Tuesday, October 5, 2021

মানুষ থাকলে ভূত ও থাকে

মানুষ থাকলে ভূত ও থাকে 
অনিল চন্দ্র সিকদার
------------------------------ 


গ্রামে মানুষ থাকলে ভূতও থাকবে। মানুষ আছে ভূত নেই, ছেলে বেলায় আমরা ওটা কল্পনা করতে পারতামনা। আমাদের বাড়িটার সামনে পুকুর, দক্ষিণে খাল, খালটা গেছে সেনদের বাড়ির পাশ দিয়ে। মাঝখানের জায়গা টা অন্য কারোর। বড় একটা আম বাগান। পিছনে একটা জামরুল গাছ, আর আমাদের  আম বাগান। আমগাছ গুলি এত বড় যে ঐ গাছ বট গাছের মত। উঠাও  মুস্কিল। 
আমগাছের পাশে ঘন  বেতের জঙ্গল চারিদিকে ঘন অন্ধকার। কাছেও যাওয়া যায়না। গাছে বড় বড় অজস্র কাঁঠ পিঁপড়ে। গায়ে রসুন গোটা তেল মেখে না উঠলে, কারো সাধ্য নেই  গাছে উঠে। 
এহেন ঐ বিশাল গাছটায় এক ভুতের আবাস ছিল। 
অগম্য জায়গা হলেই আমাদের ধারনা হয়, ওখানে 
ভুত থাকে। রাতে আমরা কোনো ভাই বোনেরা  একলা  ঘর থেকে বের হতে সাহস পেতামনা। 

ন-বছরে আমার উপনয়ন হয়। উপবীত হয়ে ও আমাকে ভূতের  ভয় থেকে রক্ষা করতে পারেনি। 
ছোট কাকা বাড়ি না থাকলে আমার কিংবা বড় দারপালা পড়তো ঠাকুরের বৈকালি দেওয়ার। ভূতের ভয় থেকে গৃহদেবতা  ও তখন  মুক্ত  থাকতেন না। ঠাকুর ঘরের পাশে ছিল দুটো বড় তালগাছ। তাল হত না। কোন অশুভ প্রভাব না থাকলে গাছ অন্যান্য হয়না। তাই মনে  হচ্ছে আমাদের কাছাকাছি যিনি থাকেন  ওনি আমাদের ছোটো ঠাকুর দা। তাঁর পৈতা হওয়ার আগেই নাকি তিনি সামনের পুকুর টার জলে ডুবে মারা গিয়েছিলেন। তালগাছ দুটো তাঁরই লাগানো। ছোট বয়সেই ছোট ঠাকুর দার গাছ পালার বাতিক ছিল। 
তালগাছ  আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। 

যাই হোক ছোট ঠাকুর দা মারা যাওয়ার পর বড় ঠাকুর দা গয়া ধামে গিয়ে পিন্ড দান ও করেছেন। অথচ তারপরও নাকি বড় ঠাকুর দাঐ তালগাছে ছোট ঠাকুর দাকে কয়েকবার দেখেছেন। বিশাল
দৈত্যের মত চেহারা এক পা তালগাছে আর এক পা আমগাছে দিয়ে সটান দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর আমাদের  বাড়ির দিকে  তাকিয়ে  বাড়ি পাহারা দিতেন। ছোট ঠাকুর দা  ভূতটি বরং আমাদের কোন ক্ষতি করেননি, ভালই করেছেন। বরং  তারই দয়ায় নাকি আমাদের বাড়িতে অপমৃত্যু ও অকাল মৃত্যু ঘটেনি। শিশুদেরকে টৌকায় ধরে না। বাড়িতে শিশু  জন্মালে মরেনি। বাঁচে বড় হয়। সবারই ধারণা ছোটো ঠাকুর দা আছে বলেই বাড়ির সবাই ভাল আছে। ভূত যেমনটা ভাল আবার তেমনটা  খারাপ ও আছে।

No comments: