কেউ মনে রাখেনি
উত্তম গোস্বামী
৩১/১০/২০২৪
সেই অতীতের দিনগুলোর কথা
কেউ মনে রাখেনি।
কেউ মনে রাখেনি, বাবা মায়ের
সেই নিদারুণ যন্ত্রণা,কষ্টের কথা।
বড় খোকা যখন ভূমিষ্ঠ হলো
ওর বাবা আনন্দে আত্মহারা হয়ে
চিৎকার করে বলতে থাকে,
"ওগো পৃথিবীর মানুষ তোমরা শুনতে পাচ্ছো,
আমাদের পুত্র সন্তান হয়েছে।
ও একদিন আমাদের জীবনের
সকল দুঃখ দৈনতা ঘুচিয়ে দেবে।"
বাবা চটকলে কাজ করেন।
সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে
যখন বাড়ি ফিরে আসেন
ক্লান্তিতে চোখ দুটো তার বুজে আসে।
ছেলের পুষ্টির কথা চিন্তা করে
দুধ,হরলিক্স বিভিন্ন ধরনের বেবি ফুড কেনার জন্য আরও বেশিক্ষণ ধরে ডিউটি করতে থাকেন বাবা।
স্ত্রী বলতে থাকেন,"অত পরিশ্রম করছে ছেলের জন্য,
তোমার শরীর টানছে না তো!"
"দেখে নিও সরল ছেলের জন্য এই শ্রম
কোনদিন বিফলে যাবে না।"
ছেলে একটু একটু করে বড় হতে লাগলো,
মায়ের হাত ধরে চলতে শিখলো।
তারপর যখন মেয়ে রমা এলো এই পৃথিবীতে,
বড় ছেলের বয়স তখন পাঁচ বছর।
ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে
ওদের খাবার-দাবার লেখাপড়ার
কোনো কার্পণ্য করেননি কোনোদিন।
একদিন ওরা বড় হলো।
মেয়ের বিয়ে হলো বড় বাড়িতে।
ছেলে একদিন চাকরি পেল বড় কোম্পানিতে।
বিয়ে করলো জমিদারের এক মেয়েকে।
তারপর কুড়ি বছর কেটে গিয়েছে।
জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে কতঝড়, ঝাপটা।
মা অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন।
বাবা এখন বৃদ্ধাশ্রমে দিনযাপন করছেন।
ছেলে বৌমা একদিন রাতের অন্ধকারে
বৃদ্ধ বাবাকে ঘর থেকে মেরে বের করে দিয়েছে।
বাবা এখন স্মৃতিগুলো আঁকড়ে বৃদ্ধাশ্রমের
একাকি জানালার ধারে বসে
খোলা আকাশের দিকে চেয়ে বলছে-
"দেখে যাও সরলা তোমার স্বামী আজ
বৃদ্ধাশ্রমে বসে নিদারুণ যন্ত্রণা আর
বুকফাটা কষ্ট নিয়ে হাহাকার করে কাঁদছে।
পুত্র কন্যা সবাই ভুলে গেছে বাবার সেই
স্নেহ,মায়া,মমতার কথা, বাবার যন্ত্রণা,কষ্টের কথা।
ছোটবেলাকার সেই কষ্টের স্মৃতিগুলো
আজ ওরা কেউ মনে রাখেনি।
জানো সরলা ওরা সবাই আজ পর হয়ে গেছে।
বাবা মাকে ভুলে গেছে ওরা।
কেউ ওরা মনে রাখেনি।
কেউ মনে রাখেনি।"
No comments:
Post a Comment