাড়িটার রঙীন প্রজাপতি ।

Monday, February 18, 2019

বসন্তে তাজমহল

জানালায় হেলানো মাথা
শুনছি কোকিলের ব্যাকুল স্বর
রসের উৎস্রোতে আকাঙ্ক্ষার তীব্র ফোটাটি
কখন গড়িয়ে পড়ে , কাঁদে মন
শুষ্কতার উচাটনে রুক্ষতর হৃদয়
নবপল্লব উন্মুখ , দৃঢ় প্রত্যয়
কূজনে শুনছি বসে কবেকার ডাক
বেদনার ইতিবৃত্তে তাজ চিরন্তন

Thursday, February 14, 2019

এখানে এখন

এখানে বৃষ্টি পড়ে সকাল থেকে ভোর
এখানে চোখের কোনেও জল চিকচিক করে
এখানে বাতাস তবু স্তব্ধ হয়ে রয়
অজানা সেই শ্রাবণ গগন ঘিরে ।

এখানে শূণ্য হাতে পড়ে থাকে বেলা
সবুজ ঘাস মুহূর্তে বিবর্ণ হয়
এখানে বৃষ্টি পড়ে তবু শ্রাবণ মাস
জলের ধারায় অ্যাসিড ছড়িয়ে যায় ।

এখানে শরীরগুলি শুধুই ছোপময়
সরু সরু লিকলিকে হাত পা
এখানে ক্লান্ত পায়ে সূর্য নামে পাটে
শুষ্ক কঠিন জীর্ণ আদুল গা ।

এখানে একমুঠো ভাত একটু রুটি
স্বপ্ন অনেক টাকা
এখানে কাপড় কোথায় পাবে
লজ্জাটুকু কোনোরকমে ঢাকা ।

Tuesday, February 12, 2019

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

মিথ্যে ভূতের কারসাজি

সেদিন ছিল আমার ঠাকুরমার আদ্যশ্রাদ্ধ । দু'দিন ধরেই অনবরত বৃষ্টি হয়ে চলেছে ।

সেদিনটা রোদ না উঠলেও আকাশ মেঘলা করে ছিল ।আদ্যশ্রাদ্ধ সমাপন শেষে বাবা পুকুরপারের নিয়মকানুন শেষ করে স্নান সেরে যেইমাত্র ঘরে ঢুকেছেন , অমনি শুরু হল আকাশ ভেঙে বৃষ্টি । তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া । একে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ , তার ওপর বাড়িতে সদ্য একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । স্বভাবতই পরিবেশটা একটু ছমছমে হয়ে আছে । আত্মীয়-স্বজন যারা এসেছিল , তাদের মধ্যে দু'চারজন থেকে বাকি সকলেই বাড়ি ফিরে গেছেন । তাই বাড়িটাও মোটামুটি ফাঁকা । কয়েকদিনের ধকলে বাবা-মায়ের শরীরটা এমনিতেই অবসন্ন । আর আজ আমরাও ক্লান্ত । @ তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই শুয়ে পড়তে চাইল । আমার এক পিসি ছিল অন্তঃসত্বা । তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কাছকাছি হওয়ায় সবাই একটু চিন্তিতও ছিল । সেরাতে পিসিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে আমরা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনেরা শুয়েছিলাম একটাই ঘরে । সত্যি কথা বলতে কি এই পরিবেশে একা ঘরে থাকার সাহস কারো ছিল না ।


আলো নিভানের পর কিছুক্ষণ আমরা টুকটাক গল্পগাছা করে যে যার মত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । ঘুম ভাঙল আমার হাতের কব্জিতে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে । আমার পিসতুতো দিদি খুব জোরে আমার হাতটা চেপে ধরে আছে । আমি ওর দিকে তাকালাম । দেখি ও চোখগুলোও চেপে বন্ধ করে আছে । দিদিকে ঠেলা দিতেই সে সভয়ে ' রাম রাম ' জপতে শুরু করেছে । @ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।উঠে লাইট জ্বালালাম । দিদি তাকিয়ে একবার চারদিক দেখল । বিশেষ করে জানালার দিকটা । দেখলাম জানালা বন্ধ আছে । ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ' কিসের যেন শব্দ হচ্ছিল । ' ' কই আমি তো কিছু শুনিনি । তুই ভুল শুনেছিস । ' বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে লাইট অফ করে আমি শুয়ে পড়লাম ।

ঘন্টাখানেক বোধহয় হয়নি আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । বাবার গলার স্বর শুনতে পেলাম । সঙ্গে মায়েরও । তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম । পিসির প্রসববেদনা উঠেছে । @ এত রাতে । ভাগ্যিস হাসপাতালটা কাছেই আছে । বাবা আমাদের বাড়িতে থাকা দু'জন কর্মচারিকে ডেকে পিসি আর মাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে । কখন ফিরবে ঠিক নেই । তাই আমি দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম । ঘড়িতে তখন 2-30 ।

বিছানায় শুয়ে ঘুম আর আসেনা । একে পিসির জন্য চিন্তা হচ্ছে , তার ওপর বাড়িতে বড়ো মানুষ বলতে আমার পিসতুতো দিদি , যে কিনা কিছুক্ষণ আগে রামনাম জপতে শুরু করেছিল । এপাশ - ওপাশ করছি । ঘুম আসছে না । দিদিরও দেখি একই অবস্থা । হঠাৎ জানালার দিক থেকে খুট করে একটা শব্দ হল । কিছু বুঝতে পারলাম না । দিদির দিকে তাকালাম । দিদিও দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । কিছু বোঝার আগেই শব্দটা বাড়তে লাগল । মনে হল কেউ জানালার ওপাশ থেকে কিছু দিয়ে জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে । শব্দটা ক্রমে বেড়ে চলেছে । @ উঠে যে লাইটটা জ্বালাব সে সাহস হচ্ছে না । দুই বোনে দুজন দুজনকে জাপটে ধরে যেন সাহস সঞ্চয় করছি । বারবার মনে হচ্ছে মৃত ঠাকুমার কথা । দিদির মত আমিও ' রাম রাম ' করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ।

ঘুম ভাঙল প্রবল ধাক্কায় । তাকিয়ে দেখি দিদি হাসি হাসি মুখ করে হাতদুটো পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । জিজ্ঞাসা করলাম , ' কি হয়েছে ' । হাসতে হাসতে বলল , ' পিসির ছেলে হয়েছে । ' তারপর মিটিমিটি হেসে বলল , ' আরো একটা খবর আছে । ' আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই পিছনের হাতদুটো সামনে এনে বলল , ' এই যে নারকেল । ' অবাক হয়ে দেখলাম নাড়কেলের মালাগুলো । কেউ এমনভাবে এগুলো খেয়েছে যে সেগুলো আর আমাদের খাবার পরিস্থিতি নেই । মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা । দিদি বলল , ' মামী কাল রাতে জানালার কাছে আধঢাকা করে এগুলো রেখেছিল । আর রাতভোর ইঁদুরবাবাজি দলবেঁধে মোচ্ছব করেছে । আর আমরা সারারাত রামনাম জপ করেছি । ' @  

কিছুটা ওর বলার ধরনে আর কিছুটা আমাদের নির্বুদ্ধিতায় দুজনেই হেসে ফেললাম ।

Friday, February 8, 2019

সায়াহ্নে

সায়াহ্নে

মুঠো মুঠো ধান ছড়িয়ে দু'হাতে
এখন , সন্ধ্যাকালে
বসে ভাবি ----
জীবনের শেষ সম্বল
দিয়েছি বিলিয়ে , এখন
আমি কি নিয়ে থাকি ।

যা দিয়েছি তা
ফেরৎ না পাই
এখন , অকাল বসন্ত সময়
প্রতিদান কিছু চাইনি যে তাই
কাটে না অবসর ।

শুধু যা দিয়েছি
আছে জানি জমে
কোথাও , কোনো রত্নভান্ডারে ---
সুদাসলে একদিন
পাবই ফেরৎ
এই আশা থাক মনে ।

Wednesday, February 6, 2019

উদ্বোধন

উদ্বোধন

বৃষ্টির প্রথম ফোটা

যেদিন প্রথম পড়েছিল কপালে আমার
ভেবেছিলাম জন্মান্তর হল ---


নবজন্ম লাভ !

এ কেমন জন্ম যদি মরণই প্রিয়

গোলাপের কাঁটায় বেঁধা শালিকের প্রাণ
নেই চেঁচামেচি হাকডাক , শান্ত নির্জন



অখন্ড শান্তি আমার হৃদয় খুঁড়ে খায়


এ বেদনা তারাখসার ম্লান আলোয়
সেই বোঝে , যাকে মূল ছিঁড়তে হয়


চশমার নীচে দুটো বাষ্পময় চোখ

শ্বাসরূদ্ধ হয়ে আসে নিকোটিনের ধোয়ায়
আরো পোড়ে ক্ষয় হয় খাঁচার ফুসফুস
তবু সচল অনর্গল সংবহন হয় ।

Sunday, February 3, 2019

নীলিমা

নীলিমা

মনে পড়ে ম্লান মুখ তার
দু'চোখে বৃষ্টি অঝোর ধারায়
কান পেতে শুনি তার ভাষা
বুক নিঙারিয়া সুর

অজানা ভয়ে গুমরে ওঠে মন
কোন দেশে আছে প্রিয়জন
মনচোরা সেই অপার রহস্য ঘিরে

আবার জেগে উঠি সৃষ্টির কিনারায়
সুর হাসে , সুর ভাসে , সুর কেঁদে যায়

আকাশের নীল এসে কখন
মিশে যায় আমার কবিতায় ।

Saturday, February 2, 2019

দিশাহারা

দিশাহারা

দূরে বহুদূরে ---
ধোঁয়াশায় মিশে আছে
একফালি আকাশ
আমার মনের মতো


সৃষ্টির প্রয়াস
ঝাপসা আজ


টুকরো টুকরো মেঘ
উড়ে চলে নিরুদ্দেশে

অজানা পথ

খরনদী ভেসে যায়
সময় অকুলান


আমার আকাশজুড়ে
সৃষ্টির হাহাকার শোনা যায় ।