Friday, April 26, 2019

শঙ্খের জন্য

শঙ্খের জন্য

বিহ্বলময় শান্ত অতীত , পর্ণমোচী বৃক্ষ
স্মৃতির প্রকোষ্ঠে আমার ন্যাড়া ছাদ
উদ্দাম ছাদে সূর্য অস্ত গেছে
অন্ধকারে রাত জাগে দুর্বিনীত বাসনা

বাসনা ---- তবু সোনা সে যে
অলঙ্কার পড়েছ গলায়
ঝিনুক নিয়েছ হাতে
মুক্ত হাড়িয়ে গেছে

হারাক ---- হারাক যত গ্লানি শতাব্দীর
হারাক কালের সীমা , আসুক ফিরে
আবার অতীত

এবারে ঝিনুক নয় ---- শঙ্খ খুঁজে নিও
শাশ্বত জীবনের অগাধ বিশ্বাস

Wednesday, April 24, 2019

চিত্রার্পিতা

চিত্রার্পিতা

রাস্তায়
পথ চলতি মানুষের ঢল থেকে
নিয়ন আলোয়
স্পষ্ঠ দেখি তোমার মুখ
বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপিত
মোনালিসার ছায়া
তর্কের ঝড় ওঠে হৃদয়ে

লিও-নার্দো-দা ভিঞ্চি নই
তাই অজ্ঞাত অনেক
জ্ঞাতও কম নয়
এমনকি 
অন্ধগলির গোপনীয়তাটুকু

Tuesday, April 9, 2019

পঁচিশে বৈশাখ

পঁচিশে বৈশাখ

দিন আসে দিন যায়
সময় বদলায় , মন বদলায় না
কিংবা বদল ঘটে মননে
স্মৃতি থাকে বেদনায় বেদনায়

চৈত্রের ঝরাপাতা উড়ে গিয়ে
নেমে আসে প্রখর তাপ
কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রাঙা হয়
কবির জন্মমাস

হোক উদাস বাউল কিংবা রাখাল বালক
অথবা ছুটির খুশি গায়ে মাখা পড়ুয়ার দল
দলে দলে মিলন ঘটে কৃষ্ণচূড়াতলে
মহামিলনের সংগীত বাজে --- কৃষ্টি অন্তরে
আজ না থাক মেহের আলি
নাইবা বলুক কেউ --- ' সব ঝুট হ্যায় '
তবু আশার আশা তারাপদর পায়ে
মনে মনে বোষ্টমী খঞ্জনা বাজায়

তবু আমি রণে ক্লান্ত কালের যাত্রায়
সভ্যতার সংকট আরো ঘণীভূত হয়
আছড়ে মরে ক্লিষ্ট মন না পাবার বেদনায়
আবার এসো কবি , হৃদয়-বাগে
নব ফুল ফোটাই ।

পথহারা

পথহারা

পথ খুঁজে ফিরি আমি

ক্ষ্যাপার পরশপাথর খোঁজার মত

চকচকে তো অনেক কিছুই হয়
হিরে ফেলে কাঁচ তুলি যেমন
ভুল , কত ভুল দিয়ে সাজানো জীবন
শুধু কি নিকোটিনই পোড়ে
পুড়ে যায় , হারিয়ে যায় কঠিন শপথ


পথ খুঁজি আমি

আবার হারাই

দূষিত মানবতার ভিড়ে
পায়ে বাধা লোহার শিকল
আরো আঁকড়ে ধরে
পথ খুঁজি মোহাবেশে বাঁচার তাগিদে
রঙীন চশমা আছে দুচোখ জুড়ে

ভুল বুঝি , ধরব এবার নতুন পথ

সব পথ মিশে যায় শিশুর সারল্যে ।

Saturday, April 6, 2019

অনুগল্প --- মা

                             অনুগল্প --- মা  
                                       


  শর্মী আজ সাত বছরের হল । অন্যান্য বাচ্চাদের মত জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েস খাওয়ার সৌভাগ্য তার নেই । তার মায়ের মুখটা ছবি দেখা ছাড়া স্মৃতিতেও আসে না । কেননা জন্মের পর মাত্র কয়েকটা দিন সে তার মায়ের সান্নিধ্য পেয়েছে ।স্কুলের বন্ধুরা যখন তাদের মায়েদের কথা গল্প করে তার খুব মন খারাপ করে । তারও ইচ্ছে করে স্কুলে আসার সময় তার মা ব্যাগ গুছিয়ে , জামা পরিয়ে , চুল আঁচড়ে , চুমু খেয়ে , আদর করে দিক অন্যান্য বন্ধুদের মত । এই সময় তার খুব রাগ হয় ভগবানের ওপর । ভগবান তাকেই কেন এরকম একা করে মাকে তার কাছে ডেকে নিয়েছেন ।
            ******************************
     সকাল থেকেই খুব মন খারাপ শর্মীর । দিদা আজ কত আদর করে তাকে ঘুম থেকে তুলেছে । তার জন্য পায়েসও বানাবে বলেছে । কিন্তু মা যে মা-ই হয় । কতদিন হল বাবাও সেই যে গেছে আর আসেনি ।
     ব্রাশ হাতে নিয়েই বাগানে এসে দাঁড়ায় শর্মী । এখানে দোলনচাঁপা গাছটাতে সেবারে একটা দোলনা বেঁধে দিয়েছিল বাবা । এই জায়গাটা শর্মীর খুব প্রিয় । দিদা বলে এই দোলনচাঁপা গাছটা খুব পুরনো । তার মাও ছোটোবেলায় এই গাছটাতে দোল খেত । মায়ের খুব প্রিয় জায়গা ছিল এই গাছতলাটা । শর্মীর দুচোখ জলে ভরে এল । কেন , মা , আমি কি দুষ্টুমি করেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে ।
         হঠাৎ এক ঠান্ডা হাওয়ায় শর্মীর মনের ভেতরটা কেমন করে উঠল । খুব আপন একটা গন্ধ , যেন অনেক কালের চেনা , মাতৃগর্ভের মত একটা অনুভূতিতে ভরে গেল তার মনটা । যেন কেউ পরম মমতায় তার গায়ে মাথায় হাত বুলোচ্ছে , তাকে আদর করছে । তার মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে এল --- মা !

Wednesday, April 3, 2019

অনুগল্প --- আগাছা

                         অনুগল্প --- আগাছা 
                                        

    সকাল সকাল কাজটা সারতে পেরে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে প্রতাপের । নিত্যদিনের এই অশান্তি আর ভালো লাগে না । তাই স্ত্রী রীনার জন্য এটুকু করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে । এবার আর বাড়িতে কোনো অশান্তি নেই । শুধু সে আর রীনা আর অখন্ড শান্তি । 
        বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রেখে নির্দিষ্ট ফর্মালিটিগুলো পূরণ করতে যতটুকু সময় লাগে তাড়াতাড়ি সেরে আর মায়ের দিকে ফিরে তাকালো না প্রতাপ , পাছে মায়ের চোখের জল তাকে দুর্বল করে দেয় । তার ভবিষ্যৎ সুখ কল্পনাতেই সে সুখি ।
          
              **************************


         ওদিকে প্রতাপের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই অসীমার একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে । আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে মিউনিসিপ্যালিটির ডাষ্টবিনের পাশে কতগুলি কুকুরকে একটা পুটুলি ঘিরে চীৎকার করতে দেখেছিল সে । খুব ভোরে উঠে ঠাকুরের জন্য ফুল তোলা নিত্যদিনের অভ্যাস অসীমার । সেদিন ফুল খুঁজতে এপথেই যাচ্ছিল সে । রাস্তা নির্জণ । কুকুরগুলোর আচরনে এমনকিছু ছিল যে অসীমা এড়িয়ে যেতে পারল না । কাছে যেতেই দিখতে পেল ছোট্ট একটা মুখ দুটো কচি কচি হাত । বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল তার । রাস্তায় যে এখন কেউ নেই । তিন তিনবার অন্তঃসত্বা হয়েও সন্তান কোলে নিতে পারেনি অসীমা । ডাক্তার বলেছিল কি এক কঠিন সমস্যা আছে তার । অনেকদিন ওষুধ খেতে হবে । খেয়েওছিল । কিন্তু ঈশ্বর বিরূপ । সন্তানের মা হওয়া তার আর হয়ে ওঠেনি । 
        তবে আজ ঈশ্বরের কি অভিপ্রায় । তিনি কি চান এভাবে অসীমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে । মনে মনে এ স্বাদের লোভ সামলাতে পারল না অসীমা । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে কারো অনুপস্থিতিতে  ময়লা কাপড় ছাড়িয়ে তার আঁচল দিয়ে জড়িয়ে নেয় বাচ্চাটিকে । একছুটে বাড়ি এসে শিবুকে ঠেলে তুলে সমস্ত ঘটনা জানায় । তারপর সাত সকালে সেখানকার পাঠ চুকিয়ে নতুন ঠিকানায় । 
      তারপর কত উত্থানপতন শেষে নিজেরা আধপেটা খেয়েও প্রতাপকে নাড়ি ছেড়া ধনের মতই আগলে আগলে বড়ো করা । 
     আজ প্রতাপ বড়ো চাকরি করে । শিবু গত হয়েছে চার বছর হল । বিয়ে করতে না করতেই মা তার সংসারে আগাছা হয়ে উঠল । চোখের কোনটা ভিজে উঠল অসীমার । দুই হাত জোড় করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রর্থনা জানালো , ওদের ভালো রেখো ঠাকুর । মঙ্গল কোরো ।