Thursday, February 1, 2024

বিকেলের কান্না -- প্রদীপ কুমার বর

 বিকেলের কান্না
 প্রদীপ কুমার বর
 ০৬/০১/২০২৪


বিষণ্ণ বিকেল চেষ্টা করে খুঁজে পেতে
সকালের এক গুচ্ছ গোলাপের রং!
ইচ্ছে ছিল দিগন্তের নীল ক্যানভাসে,
ছোট্ট মৌটুসীর পাখনায় আঁকি
শান্তির এক পৃথিবী! প্রস্ফুটিত কুসুমের
মিষ্টি ইশারায় মধু-মক্ষিকার অবাধ বিচরণ;
দোয়েল,শ্যামা, কোকিলের মুক্তির মন্ত্র,
যন্ত্র সভ্যতার হাল হকিকত ছেড়ে
শ্যামলিমা প্রকৃতি-মায়ের সকালের ছবি!
সময় শোনে না বারণ,মারণ ব্যাধির 
কঠিন কলম বাধ্য করে আঁকতে হবে
 অন্য কোনো ছবি!

আঁকি, দেবদারু'র 
ডানা কাটার নির্বাক যন্ত্রণা, গন্ধহীন পলাশের অস্ফুট বেদনা,
সাগর কূলে আছড়ে পড়া তরঙ্গের
সকরুণ কান্না!
প্রাচীন জনজাতির অবলুপ্তির কাহিনী,
লুপ্তপ্রায় বন্য পাখপাখালির মৃত্যুরহস্য!

নিম্নচাপ,পার্শ্ব চাপ ক্রমশ মারে টান --
সন্ধ্যার শীতল দেশে! ফেঁসে যাওয়া
টায়ার পারেনা তার উর্দ্ধাংশের  
ভার‌ সহ্য করতে। সকালের সজীবতা 
দিয়েছে হারিয়ে হেলায়। সে যেন
এক বয়স! মানে না বাঁধন,
দূরন্ত ঘূর্ণিঝড়ের দাপুটে চেহারা
হুড়মুড় করে দেয় গুঁড়িয়ে গোপনীয়তার
সমস্ত গ্যালারি।খরচের বহর শহর থেকে দূরে
সরিয়ে দেয় শনিবারের বারবেলায়!
হায়! শিল্পী, তোমার সৃষ্টি আজ
 সুখের উল্লাস হারিয়ে গোধূলির
রক্ত মিশ্রিত অশ্রুজলে আঁকে
   নিরুত্তাপের নষ্টালজিক 
ধূসর পাণ্ডুলিপি।

অন্ধকারের আত্মাহুতি -- প্রদীপ কুমার বর

 অন্ধকারের  আত্মাহুতি
 প্রদীপ কুমার বর
 ২১/০১/২০২৪


বন্ধ্যা রাত্রির আবর্জনা ঠেলে জ্যোতির উদয়,
ইঙ্গিত দেয় অনন্ত প্রসারিত স্নিগ্ধ সামিয়ানায়
প্রতিভাত হবে উষ্ণতার জীবন্ত কিংবদন্তি।
ইতিউতি অন্ধত্বের প্রগাঢ় চুম্বন..
মিথ্যে আস্ফালনের ভোঁতা অস্ত্র মুখ লুকায়
চরম শীতলতার গহন অন্ধকারে!
অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বিষাক্ত কীট গোপনে দংশায়,
নেশায় পেশায় বীরত্বের দাবিদার
অহংবোধের সমাধিস্থলে ঢাকা পড়ে।

রাকার নিন্দায় রক্তবীজের বংশ,
ধ্বংসের প্রকট চক্রান্ত করেও‌ ব্যর্থ।
অনর্থক ব্যস্ততা ত্রস্ত হরিণীর পিছনে ধাবমান,
কুস্তির প্যাঁচে ধাঁধা লাগে রশির  বাইরে থাকা
উৎসুক জনতার, বহুল চর্বিত চতুরতা
চঞ্চলের অঞ্চল ছেড়ে বঞ্চনার বেসাতি লয়ে
ধুঁকে মরে শুকতারার বিপরীতে!
আজানুলম্বিত হস্ত যুগল উচ্ছৃঙ্খলতার 
ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম, কিন্তু শৃঙ্খলার শিকলে 
বন্দী হতে বুদ্ধির পাঠশালায় প্রয়োজন 
বোধোদয়ের শিক্ষা।

দীক্ষা গ্রহণকারীর হম্বিতম্বি রূপ --
হাসির উদ্রেক ঘটায় অন্ত্যোদয় শ্রেণীর! 
অন্ত্যে উদয় কি আদি সে বিচারের ভার
আগত দিনমণির,যার এক হস্তে কমণ্ডলু ,
অপরাপর হস্তে চক্র,মুদগর, অশান্ত অশনি
ও বরাভয় ! বিষয়ের বিভীষিকা 
যার কলমের কালি --সে মহাজন 
নিন্দুকের গালি, তালি দিয়ে উড়িয়ে দেয়
দিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী লোভাতুর রাত্রির 
পরাকাষ্ঠা থেকে। 

শূন্য আরণ্যক জীবন 
পূর্ণতার কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে
লাল, নীল , সবুজের মুক্ত আবাসনে।
পিছুটান ক্ষণিকের অতিথি হিসেবে
হৃদয় তরঙ্গে ছোট্ট একটি ঢিল ছুঁড়ে মারে।
সমুদ্র তট-সদৃশ্য দৃশ্যমান মরণ আর্তনাদ
চির প্রস্থানের বেদি মূলে আছড়ে পড়ে।
ভবিতব্য হয়তো তাই, রাত্রির অনন্ত সলিলে
শোক মালার বিদায় লগ্নে নব রূপে 
আবির্ভূত নিত্য নতুন বেশে নবীন সূর্য।

বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে -- বিজয়া মিশ্র

 বধ্যভূমির ত্রাতা হয়ে
 বিজয়া মিশ্র
 ২৩.০১.২০২৪


জলন্ত আগ্নেয়গিরির মতোই 
একদা আছড়ে পড়েছিলে তুমি নেতাজী সুভাষ
ঘুমন্ত পরপদানত জাতির শিয়রে,
অচিরেই শব্দে বাক্যে উচ্চারণে 
আর সাংগঠনিক দক্ষতায়
তোমায় ঘিরে নির্মিত হয়েছিল
আকাশচুম্বী প্রত্যাশা।
দুর্বলতার ক্ষয়রোগ নিমেষে বিলীন হয়ে
দুর্ভেদী মানববন্ধন গড়ে উঠেছিল প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞায়
পরপদলেহনের অসুখ ভুলে।
তুমি প্রমাণ করেছিলে ন্যায়ের শক্তি কী দুর্ণিবার...
তাইতো আসমুদ্র হিমাচল নয় শুধু
বিদেশের মাটিতেও সাগ্ৰহে অভিনন্দিত হলে অচিরেই।
তাইতো তোমার সাম্যের ইঙ্গিতেই সংগ্ৰামী ঐক্য
কী নিপুণ শৃঙ্খলায় সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উন্মুখ হয়েছিল! 
সে প্রত্যয়ের কেবল জন্মদিন থাকে
কেবল অপেক্ষা থাকে শতবার পুনর্বার প্রতিপলে...
একটি সে নাম অনিবার্য হয়ে ওঠে
দুর্বহ সমাজ নামক জগদ্দলটা
আবার নবসজ্জার গড়ার প্রয়োজনে।
আশাহীন আলোকস্পর্শহীন আদিমতার দুচোখে
প্রজ্ঞাগ্নি প্রজ্জলনের প্রয়োজনে
নামের মন্ত্রোচ্চারণে শুদ্ধ হোক নিস্পন্দ এ বধ্যভূমি

স্মরণে ফেব্রুয়ারি -- শান্তি পদ মাহান্তি

  স্মরণে ফেব্রুয়ারি
  শান্তি পদ মাহান্তী
   ০১/০২/২০২৪


ভুলতে নারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভারি শক্ত,
কষ্ট ভারি ফেব্রুয়ারি
ভোলা ভায়ের রক্ত।

তোমার টানে অশ্রু আনে
জাগে ব‍্যথার স্মৃতি,
অনুরাগে সাহস জাগে
ভয়ে পালায় ভীতি।

হৃদয় ভাঙা রক্ত রাঙা
ফেব্রুয়ারি তুমি,
তোমার কথা অমর গাথা
রইবে আবেগ চুমি।

আজ স্মরণে বীর বরণে
আবেগ তুমি ঢালো,
একুশ ভোরে মনের দ্বোরে
চেতন শিখা জ্বালো।

তুমি এলে পাঁপড়ি মেলে
মনের কুসুম কলি,
বুকের তলে জোনাক জ্বলে
আলোর দীপাবলি।

আমরা পারি ফেব্রুয়ারি
বুলেট নিতে বুকে,
আঘাত এলে রক্ত ঢেলে
শত্রুকে দি রুখে।

অশ্রু মায়ের রক্ত ভায়ের
শ‍্যামল মাটি সিক্ত,
বাংলা জাগে সগৌরবে
স্বমহিমায় দীপ্ত।