Monday, November 25, 2019

অনুগল্প --- ভাত

                        অনুগল্প --- ভাত
                                  
মেয়েটি হাপাতে হাপাতে এসে দাঁড়ালো দরজায় ।
ম্যাম , আসবো ?
     আড়িপুর গ্রামের কাননদেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে । পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে পনেরো মিনিট হল । পাঁচটি গ্রামের মধ্যে এই একটিই হাই স্কুল ।বর্তমান ডিজিটাল যুগেও যে এমন কোনো জায়গা থাকতে পারে সোহিনীর তেমন ধারণা ছিল না । এখানে চাকরি নিয়ে এসে মাত্র ছয় - সাত মাসে কত অভিজ্ঞতা যে হচ্ছে ! বাইরের আলো হাওয়াও যেন এই গ্রামের মানুষগুলোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । গরীবস্য গরীব এখানকার মানুষ । বিদ্যুৎ তো দূরের কথা পানীয় জলটুকু পাওয়া যে কি কঠিন এদের কাছে । পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গ্রাম পিছু একটি করে টিউবয়েল বসিয়ে দিয়েছে । তার মধ্যে দুটো ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে পড়ে আছে । বাকিগুলোতেও পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায় না এখানকার ভৌগোলিক  কারনে । বর্ষা ঠিকঠাক হলে জলাশয়গুলিতে যাওবা একটু জল থাকে বাকি গরমকালটা খুব কষ্টে কাটাতে হয় ।সরকারী প্রকল্পগুলো সবে মাত্র পেতে শুরু করেছে  এরা। রুক্ষ মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোর কঠোর পরিশ্রমে তারা দিনরাত ব্যায় করে । বিনিময়ে যে সামান্য ফসল পায় তাতে কোনোভাবে খাওয়াটুকু জোটে । বিদ্যালয়গুলি তাই ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলোর কাছে যতটা লেখাপড়ার জন্য আকর্ষনীয় তার চাইতে অনেক বেশী আকর্ষনীয় ভরপেট ভাতের জন্য এটুকু বুঝেছে সোহিনী । তাই  শুকনো মুখ আর রোগা রোগা হাত-পায়ের ছেলেমেয়েগুলোকে দেখলে বড় কষ্ট হয় তার । এক অব্যক্ত বেদনায় ছটফট করে সে । এত কষ্ট করেও মানুষগুলোর মধ্যে কোনো অভিযোগ নেই । যেন আজন্ম এইভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ এরা ।কোনো কিছু চাওয়ার নেই , কোনো কিছু পাওয়ারও নেই ।
পরীক্ষার খাতায় সই করা থেকে পলক চোখ তুলে   ছোট্টো মেয়েটাকে দরজায় দেখে সোহিনী বলল , কি রে এত দেরি কেন ? পরীক্ষা তো কখন শুরু হয়ে গেছে । আয় আয় । কোন ক্লাস ? যা ওখানে বসে পড় ।
 
  পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র  এগিয়ে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল সোহিনী , কোথায় বাড়ি তোর । এত দেরি করলি কেন । পরীক্ষার সময় টাইম মত স্কুলে আসতে হয় বুঝলি ।
শুকনো মুখে ছলছলে চোখদুটো তুলে কি যেন বলতে গেল মেয়েটি । ঠোঁটটা একটু কাঁপল শুধু , শব্দ বেরোলো না । সোহিনী মাথায় হাত দিতেই ফুঁফিয়ে উঠল মেয়েটি , তিন রাত আগে আমার বাবা মরে গেছে ।
তাও তুই পরীক্ষা দিতে এলি ? পিতৃহারা ছোটো মেয়েটির প্রতি সমানুভুতিতে তারও চোখে জল চলে এল ।
তিন দিন মা - দাদার সাথে আমিও কিছু খাই নি । তাই আজ ইস্কুলে এলাম । মেয়েটির চোখদুটো চকচক করে উঠল । আজ আমি পেট ভরে ভাত খাব ।

Saturday, November 23, 2019

কাঞ্চনজঙ্ঘা

কাঞ্চনজঙ্ঘা

আকাঙ্খায় মিশেছে চেতনা
কালের নিয়মে
শিশুচাঁদের বেড়ে ওঠা জীবন
এক- এক কলায় আসে পূর্ণতা
কখনো সমুদ্রগহ্বর ,
কখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা ,
পূর্ণিমা হাসে অনাবিল
সন্ধ্যা হোক গোলাপি চেরির ,
অথবা রক্তলাল রডোডেনড্রনের
ভালোবাসা তো স্রোত হয়ে বয়

এক শ্বাসে উড়তে চাওয়া অবুঝ হৃদয়
পাহাড়ের চোরাস্রোতে স্রোতোস্বতী হয়
তোমার দেখানো মুখ এ পাহাড়ে হাসে
আমার পাহাড়ে তা নিমেষে মিলায়

তবুও আসি ফিরে , আবার আসব
কখনো দুধ - সাদা , কখনো হলুদ আলো
কখনো রক্তিম হয়ে চোখে ভাসব
আবার আসব .........

Wednesday, November 20, 2019

নীরব প্রতিশ্রুতি

নীরব প্রতিশ্রুতি 

প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মে
শরতের পর আসে হেমন্ত
তোমার তো কোনো নিয়ম নেই
তাই 
প্রতিশ্রুতি মুছে ফেলতে
নিয়ম মানো অল্পই
দিনের অবসানে
দিগন্তের ওপারে সমস্ত আকাশ জুড়ে যখন
একটি একটি করে তারা ফুটেছিল
বড় স্নিগ্ধ , বড় করুণ সেই কথার সুর
শুনেছিলাম তোমার মুখে
কোলের কাছটি ঘেসে
অদ্ভুত কাষ্ঠ হেসে
শুনিয়েছিলে তোমার অতীত
তখনি
অনবদ্য কল্পনায় এক নীরব প্রতিশ্রুতি
বেজে উঠেছিল বাতাসে


আজো সন্ধ্যার অন্তরালে
প্রতিশ্রুতির শব্দগুলি
একটি একটি করে ফোটে সন্ধ্যার আকাশে
নীরব এ প্রতিশ্রুতি
তাই বুঝি
আলোর নিশানা খুঁজে পায় না ।